স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নির্মম পতন
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০২:২০:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতা নিয়েই দেশ ধ্বংসের পরিকল্পনা করেন। ক্ষমতায় এসেই ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে সুকৌশলে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়ে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নেতৃত্ব দেন। দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেন। হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করেন।
স্বস্তির খবর হচ্ছে বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক স্বৈরাশাসনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। ষ্বৈরাচার শেষ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সোমবার (০৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন মূল বিষয় হলো দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা জানিয়েছেন। এ সরকার গঠনের আগে তার উচিত হবে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রনেতা যারা ষ্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পতনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন তাদের সাথে আলোচনা করা।
যদিও সেনাপ্রথান সকল হত্যার বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু কথা হচ্ছে এসব হত্যার বিচার হবে কোন আইনে। কেননা আওয়ামীল লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও বিপদগামী কিছু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের উপর গণহত্যা চালিয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষকে হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে রোববার (০৪ আগস্ট) আমি ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি) ও এডভোকেট খায়রুল বাশার মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট দায়ের করি। সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম শুরু হলেই রিটটি শুনানীর জন্য কার্যতালিকায় আনতে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নজরে আনা হবে।
অন্তবর্তীকালীন সরকারে যারা থাকবেন তাদের উচিত হবে অতি দ্রুত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি নির্বাচন দেয়া। এখানে সমস্যা হচ্ছে বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনা দেশর সবকটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছেন। খাঁটি দলীয় ও চাটুকারদের বসিয়েছেন পদে পদে।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ লোকজনকে দায়িত্ব দেয়া। দেশে হানাহানি বন্ধ করতে ভূমিকা রাখা যদিও এ কাজটি অত্যন্ত কঠিন। কেননা গত ১৫ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগের লোকজন মানুষকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। তারপরও ভূমিকা রাখতে হবে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। অপরাধীদের বিচার করতেই হবে। এটা সত্য যে, মানুষ আওয়ামী লীগ ও তার পেটুয়া বাহিনীর নির্যাতন কোনদিনই ভুলবেনা । দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে দেশে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে। যা বর্তমানে হচ্ছে আফ্রিকার দেশগুলোতে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর উচিত হবে বাংলাদেশর দুঃসময়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকা। কেননা বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে।
এটা সত্য যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে সব চেষ্টাই করেছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরাজয়ের আগে যেভাবে গণহত্যা করেছিলেন শেখ হাসিনা ও তার সহযেোগিরাও একইভাবে গণহত্যা চালিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর অনুযায়ী কয়েক হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন শেখ হাসিনা ও তার সহযোগিরা। রোম চুক্তির ৫ অনুচ্ছদ অনুযায়ী এটা নিঃসন্দেহে গণহত্যা। বাংলাদেশ রোম চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ১৯৯১ সালের সেপ্টম্বরে। এখন মূল কথা হচ্ছে হাজার হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতার হত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার কোন আইনে হবে ? তার বিচার কি আন্তর্জাতিক
অপরাধ আদালতে (আইসিসি) নাকি দেশের প্রচলিত আইনে হবে ? যদিও শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শেখ হাসিনা যে দেশেই আশ্রয় নিক না কেন ওই দেশের উচিত হবে শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চত করতে সহায়তা করা। হাজার হাজার মানুষের খুনীেকে আশ্রয় দিয়ে নিশ্চয় কোন দেশ ২০ কোটি বাংলাদেশীর ঘৃণার পাত্র হবেনা। শেষ কথা হলো অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হবে হাজার হাজার মানুষের খুনী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার নিশ্চিত করা। তবেই মানুষের ক্ষোভ কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিচার দ্রুত নিশ্চিত করা না হলে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ কমবেনা। তারা আবার রাস্তায় নামবে। বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদী। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছে এ দেশের সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশে সবসময় ছাত্ররা এগিয়ে এসেছে। সেই ১৯৫২ সাল থেকে শুরু। এরপর ১৯৬৯ এর গণ অভু্যত্থান। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। কোন আন্দোলনেই ছাত্ররা পরাজিত হয়নি। সর্বশেষ ২০২৪ সালেও ছাত্ররা দেখিয়ে দিলো স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে। হাসিনার পতন নিঃসন্দেহে মানুষের কাছে স্বস্তির। এথন নতুন সরকারের উচিত হবে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রপ্তারি পরোয়ানা জারি করা। শেখ হাসিনাকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা। এছাড়া দেশে শান্তি ফিরে আসবে না। আন্তর্জাতিক আইন ও ইতিহাসের একজন গবেষক হিসেবে বলতে পারি শেখ হাসিনা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয় নিকৃষ্ট স্বৈরাচার। শেখ হাসিনা লেডী হিটলার। লাখ লাখ মানুষের খুনী। গণতন্ত্র ধ্বংসকারী। যুগে যুগে স্বৈরাচারের জন্ম হয়েছে। তাদের পরাজয়টাও হয়েছে নির্মমভাবে। ২০২৪ সালে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন অত্যান্ত নির্মমভাবেই হয়েছে। তার পাশের লোকজন আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ষ্বৈরাচারদের পতন এভাবেই হয। তার সর্বশেষ প্রমাণ শেখ হাসিনা। তারপরও ষ্বৈরাচার যুগে যুগে দেশে দেশে জন্মায়। বিশ্বের ইতিহাসে শেখ হাসিনাই প্রথম নারী স্বৈরাচার। তার পতনটা হয়েছে অত্যন্ত নির্মমভাবে।
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক আইনের গবেষক।