চান্দিনায় দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে

- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৫৯:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। এক সময়ের খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ও নদী-নালায় প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত, যা এখন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
চান্দিনাসহ কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ যেমন—চ্যাপিলা, বৈচা, চাটুয়া, নাপতানি, চাঁদা, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিত পুঁটি, বাইলা, মেনি, ভেদা, শিং, কৈ, টাকি, তেলা টাকি, ফলি, চেলি, মলা, ঢেলা, কানপোনা, দারকিনা, বাচা, বাটা, রিটা, পিয়ালি, জয়া, খৈলশা, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, কাজলি ইত্যাদি মাছ এখন আর তেমন দেখা যায় না। এক সময় এসব মাছ স্থানীয় বাজারে সহজলভ্য ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা প্রায় বিলুপ্তির পথে ।
দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পেছনে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণ রয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে জলাভূমি ও প্লাবনভূমির সঙ্গে সংযোগ খাল ভরাট, জলাশয়ে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা এবং প্রজনন মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজননক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার, মাছের আবাসস্থল ধ্বংস এবং ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ সরঞ্জামের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ।
দেশীয় মাছ সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি: জলাশয় সংরক্ষণ: প্রাকৃতিক জলাশয় ও খাল-বিল পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ করতে হবে। প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষি জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। জেলে সম্প্রদায়ের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে পারেন। মৎস্যচাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং দেশীয় মাছের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
চান্দিনার কলেজ শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এক সময় নিচু জমি ও খাল-বিলে প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত, যা এখন আর দেখা যায় না। প্রখ্যাত মাছ চাষী আবুল বাশার জানান, চাহিদা থাকলেও হাটবাজারে ছোট প্রজাতির মাছের সরবরাহ অনেক হ্রাস পেয়েছে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দেশীয় মাছের স্বাদ সংরক্ষণ করতে পারি।