ঢাকা ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অলস পড়ে আছে আইসিইউ, জনবলসংকটে চলছে না

সুজন কুমার মন্ডল, জয়পুরহাট
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০২:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ জনবল সংকটের কারণে গত তিন বছরেও চালু করা যায়নি। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি থাকার পরও দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বানানো আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্রটি অলস পড়ে আছে। এতে জেলার মুমূর্ষু রোগীরা গুরুত্বপূর্ণ সময়ের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের ছুটতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলায়। কখনো চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী মারাও যান। ভুক্তভোগীসহ সেবাপ্রার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চালুর আশা করছেন তারা।

জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালটি ২০০৬ সালে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরে ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে অনুমতি পায়। এখানে জয়পুরহাট জেলাসহ আশপাশের নওগাঁ, দিনাজপুর, গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। হাসপাতালটি বিগত বছরগুলোতে দেশের সেরা হাসপাতালগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

আরও জানা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে হাসপাতালের পুরোনো ভবনের চার তলার একটি কক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্তবিভাগ, জেলা পরিষদ এবং স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। এরপর এটি চালুর জন্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১৬ জন নার্সকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তবে উন্নতমানের সব যন্ত্রপাতি প্রস্তুত থাকলেও তিন বছরেও গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটটি চালু করা হয়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউনিটটি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার জন্য ছয় থেকে সাতজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসক প্রয়োজন। ওয়ার্ডবয় ও আয়া থাকতে হবে অন্তত দশজন। কিন্তু এখানে মাত্র একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসক আছেন। বাকি পদগুলো শূন্য। তাই ইউনিটটি চালুই করা হয়নি। এতে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগীরা বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়ে তাদের পার্শ্ববর্তী বগুড়াসহ অন্য জেলায় যেতে হয়।

জয়পুরহাট সদরের কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা ঝন্টু কুমার মন্ডল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট চালু হওয়ার কথা শুনে আসছি। কিন্তু কী কারণে সেটি চালু হচ্ছে না তা জানি না। ইউনিটটি চালু হলে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীদের অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হতো।’

কালাই উপজেলার কর্মকার এলাকার ললিত কর্মকার বলেন, জয়পুরহাট হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটটি দীর্ঘদিনেও চালু না হওয়ায় আমাদের মতো গরিব মানুষরা রোগীদের নিয়ে খুবই কষ্ট পাচ্ছেন। আমার স্বামী কিডনি রোগী হওয়ায় এ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করার জন্য আসতে হয়। অনেক সময় আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়। তখন আমাদের বাধ্য হয়ে বগুড়ায় যেতে হয়। এ জন্য অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’

জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন, করোনার সময় আইসিইউ ইউনিটের প্রয়োজন উপলব্ধি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করি। যন্ত্রপাতি প্রস্তুত থাকলেও জনবল সংকটের কারণে এই ইউনিটটি চালু করা যায়নি।

সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, আইসিইউ ইউনিটে সব যন্ত্রপাতি প্রস্তুত থাকার পরও শুধুমাত্র চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় এটি চালু হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। জনবল নিয়োগ হলেই এটি চালু হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

অলস পড়ে আছে আইসিইউ, জনবলসংকটে চলছে না

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০২:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ জনবল সংকটের কারণে গত তিন বছরেও চালু করা যায়নি। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি থাকার পরও দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বানানো আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্রটি অলস পড়ে আছে। এতে জেলার মুমূর্ষু রোগীরা গুরুত্বপূর্ণ সময়ের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের ছুটতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলায়। কখনো চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী মারাও যান। ভুক্তভোগীসহ সেবাপ্রার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চালুর আশা করছেন তারা।

জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালটি ২০০৬ সালে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরে ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে অনুমতি পায়। এখানে জয়পুরহাট জেলাসহ আশপাশের নওগাঁ, দিনাজপুর, গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। হাসপাতালটি বিগত বছরগুলোতে দেশের সেরা হাসপাতালগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

আরও জানা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে হাসপাতালের পুরোনো ভবনের চার তলার একটি কক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্তবিভাগ, জেলা পরিষদ এবং স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। এরপর এটি চালুর জন্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১৬ জন নার্সকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তবে উন্নতমানের সব যন্ত্রপাতি প্রস্তুত থাকলেও তিন বছরেও গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটটি চালু করা হয়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউনিটটি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার জন্য ছয় থেকে সাতজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসক প্রয়োজন। ওয়ার্ডবয় ও আয়া থাকতে হবে অন্তত দশজন। কিন্তু এখানে মাত্র একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসক আছেন। বাকি পদগুলো শূন্য। তাই ইউনিটটি চালুই করা হয়নি। এতে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগীরা বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়ে তাদের পার্শ্ববর্তী বগুড়াসহ অন্য জেলায় যেতে হয়।

জয়পুরহাট সদরের কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা ঝন্টু কুমার মন্ডল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট চালু হওয়ার কথা শুনে আসছি। কিন্তু কী কারণে সেটি চালু হচ্ছে না তা জানি না। ইউনিটটি চালু হলে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীদের অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হতো।’

কালাই উপজেলার কর্মকার এলাকার ললিত কর্মকার বলেন, জয়পুরহাট হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটটি দীর্ঘদিনেও চালু না হওয়ায় আমাদের মতো গরিব মানুষরা রোগীদের নিয়ে খুবই কষ্ট পাচ্ছেন। আমার স্বামী কিডনি রোগী হওয়ায় এ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করার জন্য আসতে হয়। অনেক সময় আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়। তখন আমাদের বাধ্য হয়ে বগুড়ায় যেতে হয়। এ জন্য অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’

জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন, করোনার সময় আইসিইউ ইউনিটের প্রয়োজন উপলব্ধি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করি। যন্ত্রপাতি প্রস্তুত থাকলেও জনবল সংকটের কারণে এই ইউনিটটি চালু করা যায়নি।

সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, আইসিইউ ইউনিটে সব যন্ত্রপাতি প্রস্তুত থাকার পরও শুধুমাত্র চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় এটি চালু হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। জনবল নিয়োগ হলেই এটি চালু হবে।