পদ্মপুকুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পদ্ম
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
বিআইডব্লিউটিএর কতিপয় কর্মকর্তার হীনস্বার্থে বরিশাল মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী হিমনীড়ের ঐতিহ্যবাহী পদ্মপুকুর থেকে সব স্বেতপদ্ম স্বমূলে উৎপাটন করে মেরে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী হীমনীড়ের পদ্মপুকুর থেকে ২০১৯ সালেও মাছ ধরার নামে আরেকবার পদ্মফুলের বংশ বিনাশ করা হলেও বছর দুয়েকের মধ্যেই স্বেতপদ্মরা আপন মহিমায় ফিরে এসেছিল।
কিন্তু আকষ্মিকভাবেই গতবছর পদ্মপুকুরের মাঝে কর্মকর্তাদের শ্রান্তি বিনোদনের লক্ষ্যে একটি ঘর নির্মান করাসহ পদ্ম ফুলের বংশ বিনাশ করা হয়েছে। বিনা কারনে নির্মিত এ ঘর নির্মানে বিআইডব্লিটি এর কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ও হয়েছে। তবে কি উদ্দেশ্যে পুকুরটি থেকে পদ্ম ফুলের মূল উৎপাটন করা হয়েছে এখন আর সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
বিষয়টি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর সদ্য বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, কেন পদ্মফুল সমেত গাছগুলো মরে গেল তা আমরা কিছু জানিনা। আমরা অনেক চেষ্টা করেও এসব ফুলের কান্ড ও গোড়া খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা আশা করছি অতীতের মত আবারো পদ্ম ফুল ফিরে আসবে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, বিঅইডব্লিউটিএর কতিপয় অতি উৎসাহী কর্মকর্তার আগ্রহেই ঐতিহ্যবাহী পদ্মপুকুর থেকে স্বেতপদ্মের বংশ পরিকল্পিতভাবে নির্মূল করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর অরিফ আহমেদ মোস্তফা-বিএন’র সাথে আলাপ করে হলে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের অপকর্ম করে থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।
গত কয়েকমাস ধরেই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পদ্মপুকুর দেখতে ছুটে আসা সবাই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন প্রকৃতির এ অপরূপ শোভা দেখতে না পেয়ে। প্রকৃতির এ অপার দান বিনাশ করায় অনেকেই আফসোস করছেন। প্রতিদিন অনেকেই প্রাচীর ঘেরা হীমনীড়-এর গ্রীল-এর বাইরে দাড়িয়ে স্বেতপদ্মর দেখতে না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। তাদের অনেকেই এমন আশা পোষণও করছেন, এবার না হোক আগামী বর্ষায় হিমনীরের পদ্মপুকুর আবার আগের মতই স্বেতপদ্মে ভরে উঠবে। আবার অনেকে এমন মন্তব্যও করছেন যে, ইচ্ছে করলেই প্রকৃতির গলাটিপে তাকে হত্যা করা যায়না। হিমনীড়ের পদ্ম আজ না হয় কাল ফিরবেই।
উল্লেখ্য, বৃটিশ-ভারত যুগে তৎকালীন নৌ ও রেল বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, ‘অইজিএন’ ও ‘আরএসএন কোম্পানী’র পূর্ব বাংলার সদর দপ্তর ছিল বরিশালের এই হিমনীড়ে। সে সময় একতলা চুন-সুরকীর ভবনটির পশ্চিম-দক্ষিণ কোনে নির্মান করা হয় কাঠের পাটাতনের ওপর টালির ঘর। ‘চাড়ার বাংলো’ (চান বাংলো) খ্যাত ঐ দ্বিতল ঘরটি ছিল কোম্পানীর ম্যনেজারের বাস ভবন। আর এ দুটি ভবনের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে খনন করা হয়েছিল একটি পুকুর। পাকিস্তান সৃষ্টির পরে এখানে বসে পাকিস্তান রিভার স্টিমার-পিআরএসের নৌ নির্র্মান কারখানার অফিস ও ম্যানেজারের বাস ভবন। ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথারেটি-ইপিআইডব্লটিএ গঠনের পরে সরকারী নির্দেশে বরিশালের নৌ কারখানা পিআরএস থেকে আইডব্লিউটিএর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ফলে হিমনীড়ের একতলা দালানে ম্যানেজারে বাস ভবন আর কাঠের বাংলোতে স্থাপন করা হয় পরিদর্শন বাংলো।
১৯৬৪ সালে এখানে কর্মরত একজন ব্যবস্থাপকের আপ্রাণ চেষ্টায় হিমনীড় সংলগ্ন পুকুরটিতে সফলভাবে পদ্ম ফুলের আবাদ সম্পন্ন হয়। সে থেকে ২০১৯ এর শেষভাগ পর্যন্ত এ পুকরটি পদ্মফুলে ঢেকে ছিল। কিন্তু আগাছা পরিস্কারের নামে সে সময়ও একবার পুকুরটির পদ্ম ফুলের বংশকে নির্বংশ করার কর্মকান্ড পরিচালনা করে কর্তৃপক্ষের একটি মহল।
একইভাবে গতবছরের শেষভাগে পুনরায় পদ্মপুকুরের মাঝে একটি ঘর নির্মান ও মাছ চাষের নামে স্বেতপদ্মের বংশ বিনাশ করেছেন বিঅইডবিøউটিএরই একটি দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ পুকুরটির মূল চরিত্র পরিবর্তন করে তার মাঝে ঘর নির্মান জরুরী ছিল কিনা সে ব্যপারেও এখন মুখ খুলছেন না কেউ।
তবে এরপরও পরিবেশবাদীসহ বরিশালবাসী আরো একবার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ঐতিহ্যবাহী পদ্মপুকুরে আবারো স্বেতপদ্ম ফিরবে, নাকি বিআইডব্লিটিএর বিবেকহীন কতিপয় কর্তার অসৎ কর্মকান্ডে চির দিনের মত হারিয়ে যাবে পদ্মপুকুরের স্বেতপদ্ম। তা কেবল ভবিষ্যতই বলতে পারবে।