রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
নিজেই ক্যান্সারে আক্রান্ত ‘কোবাল মেশিন’টি, মৃত্যুর সাথে লড়ছে শত শত রোগী

- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৯:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ ৬৪ বার পড়া হয়েছে
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় মরনব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের শরীরে রেডিও থেরাপি দেবার একমাত্র কোবাল মেশিনটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এর ফলে শত শত ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী থেরাপি দিতে পারছে না।
বিশেষ করে সহায় সম্বলহীন আর নিম্নবিত্ত পরিবারের রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বার বার উর্ধতন কতপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। এর ফলে বিনা চিকিৎসায় অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করছে।
মাত্র ৯ মাস আগে বিয়ে হয়েছিলো নীলফামারী জেলার কিশোরীগজ্ঞ উপজেলার গাড়াগ্রাম গ্রামের হতদরিদ্র আশরাফ আলীর মেয়ে রিক্তা বেগমের। বিয়ের কিছুদিন পর গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে তার। এরপর জমি জমা বিক্রি করে ৫বার কেমো থেরাপি দেয়া হয়েছে। রিক্তা বেগমের এখন রেডিও থোরাপি দেয়া দরকার। এ জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছে সে। কিন্তু হাসপাতালের এক মাত্র কোবাল মেশিন বিকল খাকার কারনে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন হয় তাকে ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু সেখানে সরকারী ক্যান্সার হাসপাতালে থেরাপি দিতে ৪ থেকে ৫ মাস অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এক মাসের মধ্যে থেরাপি না দিলে তাকে বাঁচানো যাবেনা বলে চিকিৎসকরদের আশংকা। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তার পক্ষে থেরাপি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
রিক্তা বেগমের মতো পীরগাছার আবেদ আলী , লালমনিরহাটের আফজাল হোসেনসহ অনেকেই রেডিও থেরাপি দিতে না পারায় হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাজ্ঞা লড়ছে। অন্যদিকে প্রতিদিনই রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও থেরাপি দেওয়ার কোন বিকল্প ব্যাবস্থা না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে।
সরজমিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগজ্ঞ উপজেলার বনমালী রাে্এসছেন তাদের ভাগ্নি মনবলার সাথে চিকিৎসার জন্য। ভর্তিও আছেন-কিন্তু কোবাল মেশিন না থাকায় তার থেরাপি দেয়া যাচ্ছে না। সহায় সম্বলহীন বনমালী জানালেন এর আগে তিনি দুবার ঢাকায় গিয়ে দুবার রেডিও থেরাপি দিয়েছেন। এখন আবারো ২ বার থেরাপি দেয়া দরকার কিন্তু হচ্ছে না।
তিনি জানান, তার পক্ষে ঢাকায় গিয়ে কোন ভাবেই চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এমনিতেই জমি জমা বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়েছেন তিনি। এখন আর কোন অবলম্বন নেই। একই কথা জানালেন রংপুরের সরফ আলী দিনাজপুরের সাহাব উদ্দিন সহ অনেকেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভাগের বিভাগীয় অধ্যাপক স্বপন কুমার সাথের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মূলত ১৯৯৭ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোবাল মেশিনটি স্থাপন করা হলেও ৪ বছর ওই ভাবেই পড়ে ছিলো। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে ২০০১ সালে মেশিনটি চালু করা হয়। এরপর ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েও কোন কাজ হয়নি।
তিনি জানান, মেশিনটি ৫ বছর পর পর সোসিং করার কথা থাকলেও সর্বশেষ ২০০৮ সালের পর তা করা হয়নি। ফলে এ মেশিনটি আর সচল করা সম্ভব নয়। ফলে নতুন একটি কোবাল মেশিন জরুরী ভিত্তিতে স্থাপন করা না হলে অনেক রোগী রেডিও থোরাপির অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে।
অপরদিকে, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. আক্কাছ আলী জানান, রংপুর বিভাগে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী আশংকাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী রোগীরা থেরাপি দিতে পারছে না। বেশীরভাগ রোগীদের আর্থিক সঙ্গতি নেই ফলে রংপুরে একটি মেশিন স্থাপন করা গেলে রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব এ জন্য মেীশন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থাপনাও রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য জরুরী ভিত্তিতে নতুন একটি কোবাল মেশিন স্থাপন করে আক্রান্ত রোগীদের বাচাতে পদক্ষেপ নেবে সরকার এমনটাই দাবি রোগী ও তাদের স্বজনদের।