অগ্নিকান্ড কবলিত ভবনে ফায়ার এক্সিট না থাকায় হতাশ প্রধানমন্ত্রী
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৩৭:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ মার্চ ২০২৪ ১৫০ বার পড়া হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী বীমার দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে সচেতন হবার পরামর্শ দিয়ে কোন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ঘন ঘন আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে একটি ভয়াবহ চিত্র দেখতে পান বলে জানান। যেখানে প্রায় একটি পরিত্যক্ত জায়গায় কিছু মালপত্র, বর্জ্য রেখে ঐ কোম্পানির এক শ্রমিককে ২০ হাজার টাকা দিয়ে সেখানে আগুন লাগিয়ে ৪০ কোটি টাকা বীমা দাবি করা হয়েছিল। এই ক্ষেত্রে অনেক সময় বীমা কোম্পানির লোকজন যারা তদন্তে যান তাদেরকেও ম্যানেজ করার অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি যথাযথ তদন্তপূর্বক অর্থ ছাড় করারও পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা বীমার সাথে জড়িত অবশ্যই তারা এই বিষয়টাতে গুরুত্ব দিবেন। আর এই ধরনের ঘটনা যেন কেউ আর ঘটাতে না পারে।’
’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বাংলাদেশ বিশ্বে যে মর্যাদা পেয়েছিল এবং ’৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যা হারিয়ে গিয়েছিল তাঁর সরকার আবার তা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর টানা তিন মেয়াদে দেশ পরিচালনার পর চতুর্থ মেয়াদেও নির্বাচিত হওয়ায় দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় আজকে উন্নয়নের ছোঁয়া সাধারণ মানুষের কাছে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি।
সরকার প্রধান বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বছর বছর দেশের কিছু অঞ্চলে যে মঙ্গা বা দুর্ভিক্ষ হতো সেটা আর নেই এবং মানুষের জীবন মানও অনেক উন্নত হয়েছে।
’৯৬ সালে প্রথমবার সরকারে আসার পরেই বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে তা তিনি উন্মুক্ত করে দেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার চায় দেশ আরও এগিয়ে যাক।
তিনি বলেন, এই জন্য আমরা ব্যাংক, বীমা, বিদ্যুতসহ সমস্ত কিছুই বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সেক্ষেত্রেও আমি মনে করি ইন্সুরেন্স করার ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে আরো সচেতনতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী। সে বিষয়ে আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন, সেটাই আমি কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার হলেও দুর্ঘটনা, দুর্বিপাক যে কোন সময় ঘটতে পারে। তাছাড়া আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। সেক্ষেত্রে মানুষকে একটু সঞ্চয়মুখী করা, মানুষকে আরো উদ্বুদ্ধ করা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া জরুরী। আর সেইক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স কিন্তু মানুষকে নিরাপদ জীবন দিতে পারে। কোন দুর্ঘটনা বা অসুখ-বিসুখ হলে এই বিষয়ে ইন্সুরেন্স করা থাকলে পরে মানুষ অন্তত নিশ্চিত থাকতে পারে বীমার টাকা পাওয়ার। সে বিষয় সম্পর্কে মানুষকে আরো জানানো দরকার।
সরকার প্রধান বলেন, মানুষ যাতে বীমার টাকা গ্রহণ করতে পারে সেই দিকে বীমা সংশ্লিষ্টদেরও নজর দিতে হবে। বীমা সহজীকরণের লক্ষ্যে আজ যে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ চালু করা হলো এইজন্য সংশ্লিস্টদের তিনি ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় একের পর এক যখন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করেছিল তখন অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা (উন্নয়ন সহযোগী) প্রশ্ন তুলেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি এত ছোট এতগুলো ব্যাংক দিয়ে কী হবে? ‘আমার উত্তর ছিল আমাদের অর্থনীতি এত ছোট থাকবে না, অবশ্যই বড় হবে। সেই বড়তো আমরা করতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের ব্যাংকগুলো উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত শাখা খুলতে যাচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো কাজ করছে। সেই সাথে এই বীমাগুলো যখন যুক্ত হবে এবং বীমার প্রিমিয়াম দেওয়া শুরু করে সবকিছু ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে, অনলাইনে যখন সম্পন্ন করা যাবে, তখন কিন্তু মানুষের আর ঐ দ্বিধা থাকবে না। ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিমিয়াম জমা হবে। এইজন্য আলাদা করে জমা ও দিতে হবে না তামাদীও হবে না। কাজেই তাতে ইন্সুরেন্সেরও লাভ হবে ব্যাংকেরও সুবিধা হবে। ব্যাংকের কার্যক্রমও বাড়বে।
বীমা খাতের উন্নয়নে ‘অ্যাকচুয়ারি’ সৃষ্টিতে বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, বীমা খাতে ‘ইউনিফায়েড ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম’ বাস্তবায়নসহ এই খাতের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বীমা খাতে পেশাদারিত্ব ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিনটিতে শুরুতেই তিনি বাঙালির অবিসংবাদিক নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন এবং জাতীয় চারনেতাসহ ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই মাসেই (১৭ মার্চ) জাতির পিতা জন্ম গ্রহণ করেছেন। তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। যা আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামান্য দলিলে মানুষকে উজ্জীবিতকারি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।