ঢাকা ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীকে মারপিট করে মাথার চুল কেটে দিলো স্বামী

শহিদুল ইসলাম দইচ, যশোর
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৪৩:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যশোরে যৌতুক না পেয়ে এক নারীকে মারপিটের পর মাথার চুল কেটে দিয়েছে তার স্বামী। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযোগ না নেয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই নারী। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে স্বামী, দেবর ও শাশুড়ির নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে মামলা করেন তিনি।

আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য বাঘারপাড়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই নারীর আইনজীবী।

মামলার আসামিরা হলো-মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম ও স্ত্রী হাফিজা খাতুন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের ১৫ মে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সিলুমপুর গ্রামের জামসের আলীর মেয়ে আনোয়ারা খাতুনের সাথে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকারসহ ২ লাখ টাকার মালামাল উপহার হিসেবে দেয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ব্যবসার জন্য তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তরিকুল ইসলাম। আনোয়ারা খাতুন টাকা এনে দিতে রাজি না হওয়ায় তরিকুল ইসলাম, তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম ও মা হাফিজা খাতুন তার উপর নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করে সংসারে টিকে থাকার চেষ্টা করলেও সর্বশেষ গত ২৭ জুন একমাত্র ছেলে সন্তানকেসহ আনোয়ারা খাতুনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর তিনি তার পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বামীর সাথে মীমাংশার চেষ্টা চালান। সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই আনোয়ারা খাতুনের পিতার বাড়িতে মীমাংশায় বসে দুই পরিবারের লোকজন।

এরপর আনোয়ারা খাতুন ও তার সন্তানকে নিয়ে মাইক্রোবাসাযোগে মেহেরপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হন তরিকুল ইসলাম, তার ভাই ও মা। পথিমধ্যে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুরের বিপুল ফারাজির ইটভাটার সামনে পৌছুলে আনোয়ারা খাতুনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারপিট করা হয় এবং তার মাথার চুল কেটে দেয়। এসময় তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে তার ছেলেকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তরিকুল ইসলাম ও তার স্বজনরা চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সুস্থ হয়ে থানায় গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। যে কারণে তিনি আজ আদালতে এ মামলা দায়ের করে ন্যায় বিচার প্রার্থণা করেছেন।

নির্যাতিত আনোয়ারা খাতুন আদালত চত্বরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তার স্বামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার অনেক প্রভাব। তারপরও তাকে এভাবে নির্যাতন চালাবে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

আনোয়ারা খাতুনের আইনজীবী মোস্তাফা হুমায়ুন কবির জানান, আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য বাঘারপাড়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে আদালতে উপস্থিত বাঘারপাড়া উজেলার রায়পুর ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য মর্জিনা খাতুন বলেন, এ ধরণের নির্যাতন নারীর জন্য অবমাননাকর। এ নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিৎ। যাতে আর কোন নারী এ ধরণের নির্যাতনের শিকার না হন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

স্ত্রীকে মারপিট করে মাথার চুল কেটে দিলো স্বামী

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৪৩:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪

যশোরে যৌতুক না পেয়ে এক নারীকে মারপিটের পর মাথার চুল কেটে দিয়েছে তার স্বামী। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযোগ না নেয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই নারী। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে স্বামী, দেবর ও শাশুড়ির নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে মামলা করেন তিনি।

আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য বাঘারপাড়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই নারীর আইনজীবী।

মামলার আসামিরা হলো-মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম ও স্ত্রী হাফিজা খাতুন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের ১৫ মে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সিলুমপুর গ্রামের জামসের আলীর মেয়ে আনোয়ারা খাতুনের সাথে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকারসহ ২ লাখ টাকার মালামাল উপহার হিসেবে দেয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ব্যবসার জন্য তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তরিকুল ইসলাম। আনোয়ারা খাতুন টাকা এনে দিতে রাজি না হওয়ায় তরিকুল ইসলাম, তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম ও মা হাফিজা খাতুন তার উপর নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করে সংসারে টিকে থাকার চেষ্টা করলেও সর্বশেষ গত ২৭ জুন একমাত্র ছেলে সন্তানকেসহ আনোয়ারা খাতুনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর তিনি তার পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বামীর সাথে মীমাংশার চেষ্টা চালান। সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই আনোয়ারা খাতুনের পিতার বাড়িতে মীমাংশায় বসে দুই পরিবারের লোকজন।

এরপর আনোয়ারা খাতুন ও তার সন্তানকে নিয়ে মাইক্রোবাসাযোগে মেহেরপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হন তরিকুল ইসলাম, তার ভাই ও মা। পথিমধ্যে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুরের বিপুল ফারাজির ইটভাটার সামনে পৌছুলে আনোয়ারা খাতুনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারপিট করা হয় এবং তার মাথার চুল কেটে দেয়। এসময় তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে তার ছেলেকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তরিকুল ইসলাম ও তার স্বজনরা চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সুস্থ হয়ে থানায় গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। যে কারণে তিনি আজ আদালতে এ মামলা দায়ের করে ন্যায় বিচার প্রার্থণা করেছেন।

নির্যাতিত আনোয়ারা খাতুন আদালত চত্বরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তার স্বামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার অনেক প্রভাব। তারপরও তাকে এভাবে নির্যাতন চালাবে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

আনোয়ারা খাতুনের আইনজীবী মোস্তাফা হুমায়ুন কবির জানান, আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য বাঘারপাড়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে আদালতে উপস্থিত বাঘারপাড়া উজেলার রায়পুর ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য মর্জিনা খাতুন বলেন, এ ধরণের নির্যাতন নারীর জন্য অবমাননাকর। এ নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিৎ। যাতে আর কোন নারী এ ধরণের নির্যাতনের শিকার না হন।