সৈয়দপুরে দেয়ালে দেয়ালে শিক্ষার্থীদের হরেক রকম গ্রাফিক্স
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৪৫:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪ ৭০ বার পড়া হয়েছে
স্বাধীনতার বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীরা তুলে ধরছেন নিজ হাতে, রং তুলিতে। উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে খ্যাত সৈয়দপুর শহরের দেয়ালে দেয়ালে শিক্ষার্থীদের হরেক রকম গ্রাফিক্স। দেয়াল জুড়ে ফুটে উঠেছে ছাত্রমনের নানা আবেগ। আঁকছেন নিজ হাতে। তাদের কেউ পেশাদার শিল্পী নয়। আঁকাআঁকির উপর নেই কারো কোনো লেখাপড়া বা ডিগ্রি। তবুও মনের আবেগ থেকে হাতে তুলেছেন রংতুলি। এঁকে চলছেন বিমূর্ত প্রতিচ্ছবি।
শহরের পাঁচ মাথা থেকে ক্যান্টপাবলিক, বিজ্ঞান কলেজ থেকে বিমানবন্দর, সৈয়দপুর প্লাজা থেকে তুলশিরামসহ বিভিন্ন রাস্তার দুই পাশের দেয়ালে এসব গ্রাফিতি এঁকেছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাদা দেয়ালে রক্তে রাঙা লাল কালি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘পানি লাগবে পানি…’। তার পাশে দেখা মেলে বুক উজার করে দাঁড়িয়ে থাকা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহিদ আবু সাঈয়ের ছবি।
এছাড়াও লেখা রয়েছে, স্বাধীনতা এনেছি সংস্কারও আনবো, তুমি বীর তুমি চির উন্নত মমশীর, বিকল্ল কে তুমি আমি আমরা, ইতিহাসের নতুন অধ্যায় জুলাই ২৪, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো জুলাই, আমাদের দেশ আমাদেরই গড়ে নিতে হবে, মোরা আকাশের মতো বাধাহীন, থ্যাংক ইউ যমুনা টিভি, ১৯৫২ দেখি নি ২৪ দেখেছি প্রভৃতি। গভীর আবেগী থিমের মাধ্যমের এই বাণীগুলোকে যেন জীবন্ত করে ফুঁটে তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
ছবি আঁকায় ব্যস্ত লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী লাইসা রহমান জানান, আমরা শিক্ষার্থী ভাইবোনরা কয়েকজন মিলে গ্রুপ করে বিভিন্ন দেয়ালে আঁকতেছি।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র লাবিব বিন জাকির জানান, আমাদের মা-বাবাও অনেক সহযোগিতা করছেন, অনেকে তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে এসে অংকন শেষে আবার সন্ধ্যায় বাসা নিয়ে যাচ্চেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ সালেহীন জানান, আমরা নিজের টাকায় রং এর উপকরণ কিনেছি। এছাড়াও শিক্ষক অভিভাবক, এমনকি রং এর দোকানদারও আমাদের সহযোগিতা করছেন।
লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আরফিন রানা বলেন, এর আগে খাতা ছাড়া আর কোথায় আঁকেনি।
ছবি আঁকায় ব্যস্ত শিক্ষার্থী জাহাঙ্গির আলম প্রিন্স বলেন, কোনো আঁকে আমরা (শিক্ষার্থীরা) নিজেদের নাম লিখেনি, এই অংকন আমরা সকল শহীদদের উৎসর্গ করছি। আরেক শিক্ষার্থী সুজানা মুস্তারি বলেন, মনে আবেগগুলো রংতুলিতে প্রকাশ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
সৈয়দপুরের দেয়ালে গ্রাফিতি অংকনের প্রধান সমন্বয়ক নাফিসা কবির রোজা জানান, প্রথমে একটি মেসেঞ্জার গ্রæপ খুলে বিষয়টি জানাই। এর পরই প্রিন্স, রাফি, রাতুল, ওয়াসিক সহ অনেকের প্রচন্ড আগ্রহ পাই। পরের দিনই আমরা আঁকতে নামি। এটা দেখে হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার মতো সবাই রং তুলি নিয়ে আঁকতে আসে।
সৈয়দপুর উপজেলার ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ আল রাজি বলেন, আমাদের দেয়াল লিখন ও ট্রাফিকিং ব্যবস্থাপনা দেখে মানুষ মুগ্ধ। সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভালোবাসা ও সহযোগিতা পাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের এমন দেশসেবী কর্মসূচির বিষয়ে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াদ আরফান সরকার রানার সাথে।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা আমাদের জাগ্রত দেশপ্রেমিক। রং এর উপকরণ কিনে দেবার পাশাপাশি ট্রাফিক শিক্ষার্থীদের বিশ্রামে বাসার বেঞ্চ ও খাবারের ব্যবস্থা করেছি। দেশপ্রেমী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করলে তারা অনেক ভালো কিছু করতে পারে।