ঢাকা ০২:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিমাগারেই পচে নষ্ট ১৫ হাজার মণ আলু

সুজন কুমার মন্ডল, জয়পুরহাট
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৪৯:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫ ২৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাটের হিমাগারগুলোতে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে আলু। চলতি মৌসুমে দুইটি হিমাগার থেকেই নষ্ট হয়েছে ১৫ হাজার মণ আলু। প্রতিবস্তার এক তৃতীয়াংশ আলুই নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আলু নষ্ট হলেও হিমাগার কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ক্ষতিপূরণও পান না তারা।

তবে আলু পচনের জন্য কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দায়ী করছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, যেসব আলু পচে যাচ্ছে সেগুলো পরিপক্ক না। মাটি লেগে থাকাও পচে যাওয়ার কারণ।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে মোট হিমাগার রয়েছে ১৯টি। এগুলোতে এক লাখ ৬৫ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন আলু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। ১৯টি হিমাগারের মধ্যে কালাই উপজেলার পুনট হিমাগার, এম ইশরাত হিমাগার, সুন্দরপুর হিমাগার, মুসলিমগঞ্জ মান্নান হিমাগারসহ আটটি হিমাগারে খোঁজ নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর তাদের শতাধিক বস্তা আলু নষ্ট হয়েছে। কালাই উপজেলার উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের একই মালিকের দুটি হিমাগার রয়েছে। এগুলো হলো মান্নান অ্যান্ড সন্স বীজ হিমাগার এবং একই ইউনিয়নে অবস্থিত মুসলিমগঞ্জ মান্নান বীজ হিমাগার। হিমাগার দুটিতে রোমানা জাতের আলু ৬০-৬৫ কেজি ওজনের প্রায় ৩০ হাজার বস্তা থেকে বস্তাপ্রতি ২০ কেজি করে পচা আলু বের হয়েছে। এ অবস্থায় হিমাগার কর্তৃপক্ষ নিরুপায় হয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংবাদ দিয়ে তাদের পচা ও দুর্গন্ধ আলু বের করে দিয়েছে। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবস্তায় লোকসান গুনতে হয়েছে ১৩০০-১৫০০ টাকা।

মান্নান অ্যান্ড সন্স বীজ হিমাগারে চুক্তিভিত্তিক আলু বাছাইকারী নারী শ্রমিক দেলোয়ারা বেগম, রওশন আরা, ফিরোজার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিটি বস্তায় ৬০-৬৫ কেজি আলু থাকে। পচন ধরায় প্রতিবস্তা থেকে ২০-২৫ কেজি আলু ফেলে দিতে হয়েছে।

উদয়পুর এলাকার খায়রুল ইসলাম বলেন, মান্নান অ্যান্ড সন্স বীজ হিমাগারে রাখা আমার ৪৫ বস্তা আলু নষ্ট হয়েছে। নষ্ট আলু নিতে গেলে তারা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উল্টো বস্তাপ্রতি ৩৪০ টাকা ভাড়া নিয়ে আলু ছেড়ে দিয়েছে।

এল্লাগাড়ি গ্রাামের আরাফাত হোসেন বলেন, গতবছরও মান্নান হিমাগারে রাখা অনেক আলু পচে নষ্ট হয়েছিল। এবারও আমার আলুসহ অনেক কৃষকের আলু হিমাগারে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে আমরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা কৃষকরা অভিযোগ করলেও এর কোনো প্রতিকার পাই না।

ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, আমার নিজ জমিতে উৎপাদিত মানসম্পন্ন আলু মান্নান অ্যান্ড সন্স হিমাগারে রেখেছিলাম। তারপরও আমার এত ভালো ও মানসম্মত আলুগুলো তারা তাদের অবহেলার কারণে নষ্ট করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, এবার এ হিমাগারে অনেক আলু পচে নষ্ট হয়ে গেছে, যা হিসাব মিলানো মুশকিল।

এ বিষয়ে মান্নান অ্যান্ড সন্স হিমাগারের ব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান বলেন, হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য নিয়ে আসা আলুর বয়স কম ছিল। আলুর সঙ্গে মাটি লেগে থাকার কারণে এই পচন ধরেছে। হিমাগারে রোমানা জাতের আলু ছাড়া অন্য কোনো জাতের আলুতে তেমন পচন ধরেনি।

এম ইশরাত হিমাগারের ম্যানেজার আবু রায়হান বলেন, প্রতিটি হিমাগারেই কিছু আলু নষ্ট হয়। তবে আমি জানতে পারলাম এবার মান্নান অ্যান্ড সন্স হিমাগারে আলু বেশি নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, কোনো হিমাগারে যদি কৃষকের আলুর ক্ষতি হয়, সে বিষয়ে অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

হিমাগারেই পচে নষ্ট ১৫ হাজার মণ আলু

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৪৯:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫

জয়পুরহাটের হিমাগারগুলোতে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে আলু। চলতি মৌসুমে দুইটি হিমাগার থেকেই নষ্ট হয়েছে ১৫ হাজার মণ আলু। প্রতিবস্তার এক তৃতীয়াংশ আলুই নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আলু নষ্ট হলেও হিমাগার কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ক্ষতিপূরণও পান না তারা।

তবে আলু পচনের জন্য কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দায়ী করছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, যেসব আলু পচে যাচ্ছে সেগুলো পরিপক্ক না। মাটি লেগে থাকাও পচে যাওয়ার কারণ।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে মোট হিমাগার রয়েছে ১৯টি। এগুলোতে এক লাখ ৬৫ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন আলু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। ১৯টি হিমাগারের মধ্যে কালাই উপজেলার পুনট হিমাগার, এম ইশরাত হিমাগার, সুন্দরপুর হিমাগার, মুসলিমগঞ্জ মান্নান হিমাগারসহ আটটি হিমাগারে খোঁজ নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর তাদের শতাধিক বস্তা আলু নষ্ট হয়েছে। কালাই উপজেলার উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের একই মালিকের দুটি হিমাগার রয়েছে। এগুলো হলো মান্নান অ্যান্ড সন্স বীজ হিমাগার এবং একই ইউনিয়নে অবস্থিত মুসলিমগঞ্জ মান্নান বীজ হিমাগার। হিমাগার দুটিতে রোমানা জাতের আলু ৬০-৬৫ কেজি ওজনের প্রায় ৩০ হাজার বস্তা থেকে বস্তাপ্রতি ২০ কেজি করে পচা আলু বের হয়েছে। এ অবস্থায় হিমাগার কর্তৃপক্ষ নিরুপায় হয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংবাদ দিয়ে তাদের পচা ও দুর্গন্ধ আলু বের করে দিয়েছে। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবস্তায় লোকসান গুনতে হয়েছে ১৩০০-১৫০০ টাকা।

মান্নান অ্যান্ড সন্স বীজ হিমাগারে চুক্তিভিত্তিক আলু বাছাইকারী নারী শ্রমিক দেলোয়ারা বেগম, রওশন আরা, ফিরোজার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিটি বস্তায় ৬০-৬৫ কেজি আলু থাকে। পচন ধরায় প্রতিবস্তা থেকে ২০-২৫ কেজি আলু ফেলে দিতে হয়েছে।

উদয়পুর এলাকার খায়রুল ইসলাম বলেন, মান্নান অ্যান্ড সন্স বীজ হিমাগারে রাখা আমার ৪৫ বস্তা আলু নষ্ট হয়েছে। নষ্ট আলু নিতে গেলে তারা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উল্টো বস্তাপ্রতি ৩৪০ টাকা ভাড়া নিয়ে আলু ছেড়ে দিয়েছে।

এল্লাগাড়ি গ্রাামের আরাফাত হোসেন বলেন, গতবছরও মান্নান হিমাগারে রাখা অনেক আলু পচে নষ্ট হয়েছিল। এবারও আমার আলুসহ অনেক কৃষকের আলু হিমাগারে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে আমরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা কৃষকরা অভিযোগ করলেও এর কোনো প্রতিকার পাই না।

ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, আমার নিজ জমিতে উৎপাদিত মানসম্পন্ন আলু মান্নান অ্যান্ড সন্স হিমাগারে রেখেছিলাম। তারপরও আমার এত ভালো ও মানসম্মত আলুগুলো তারা তাদের অবহেলার কারণে নষ্ট করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, এবার এ হিমাগারে অনেক আলু পচে নষ্ট হয়ে গেছে, যা হিসাব মিলানো মুশকিল।

এ বিষয়ে মান্নান অ্যান্ড সন্স হিমাগারের ব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান বলেন, হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য নিয়ে আসা আলুর বয়স কম ছিল। আলুর সঙ্গে মাটি লেগে থাকার কারণে এই পচন ধরেছে। হিমাগারে রোমানা জাতের আলু ছাড়া অন্য কোনো জাতের আলুতে তেমন পচন ধরেনি।

এম ইশরাত হিমাগারের ম্যানেজার আবু রায়হান বলেন, প্রতিটি হিমাগারেই কিছু আলু নষ্ট হয়। তবে আমি জানতে পারলাম এবার মান্নান অ্যান্ড সন্স হিমাগারে আলু বেশি নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, কোনো হিমাগারে যদি কৃষকের আলুর ক্ষতি হয়, সে বিষয়ে অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।