অরক্ষিত রেলক্রসিং, বাড়ছে দুর্ঘটনা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৫৯:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫ ৩১ বার পড়া হয়েছে
ফরিদপুরের বেশিরভাগ রেলক্রসিং অরক্ষিত। এর ফলে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনা। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি ফরিদপুর সদর উপজেলায় রেলক্রসিংয়ে এক দুর্ঘটনায় ৫ জন প্রাণ হারায়। এছাড়া বিগত ১ বছরে কমপক্ষে ৩০-৪০ জন রেলে কাটা পড়ে নিহত হন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরে মোট ৯০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। প্রতিদিন ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, বেনাপোল, টুঙ্গিপাড়াসহ নিয়মিত চলাচল করছে বেশ কয়েকটি ট্রেন। এসব রেলপথের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ১৫টি স্টেশন। বৈধ-অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা মোট ২৭টি। এরমধ্যে মাত্র পাঁচটি রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকলেও ২২টি রেলক্রসিং অরক্ষিত। এছাড়া বেশ কয়েকটি রেলক্রসিং সম্পূর্ণ অরক্ষিত। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা।
জানা যায়, গত বছর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জনের মতো। এরমধ্যে সবশেষ ৭ জানুয়ারি সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের কাফুরা রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী। এছাড়া মুন্সীবাজারের পাশে বিলমামুদপুর মন্ডলের মোড় এলাকায় ও রেলক্রসিং অরক্ষিত রয়েছে।
বোয়ালমারী উপজেলার বনমালীপুর-নড়াইল, আমগ্রাম, সোতাসী এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে অন্তত সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, জেলার ওপর দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা-ঢাকা ও বেনাপোল-ঢাকা ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, পোড়াদহ, রাজশাহী, খুলনা, টুঙ্গীপাড়া, ভাটিয়াপাড়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গা, গোয়ালন্দ ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায় ট্রেনে। ট্রেনে যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এসব রুটে যাত্রীদের সংখ্যা। কিন্তু সে তুলনায় এখনো রেলরুটে রয়ে গেছে অরক্ষিত রেলক্রসিং। যার কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সদর উপজেলার গেরদার কাফুরা এলাকার মাহফুজ বিপ্লব, হারুন মোল্লা ও জয়নাল জানান, এখানের ( বাখুন্ডা – কাফুরা)রেলক্রসিংটি অরক্ষিত। কোনো গেট নেই। দোকানের কারণে হুইসেল না দিলে ট্রেন আসছে কি না বোঝা যায় না। বেশিরভাগ সময়ই চালক কোনো হুইসেল দেন না। এ সমস্ত অব্যবস্থাপনা এসব প্রাণহানির কারণ।
ভাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান ও জোসনা বেগম জানান, গত এক বছরে ভাঙ্গা এলাকায় রেললাইন ও রেলক্রসিংয়ে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় অন্তত ১০-১৫ জন নিহত হয়েছেন। ফরিদপুরের বিভিন্নস্থানে রেললাইনে কোনো গেটম্যান বা বেরিয়ার নেই, সম্পূর্ণই অরক্ষিত। ফলে এসব স্থানে বেরিয়ার বা গেটম্যান জরুরি।
বোয়ালমারী উপজেলার ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ মামুন, রফিক আহমেদ ও শ জানান, বোয়ালমারী রেলস্টেশনের দুই পাশে অন্তত চারটি অরক্ষিত রেলক্রসিং রয়েছে। যা ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে বেরিয়ার বা গেটম্যান নিয়োগ করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী, যানবাহনের চালকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান জানান, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করে এবং মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন কারণে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। তবে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে গত এক বছরে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
রেলওয়ের রাজবাড়ীর সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধে কাজ করছেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল হাসান মোল্যা জানান, রেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দরকার। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো, যাতে করে পরবর্তীতে আর এমন কোন দুর্ঘটনা না ঘটে।