ঢাকা ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খড়কাটার মেশিনে টুকরো টুকরো হলো রেজাউলের ২৫ হাজার টাকা

আজিজুল হক সরকার,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:২৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

খড়কাটা মেশিনে অসাবধানতায় পকেট থেকে পড়ে ২৫ হাজার টাকা খড়ের সাথে কেটে টুকরো টুকরো হলো। দরিদ্র বাবার শোকাহত পরিবারের মর্মান্তিক এই বার্তাটি একমাত্র মেয়ে ‘আরেফিন তানহা’ জানালেন তার কলেজ বান্ধবীদের।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী গ্রামের মৃত কায়সার আলীর ছেলে মো. রেজাউল করিমের (৪৮) ব্যবসায়িক খড়কাটা মেশিনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গ্রামের আম্বিয়ার মোড় বাজারে।

602-0-0#

সরেজমিনে জানা যায়, ঘটনার দিন রেজাউল করিম গ্রামের অদূরেই আম্বিয়ার মোড় বাজারে খড় কাটা মেশিনে ছানি কাটার ব্যবসা করেন। প্রতিদিনের মতো সেদিন বিকেলে ঘুম থেকে তদ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ব্যবসায়িক খড় কাটা মেশিনে খড় কাটাতে ডাক আসে পাশের দামোদর পুর গ্রামের মমিনুল ইসলামের। যথারীতি মেশিন চালু করতে যান। তার খড় (বিচালি) কাটা মেশিন চালু করে ছানি বস্তায় ভরাচ্ছিলেন মমিনুল ইসলাম। রেজাউল মেশিনের হলারে খড় ঢুকাচ্ছিলেন।নিচু হয়ে খড় নেয়ার সময় পকেট থেকে মোবাইল খড়ের উপরে পড়ে যায়। সাথে সাথে মোবাইলটি তুলেও নেয়। কিন্তু পকেটে থাকা ধান বিক্রির ( ৫০০ টাকা নোটের বান্ডিল) ২৫ হাজার টাকা পকেটে না থাকার কথা মনে হয় কিছুপর। তাৎক্ষণিকভাবে খোঁজা খুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে মেশিন থেকে ছানি বস্তায় ভরানো মমিনুল ইসলাম বলতে থাকেন “ভাই, সর্বনাশ হয়ে গেছে! বস্তার ভেতরে ছানির সাথে টাকার টুকরোর মতো বের হয়েছে,দেখেন দেখা যাচ্ছে ! দ্রুত মেশিন বন্ধ করে ছানির বস্তার ভেতরে দ্যাখে সর্বনাশ যা হবার তা হয়ে গেছে! মনের ভুলে /অসাবধানতায় পকেট থেকে টাকার বান্ডিল নিচে খড়ের মধ্যে পড়ে য়ায়। পরে খড়সহ টাকা হলারে চলে যাওয়ায় ছানির সাথে টাকাগুলো টুকরো টুকরো হয়ে বের হয়।

ঘটনাটি প্রচার বিমুখ(ঝামেলার ভয়ে) রেজাউল করিম বাইরে কাউকে না জানালেও ছানি কাটতে আসা মমিনুল ইসলাম কয়েকজনকে পরের দিন জানালে তারা অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং রেজাউল করিমকে অনেকে সান্ত¦না দিতে থাকেন।

602-0-0#

পরদিন (সোমবার) কলেজ পড়ুয়া রেজাউল করিমের বড় মেয়ে আরেফিন তানহা ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজে কোচিং করতে এসে বান্ধবী স্বপ্না, রাফিয়া, সুমাইয়াকে জানায়Ñ তার মন খারাপ। কোচিং ছুটি নিতে চান। বান্ধবীরা মন খারাপের কারণ জানতে চাইলে আরেফিন তানহা বাবার টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনাটি বর্ণনা করেন এবং ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যান।কোচিং-এর ইংরেজির সহকারী অধ্যা.খায়রুল আনাম ‘দৈনিক সমকাল’কে বিষয়টি জানান।

এ বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘ সময় ঢাকায় ব্যবসা করে করোনাকালীন সময়ে নিঃস্ব হয়ে গ্রামে ফিরে এসে গত তিন বছর আগে ছানি কাটা মেশিন দেন। এই মেশিনের রোজগার দিয়েই কোনমতে সংসার চলে। সেদিন বিকেল বেলা একটু ঘুমের পর তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় মমিনুল নামে একজন ছানি কাটতে আসে। আমার কাছে শার্টের পকেটে ছিল সকালে ধান বিক্রির ৫শ’ টাকা নোটের ২৪ হাজার ৫০০ টাকার বান্ডিল। আরেকটি ৫০০ টাকার নোটের একজনকে দেই ২০০ টাকা। বাকি ৩০০ টাকাও পকেটে ছিল। কিন্তু ৩০০ টাকা ছাড়া সাড়ে ২৪ হাজার টাকার বান্ডেলটি নিচে খড়ের মধ্যে পড়ে যায়। বাটন মোবাইলটিও পড়ে গিয়েছিল। সেটি তুলেছি কিন্তু টাকাও যে পড়ে গেছে সে কথা একটুও মনে ছিল না/বুঝতে পারিনি। পরেতো যে ছানি বস্তায় ভরাচ্ছিল,সে জানালো টাকা খড়ের সাথে মেশিনে গিয়ে ছানি হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে দেখেন ! তখন তো প্রচন্ড ভাবে আশাহত হয়ে পড়ি! বড় মেয়ে কলেজে পড়ে,ছেলেদুটো স্কুলে যায়। সেই টাকা দিয়ে আমার জমি বন্ধক নেয়ার কথা ছিল…(বলতে বলতে চোখে জল এসে যায়)!

প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম এবং কলেজ শিক্ষক মাহফুজুর রহমান ডলার জানান, বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক! বেচারা ঢাকায় ছিল। করোনার সময় বাড়ি এসে কী করবে,একটা খড় কাটা মেশিন দিয়ে কোনোরকমে জমি জমা আবাদ করে সংসার চালায়।ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ যোগায়। কিন্তু সেদিনের ২৫ হাজার টাকা টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার দুর্ঘটনাটা লোকটাকে সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে ! জানিনা, এই ঘা তাকে কতদিন ভোগাবে?

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

খড়কাটার মেশিনে টুকরো টুকরো হলো রেজাউলের ২৫ হাজার টাকা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:২৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

খড়কাটা মেশিনে অসাবধানতায় পকেট থেকে পড়ে ২৫ হাজার টাকা খড়ের সাথে কেটে টুকরো টুকরো হলো। দরিদ্র বাবার শোকাহত পরিবারের মর্মান্তিক এই বার্তাটি একমাত্র মেয়ে ‘আরেফিন তানহা’ জানালেন তার কলেজ বান্ধবীদের।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী গ্রামের মৃত কায়সার আলীর ছেলে মো. রেজাউল করিমের (৪৮) ব্যবসায়িক খড়কাটা মেশিনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গ্রামের আম্বিয়ার মোড় বাজারে।

602-0-0#

সরেজমিনে জানা যায়, ঘটনার দিন রেজাউল করিম গ্রামের অদূরেই আম্বিয়ার মোড় বাজারে খড় কাটা মেশিনে ছানি কাটার ব্যবসা করেন। প্রতিদিনের মতো সেদিন বিকেলে ঘুম থেকে তদ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ব্যবসায়িক খড় কাটা মেশিনে খড় কাটাতে ডাক আসে পাশের দামোদর পুর গ্রামের মমিনুল ইসলামের। যথারীতি মেশিন চালু করতে যান। তার খড় (বিচালি) কাটা মেশিন চালু করে ছানি বস্তায় ভরাচ্ছিলেন মমিনুল ইসলাম। রেজাউল মেশিনের হলারে খড় ঢুকাচ্ছিলেন।নিচু হয়ে খড় নেয়ার সময় পকেট থেকে মোবাইল খড়ের উপরে পড়ে যায়। সাথে সাথে মোবাইলটি তুলেও নেয়। কিন্তু পকেটে থাকা ধান বিক্রির ( ৫০০ টাকা নোটের বান্ডিল) ২৫ হাজার টাকা পকেটে না থাকার কথা মনে হয় কিছুপর। তাৎক্ষণিকভাবে খোঁজা খুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে মেশিন থেকে ছানি বস্তায় ভরানো মমিনুল ইসলাম বলতে থাকেন “ভাই, সর্বনাশ হয়ে গেছে! বস্তার ভেতরে ছানির সাথে টাকার টুকরোর মতো বের হয়েছে,দেখেন দেখা যাচ্ছে ! দ্রুত মেশিন বন্ধ করে ছানির বস্তার ভেতরে দ্যাখে সর্বনাশ যা হবার তা হয়ে গেছে! মনের ভুলে /অসাবধানতায় পকেট থেকে টাকার বান্ডিল নিচে খড়ের মধ্যে পড়ে য়ায়। পরে খড়সহ টাকা হলারে চলে যাওয়ায় ছানির সাথে টাকাগুলো টুকরো টুকরো হয়ে বের হয়।

ঘটনাটি প্রচার বিমুখ(ঝামেলার ভয়ে) রেজাউল করিম বাইরে কাউকে না জানালেও ছানি কাটতে আসা মমিনুল ইসলাম কয়েকজনকে পরের দিন জানালে তারা অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং রেজাউল করিমকে অনেকে সান্ত¦না দিতে থাকেন।

602-0-0#

পরদিন (সোমবার) কলেজ পড়ুয়া রেজাউল করিমের বড় মেয়ে আরেফিন তানহা ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজে কোচিং করতে এসে বান্ধবী স্বপ্না, রাফিয়া, সুমাইয়াকে জানায়Ñ তার মন খারাপ। কোচিং ছুটি নিতে চান। বান্ধবীরা মন খারাপের কারণ জানতে চাইলে আরেফিন তানহা বাবার টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনাটি বর্ণনা করেন এবং ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যান।কোচিং-এর ইংরেজির সহকারী অধ্যা.খায়রুল আনাম ‘দৈনিক সমকাল’কে বিষয়টি জানান।

এ বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘ সময় ঢাকায় ব্যবসা করে করোনাকালীন সময়ে নিঃস্ব হয়ে গ্রামে ফিরে এসে গত তিন বছর আগে ছানি কাটা মেশিন দেন। এই মেশিনের রোজগার দিয়েই কোনমতে সংসার চলে। সেদিন বিকেল বেলা একটু ঘুমের পর তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় মমিনুল নামে একজন ছানি কাটতে আসে। আমার কাছে শার্টের পকেটে ছিল সকালে ধান বিক্রির ৫শ’ টাকা নোটের ২৪ হাজার ৫০০ টাকার বান্ডিল। আরেকটি ৫০০ টাকার নোটের একজনকে দেই ২০০ টাকা। বাকি ৩০০ টাকাও পকেটে ছিল। কিন্তু ৩০০ টাকা ছাড়া সাড়ে ২৪ হাজার টাকার বান্ডেলটি নিচে খড়ের মধ্যে পড়ে যায়। বাটন মোবাইলটিও পড়ে গিয়েছিল। সেটি তুলেছি কিন্তু টাকাও যে পড়ে গেছে সে কথা একটুও মনে ছিল না/বুঝতে পারিনি। পরেতো যে ছানি বস্তায় ভরাচ্ছিল,সে জানালো টাকা খড়ের সাথে মেশিনে গিয়ে ছানি হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে দেখেন ! তখন তো প্রচন্ড ভাবে আশাহত হয়ে পড়ি! বড় মেয়ে কলেজে পড়ে,ছেলেদুটো স্কুলে যায়। সেই টাকা দিয়ে আমার জমি বন্ধক নেয়ার কথা ছিল…(বলতে বলতে চোখে জল এসে যায়)!

প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম এবং কলেজ শিক্ষক মাহফুজুর রহমান ডলার জানান, বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক! বেচারা ঢাকায় ছিল। করোনার সময় বাড়ি এসে কী করবে,একটা খড় কাটা মেশিন দিয়ে কোনোরকমে জমি জমা আবাদ করে সংসার চালায়।ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ যোগায়। কিন্তু সেদিনের ২৫ হাজার টাকা টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার দুর্ঘটনাটা লোকটাকে সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে ! জানিনা, এই ঘা তাকে কতদিন ভোগাবে?