মাকে ছুঁতে পারলেন না প্রিয়ঙ্কা!
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৬:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৮ বার পড়া হয়েছে
জীবনে প্রথম ভোটের লড়াইয়ে নেমে দাদা রাহুল গান্ধীর রেকর্ড ভেঙে দিলেন বোন প্রিয়ঙ্কা। কেরলের ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রে ৪ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারালেন প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআই প্রার্থীকে। পেলেন প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট। মাত্র ৬ মাস আগে ওই আসনে তার দাদা রাহুল ওয়েনাড়ে জিতেছিলেন ৩ লাখ ৬৪ হাজার ভোটে। তার ঝুলিতে গিয়েছিল প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট। কিন্তু লোকসভার বিরোধী দলনেতা হওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলী ধরে রেখে ওয়েনাড়ের সাংসদ পদে ইস্তফা দেন তিনি। তাই সেখানে উপনির্বাচন হয়।
উপনির্বাচনে জয়ের ব্যবধানের নিরিখে শনিবার (২৩ নভেম্বর) বাবা রাজীব গান্ধী এবং ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীকেও ‘হারিয়েছেন’ প্রিয়ঙ্কা। তবে সামান্য ব্যবধানে ‘হেরেছেন’ মা সনিয়ার কাছে। ১৯৭৭ সালের লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে কংগ্রেসের ভরাডুবির সময়ে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলীতে জনতা দলের প্রার্থী রাজনারায়ণের কাছে হেরে গিয়েছিলেন ইন্দিরা। সে সময় তাকে সাংসদ হওয়ার সুযোগ করে দিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন কর্নাটকের চিকমাগালুরের তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ ডিবি চন্দ্রেগৌড়া ।
১৯৭৮ সালের উপনির্বাচনে চিকমাগালুরে জনতা পার্টির পার্থী বীরেন্দ্র পাটিলকে প্রায় সাড়ে ৭৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন ইন্দিরা। প্রিয়ঙ্কার জয়ের ব্যবধান তার চেয়ে বহু গুণ বেশি।
বিমান দুর্ঘটনার ছোট ছেলে সঞ্জয়ের মৃত্যুর পরে ইন্দিরা রাজনীতিতে এনেছিলেন প্রিয়ঙ্কার বাবা রাজীবকে। সঞ্জয়ের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া অমেঠী লোকসভায় লোকদলের প্রার্থী শরদ যাদবকে প্রায় ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ভোটে রাজীব হারিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, সোনিয়া ২০০৬ সালে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলী লোকসভার উপনির্বাচনে জিতেছিলেন ৪ লাখ ১৭ হাজার ভোটে। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে ওই কেন্দ্রে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু ‘লাভজনক পদ’ বিতর্কের জেরে ইস্তফা দিয়ে আবার উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অর্থাৎ, উপনির্বাচনী জয়ের ব্যবধানের নিরিখে সনিয়ার কাছে মাত্র ৭০০০ ভোটে ‘হেরেছেন’ প্রিয়ঙ্কা।
প্রিয়ঙ্কাই প্রথম গান্ধী-নেহরু পরিবারের কোনও রাজনীতিক, যিনি শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারত থেকে জীবনে প্রথম বার লোকসভা ভোটে লড়লেন। রাহুল এবং তার ঠাকুমা দক্ষিণ ভারত থেকে লোকসভা ভোটে লড়ে জিতলেও জীবনের প্রথম নির্বাচনটি উত্তরপ্রদেশ থেকে লড়েছিলেন।
ইন্দিরা ১৯৭৮ সালে চিকমাগালুর এবং ১৯৮০ সালে অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের মেডক থেকে ভোটে জেতেন। সনিয়া ১৯৯৯ সালে প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনে লড়তে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলীর পাশাপাশি কর্নাটকের বল্লারীকেও বেছে নিয়েছিলেন।
২০০৪ সালের লোকসভা ভোট থেকে নিয়মিত সনিয়া-রাহুলের প্রচারে অংশ নিলেও প্রিয়ঙ্কা আনুষ্ঠানিক ভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। এ বার ওয়েনাড় এবং রায়বরেলী, দু’টি কেন্দ্রেই দাদা রাহুলের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
২০০৯ সালের আসন পুনর্বিন্যাসের সৃষ্ট কেরলের ওয়েনাড় লোকসভায় কখনও হারেনি কংগ্রেস। সেই ধারাবাহিকতা যে প্রিয়ঙ্কা বজায় রাখবেন, সে বিষয়ে কেরলের শাসক বামশিবিরও নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বিরোধী দলের প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে জয়ের ব্যবধানে চমক দিয়েছেন তিনি।
শনিবার ভোটগণনার পরে প্রিয়ঙ্কার স্বামী রবার্ট তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘অভিনন্দন পি…। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সব সময় তোমার পাশে থেকেছি। আজ তোমার সেরা দিন।’’