নতুন বছরে নতুন বই নিয়ে শঙ্কা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২৫:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ৬৯ বার পড়া হয়েছে
আর মাত্র একমাস বাকি। এরপর নতুন বছর শুরু। তবে এখনো ছাপার বাকি আছে প্রায় ৩০ কোটি বই। প্রাথমিকের বই ছাপা শুরু হলেও এখনো মাধ্যমিক ও মাদরাসার বই ছাপার কাজ সেভাবে শুরু হয়নি। হাতে মাত্রে একমাস থাকলেও বিপুল সংখ্যক বই ছাপানো নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
হাতে সময় না থাকায় বছরের প্রথম দিনে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই সব বই পাচ্ছেন না তা অনেকটাই নিশ্চিত। বই ছাপানোর সংকট কাটাতে তাই ছাপার প্রক্রিয়ায় স্ংস্কারের চিন্তা করছে এনসিটিবি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে এতো বিপুল পরিমাণ বই ছেপে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি এতো অল্প সময়ের মধ্যে এর অর্ধেক বই ও ছাপা অনেক কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে তুন বছরের প্রথম দিনে অর্ধেক শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়া সম্ভব হবে না।
এদিকে, এমন পরিস্থতিতেও শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে নতুন বই তুলে দেয়ার প্রত্যাশা করছে এনসিটিবি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যথা সময়ে নতুন বই তুলে দিতে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়েছে এনসিটিবি।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ৩৯১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটি ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৮ টি বইছাপানো ও বিতরণের জন্য কাজ করছে এনসিটিবি। কিন্তু এই একমাসের মধ্যে এতো বই ছাপিয়ে জানুয়ারির প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এনসিটিবি। বই ছাপানোর ক্ষেত্রে এবার বাজেটের আকার অনেক বেড়ে গেলেও প্রেসগুলোর কাছ থেকে দরপত্রতের শর্ত অনুযায়ী বই গ্রহণ নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ আরও জটিল করে তুলেছে প্রতিষ্ঠানটির জন্য।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে , বর্তমানে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর বই ছাপার কাজ চলমান রয়েছে । এরমধ্যে চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপানোর কার্যাদেশ হলেও বই ছাপানোর কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। মাধ্যমিকের কয়েকটি শ্রেণির কার্যাদেশ হয়ে গেলেও সবার ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগ না হওয়ায় ছাপার কাজ শুরু হয়নি।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর আগস্ট-সেপ্টেম্বরের কাজ শুরু হয়ে ৭০ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত সময় দেয়া হয় প্রেস মালিকদের। তবে এবছর তাদের সময় দেয়া হয়েছে মাত্র ৪৫ দিন। আগের মতো বিভাগ বিভাজন বহাল থাকায় প্রায় ৬ কোটি বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। বইয়ের সংখ্যা বাড়লেও প্রায় অর্ধেক সময় কমেছে। আবার যেসব বইয়ের দরপ্ত্র চলছে এগুলোর কার্যাদেশ দেয়া শেষে চুক্তি করতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ব লাগবে। ফলে এই অল্প সময়ে এত বিপুল সংখ্যক বই ছাপানোকে অনেকটা অবাস্তব বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, আমাদের অনেক দেরীতে কাজ দেয়া হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে বই ছাপার কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। এনসিটিবি পুরো কাজ শেষ করার যে কথা বলছে তা অনেকটাই অবাস্তব। আমরা হয়তো মাধ্যমিকের তিন থেকে পাঁচটি বইয়ের কাজ এই সময়ে শেষ করতে পারবো। এর বেশি এই অল্প সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
প্রেস মালিকরা বলেছেন, গত বছর কার্যাদেশ শেষে মুদ্রাকরদের সঙ্গে এনসিটিবির চুক্তি সম্পাদনের পর কমপক্ষে বই ছাপতে ৭২ দিন সময় দেয়া হয়েছে। আর জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে দরপত্র শুরু হতো। ফলে একটি কাজ শেষ করে মুদ্রাকররা আরেকটি কাজ ধরতে পারতেন। কিন্তু এবার সব কাজ একসঙ্গে দেওয়া হয়েছে। আর সময় কমিয়ে মাত্র ৪৫ দিন করা হয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ করে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুযায়ী যেকোনো দরপত্রের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই সময়সীমা কমিয়ে আনলেও নবম ও দশম শ্রেণির দরপত্র আহবান শেষে তা জমা হতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের সময় প্রয়োজন। এরপর কার্যাদেশ শেষে নিয়মানুযায়ী আরও ২৮ দিন সময় দেয়ার কথা। কারণ যে মুদ্রাকর কাজ পাবেন তিনি পারফরম্যান্স গ্যারান্টি (পিজি), ব্যাংকঋণ, কাগজের সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার পরই এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তি করবেন। এরপর আবার ৭২ দিনের কাজ ৪৫ দিনের মধ্যে করতে হচ্ছে। ফলে সব কিছু মিলিয়ে একটি বড় জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।
এদিকে , বই ছাপানোর দর নিয়ে প্রেসগুলোর ‘সিন্ডিকেট’ হওয়া ও দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী বই না পাওয়াসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটাতে ছাপার প্রক্রিয়ায় সংস্কারের কথা ভাবছে এনসিতিবি। এজন্য আগামীতে তিনটি পরিকল্পনা কার্যকরের কথা ভাবছে এনসিটিবি। তিন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্ণফুলি পেপার মিলকে (কেপিএম) পূর্ণাঙ্গভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা। দ্বিতীয়ত, আর্মি প্রিন্টিং প্রেসের মাধ্যমে অধিক বই ছাপানোর ব্যবস্থা করা এবং তৃতীয়ত, এনসিটিবির পক্ষে বইয়ের মান যাচাইয়ের জন্য প্রি-ডেলিভারি ইন্সপেকশন (পিডিআই) ও পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশন (পিএলআই) এজেন্ট হিসেবে সরকারি মাননিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানকে এনসিটিবির পক্ষে নিয়োগ দেওয়া। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এই পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে বছরের প্রথম দিনই প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর মানসম্পন্ন বই পাওয়া নিয়ে সবধরনের অনিশ্চয়তা দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই এ মাসের মধ্যেই চলে যাবে। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণির সব বই ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চলে যাবে। মাধ্যমিকের ৭০ শতাংশ বই আমরা ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। ৯০ শতাংশ বই যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ২৫ ডিসেম্বর। আমরা দিনরাত কাজ করছি। প্রেস মালিকরাও সর্বোচ্চটা দেবন বলে জানিয়েছেন। আশা করছি, আমরা যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে পারব।