ঢাকা ১০:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্মগোপনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি-মন্ত্রীরা

মো, মশিউর রহমান, টাঙ্গাইল
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৪৫:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৪ ১৩০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরই টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের এমপি, প্রতিমন্ত্রীরা এলাকা ছাড়তে শুরু করেন। বর্তমানে তাদের অবস্থান সম্পর্কে কেউ কোন তথ্য দিতে পারছে না। অনেকেই আত্মরক্ষার্থে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। রয়েছেন আত্মগোপনে।

চলমান পরিস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ও শামছুন্নাহার চাপা, সাবেক এমপি ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ, সাবেক এমপি অনুপম শাজাহান জয়, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে নির্বাচিত আমানুর রহমান খান রানার বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। স্বতন্ত্র এমপি মো. ছানোয়ার হোসেনের বাড়ি ভাঙচুর না করা হলেও তিনিসহ আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি-প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র ও জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপণে চলে গেছেন।

তবে মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের কমান্ডার ইন চিফ ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর বহিষ্কৃত সদস্য এবং সাবেক স্বতন্ত্র এমপি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন করায় তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-জনতা। গত ৪ আগস্ট টাঙ্গাইল শহরে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও গুলিবর্ষণের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে টাঙ্গাইলের পরিবেশ। এরপরই ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) গাড়িতে আগুন ও বাড়িতে ভাঙচুর করে। এরপর আন্দোলনকারীরা টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালত পাড়ার বাসায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

পরে এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের মালিকানাধীন দি টাঙ্গাইল ফিলিং স্টেশন ও ধ্রুব ইন রেস্তোরাতেও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইদিন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল ইসলাম আলমগীরের বাসা ও পৌরসভায় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে আগুন দেওয়া হয় এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফার বাসায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এসব হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর ৪ আগস্ট রাতে সার্কিট হাউসে জেলা আওয়ামী লীগের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক ও সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি খান আহম্মেদ শুভ, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক স্বতন্ত্র এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিনুল রহমান মিরন ও সাইফুজ্জামান সোহেলসহ জেলার নেতারা।

আলোচনা হলেও তাদের মাঠে দেখা যায়নি। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর এমপি ও নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া হয়ে যান। এরপর তারা কে কোথায়, কেউ তাদের হদিস জানে না।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, দলীয় মন্ত্রী-এমপি বা জেলার নেতারা কে কোথায় আছেন তা কেউ জানে না। কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। শুধু জেলার নেতারাই নয়, উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও হামলার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপণে চলে গেছেন।

তবে এখনও তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে যেতে না পেরে দেশেই আত্মগোপণে রয়েছেন। সুবিধামতো সময়ে অনেকে হয়তো বিদেশে পারি জমাতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আত্মগোপনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি-মন্ত্রীরা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৪৫:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৪

আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরই টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের এমপি, প্রতিমন্ত্রীরা এলাকা ছাড়তে শুরু করেন। বর্তমানে তাদের অবস্থান সম্পর্কে কেউ কোন তথ্য দিতে পারছে না। অনেকেই আত্মরক্ষার্থে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। রয়েছেন আত্মগোপনে।

চলমান পরিস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ও শামছুন্নাহার চাপা, সাবেক এমপি ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ, সাবেক এমপি অনুপম শাজাহান জয়, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে নির্বাচিত আমানুর রহমান খান রানার বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। স্বতন্ত্র এমপি মো. ছানোয়ার হোসেনের বাড়ি ভাঙচুর না করা হলেও তিনিসহ আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি-প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র ও জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপণে চলে গেছেন।

তবে মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের কমান্ডার ইন চিফ ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর বহিষ্কৃত সদস্য এবং সাবেক স্বতন্ত্র এমপি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন করায় তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-জনতা। গত ৪ আগস্ট টাঙ্গাইল শহরে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও গুলিবর্ষণের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে টাঙ্গাইলের পরিবেশ। এরপরই ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) গাড়িতে আগুন ও বাড়িতে ভাঙচুর করে। এরপর আন্দোলনকারীরা টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালত পাড়ার বাসায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

পরে এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের মালিকানাধীন দি টাঙ্গাইল ফিলিং স্টেশন ও ধ্রুব ইন রেস্তোরাতেও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইদিন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল ইসলাম আলমগীরের বাসা ও পৌরসভায় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে আগুন দেওয়া হয় এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফার বাসায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এসব হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর ৪ আগস্ট রাতে সার্কিট হাউসে জেলা আওয়ামী লীগের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক ও সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি খান আহম্মেদ শুভ, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক স্বতন্ত্র এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিনুল রহমান মিরন ও সাইফুজ্জামান সোহেলসহ জেলার নেতারা।

আলোচনা হলেও তাদের মাঠে দেখা যায়নি। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর এমপি ও নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া হয়ে যান। এরপর তারা কে কোথায়, কেউ তাদের হদিস জানে না।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, দলীয় মন্ত্রী-এমপি বা জেলার নেতারা কে কোথায় আছেন তা কেউ জানে না। কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। শুধু জেলার নেতারাই নয়, উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও হামলার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপণে চলে গেছেন।

তবে এখনও তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে যেতে না পেরে দেশেই আত্মগোপণে রয়েছেন। সুবিধামতো সময়ে অনেকে হয়তো বিদেশে পারি জমাতে পারেন।