ঢাকা ১০:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৬৪ দিনের উৎকণ্ঠার অবসান

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৪০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ ৭১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শ্বাসরুদ্ধকর ৬৪ দিনের যাত্রা শেষ করে অবশেষে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া আলোচিত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) এক নম্বর জেটিতে নাবিকদের বহন করা জাহাজ এমভি জাহান মনি-৩ কে পাহারা দিয়ে জেটিতে নিয়ে আসে। জাহাজটি জেটিতে ভিড়লে সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপুর ২টার দিকে কুতুবদিয়া উপকূল থেকে তাদের নিয়ে রওনা দিয়েছিল জাহাজটি।

এদিকে এনসিটি-১ জেটিতে আগে থেকেই জড়ো হন নাবিকদের স্বজনরা। জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাতসহ কর্মকর্তারা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা মুক্ত নাবিকদের বরণে সেখানে সমবেত হয়েছিলেন।

জাহাজ থেকে জেটির কাছাকাছি দৃষ্টিসীমানায় আসার পর নাবিকরা হাত নেড়ে উচ্ছ্বাসের জবাব দেন। এ সময় নাবিকদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিকে বন্দরের জেটিতে ২৩ নাবিককে ফুল দিয়ে বরণ করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।

জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদের মা জ্যোৎস্না বেগম বলেন, একটা মাস কী যে টেনশনে ছিলাম, বোঝাতে পারব না। ছেলের জন্য রাতদিন নামাজ পড়েছি, খেতেও পারিনি। ঈদও ভালো করে কাটাতে পারিনি আমরা কেউ।

জানা গেছে, জিম্মি অবস্থায় জাহাজটিতে নাবিকদের মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। নানা কষ্টে দিন পার করেছেন নাবিকরা। নাবিকদের ফিরে পাওয়ার আশায় উদগ্রীব ছিলেন সবাই। শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করছিলেন তাদের স্বজনরা। অবশেষে নাবিকদের ফিরে আসায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হলো।

কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, একমাস ধরে আমরা উৎকণ্ঠায় সময় পার করেছি। অবশেষে আমাদের নাবিকেরা ফিরে এসেছেন। তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী সবাই সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন।

কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, আমাদের উদ্দেশ্যে ছিলো ২৩ নাবিককে সুস্থভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা। তা আমরা পেরেছি। নাবিকরা এমভি জাহাজ মনি লাইটার জাহাজে করে ফিরেছে। কারণ আবদুল্লাহতে যে পণ্যগুলো আছে সেগুলো খালাস করতে দেরি হবে। নতুন নাবিকদের সেখানে পাঠিয়ে ওই ২৩ নাবিককে আপাতত নিয়ে আসা হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে বরণের পর নাবিকেরা ঘরে ফিরতে শুরু করেন। চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ সারা দেশে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থাও কোম্পানির পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

জানা গেছে, সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে একমাস পর মুক্ত করা হয়েছেলো এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ও এর ২৩ নাবিক। এরপর গত সোমবার (১৩ মে) দুপুরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় কক্সবাজারে পৌঁছে জাহাজটি।

উল্লেখ্য, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিলো।

জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলো- চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, তৌফিকুল ইসলাম, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, জয় মাহমুদ, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মো. নাজমুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আইনুল হক, মো. আলী হোসেন, মো. শরিফুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

৬৪ দিনের উৎকণ্ঠার অবসান

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৪০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

শ্বাসরুদ্ধকর ৬৪ দিনের যাত্রা শেষ করে অবশেষে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া আলোচিত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) এক নম্বর জেটিতে নাবিকদের বহন করা জাহাজ এমভি জাহান মনি-৩ কে পাহারা দিয়ে জেটিতে নিয়ে আসে। জাহাজটি জেটিতে ভিড়লে সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপুর ২টার দিকে কুতুবদিয়া উপকূল থেকে তাদের নিয়ে রওনা দিয়েছিল জাহাজটি।

এদিকে এনসিটি-১ জেটিতে আগে থেকেই জড়ো হন নাবিকদের স্বজনরা। জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাতসহ কর্মকর্তারা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা মুক্ত নাবিকদের বরণে সেখানে সমবেত হয়েছিলেন।

জাহাজ থেকে জেটির কাছাকাছি দৃষ্টিসীমানায় আসার পর নাবিকরা হাত নেড়ে উচ্ছ্বাসের জবাব দেন। এ সময় নাবিকদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিকে বন্দরের জেটিতে ২৩ নাবিককে ফুল দিয়ে বরণ করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।

জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদের মা জ্যোৎস্না বেগম বলেন, একটা মাস কী যে টেনশনে ছিলাম, বোঝাতে পারব না। ছেলের জন্য রাতদিন নামাজ পড়েছি, খেতেও পারিনি। ঈদও ভালো করে কাটাতে পারিনি আমরা কেউ।

জানা গেছে, জিম্মি অবস্থায় জাহাজটিতে নাবিকদের মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। নানা কষ্টে দিন পার করেছেন নাবিকরা। নাবিকদের ফিরে পাওয়ার আশায় উদগ্রীব ছিলেন সবাই। শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করছিলেন তাদের স্বজনরা। অবশেষে নাবিকদের ফিরে আসায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হলো।

কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, একমাস ধরে আমরা উৎকণ্ঠায় সময় পার করেছি। অবশেষে আমাদের নাবিকেরা ফিরে এসেছেন। তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী সবাই সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন।

কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, আমাদের উদ্দেশ্যে ছিলো ২৩ নাবিককে সুস্থভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা। তা আমরা পেরেছি। নাবিকরা এমভি জাহাজ মনি লাইটার জাহাজে করে ফিরেছে। কারণ আবদুল্লাহতে যে পণ্যগুলো আছে সেগুলো খালাস করতে দেরি হবে। নতুন নাবিকদের সেখানে পাঠিয়ে ওই ২৩ নাবিককে আপাতত নিয়ে আসা হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে বরণের পর নাবিকেরা ঘরে ফিরতে শুরু করেন। চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ সারা দেশে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থাও কোম্পানির পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

জানা গেছে, সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে একমাস পর মুক্ত করা হয়েছেলো এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ও এর ২৩ নাবিক। এরপর গত সোমবার (১৩ মে) দুপুরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় কক্সবাজারে পৌঁছে জাহাজটি।

উল্লেখ্য, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিলো।

জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলো- চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, তৌফিকুল ইসলাম, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, জয় মাহমুদ, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মো. নাজমুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আইনুল হক, মো. আলী হোসেন, মো. শরিফুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।