ঢাকা ০৬:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাখাইনে লড়াই : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা

কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:০১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ৭৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মায়ানমারের রাখাইনে চলমান যুদ্ধে মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের বেশ কয়েকটি গ্রাম। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে রাখাইনের বুচিডং, মংডু, নলবনিয়া এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে মায়ানমার সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। মর্টার শেল ও গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছে সীমান্তবাসীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) পরিস্থিতি দেখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী সীমান্ত এলাকা চাকঢালা বিওপি পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মায়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। একইসঙ্গে সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।

সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মায়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।

পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীনে চাকঢালা বিওপি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মায়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।

সীমান্তবাসীদের তথ্যমতে, আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা। অন্যদিকে গুলি, গোলার বিস্ফোরণ ও বিজিপি সদস্যদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনায় আতঙ্কে সীমান্তের বাসিন্দারা।

সীমান্তবাসীদের আরও তথ্যমতে, ৭০ ভাগ রাখাইন এলাকা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে ঠিকতে না পেরে অনেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন বর্তমানে সেনাসহ ২৬১ জন বিজেপি সদস্য বিজিবির হেফাজতে নাইক্ষ্যংছড়ি রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানায়, আরও শতাধিক জান্তা বাহিনীর সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। মায়ানমার অংশে নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফ সীমান্তজুড়ে এখন গোলাগুলি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করছে সীমান্তের বাসিরা।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, মঙ্গলবার রাতে ৪৬ জন জান্তা বাহিনীর যোদ্ধা পালিয়ে আসে। তাদেরকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসাদের দ্রæত স্বদেশে ফেরত পাঠালে এলাকার ভীতিকর পরিস্থিতি কেটে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে, মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন বাড়ছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দেশটির সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি সদস্যের সংখ্যা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করা সদস্যদের রাখা হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ অবস্থায় উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন স্থানীয়রা। জনপ্রতিনিধি বলছেন, তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে নানামুখী সমস্যা।

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে যেমন রয়েছে স্থলপথ, ঠিক তেমনি আছে নদী ও সাগরপথ। প্রতিদিন সীমান্তের ওপারে কোনো না কোনো ঘাঁটিতে হচ্ছে গোলার বিস্ফোরণ। চলছে তীব্র গুলি বিনিময়। তবে এখন বিজিপি ও আরাকান আর্মির মধ্যকার লড়াই জোরালো হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ জামছড়ি সীমান্তের বিপরীতে মায়ানমারের অভ্যন্তরে।

আর আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা। অন্যদিকে গুলি, গোলার বিস্ফোরণ ও বিজিপি সদস্যদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনায় আতঙ্কে সীমান্তের বাসিন্দারা।

চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসেন ৩৩০ জন।

এর মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, চারজন বিজিপি পরিবারের সদস্য, দুইজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও চারজন বেসামরিক নাগরিক। তাদেরকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

অনুপ্রেবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, আমরা নাফনদ ও সমুদ্র পথে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার রেখেছি। পাশাপাশি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোস্ট গার্ড প্রস্তুত রয়েছে।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন, তারা সবাই আমাদের হেফাজতে রয়েছেন এবং সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

রাখাইনে লড়াই : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:০১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

মায়ানমারের রাখাইনে চলমান যুদ্ধে মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের বেশ কয়েকটি গ্রাম। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে রাখাইনের বুচিডং, মংডু, নলবনিয়া এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে মায়ানমার সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। মর্টার শেল ও গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছে সীমান্তবাসীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) পরিস্থিতি দেখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী সীমান্ত এলাকা চাকঢালা বিওপি পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মায়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। একইসঙ্গে সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।

সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মায়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।

পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীনে চাকঢালা বিওপি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মায়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।

সীমান্তবাসীদের তথ্যমতে, আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা। অন্যদিকে গুলি, গোলার বিস্ফোরণ ও বিজিপি সদস্যদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনায় আতঙ্কে সীমান্তের বাসিন্দারা।

সীমান্তবাসীদের আরও তথ্যমতে, ৭০ ভাগ রাখাইন এলাকা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে ঠিকতে না পেরে অনেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন বর্তমানে সেনাসহ ২৬১ জন বিজেপি সদস্য বিজিবির হেফাজতে নাইক্ষ্যংছড়ি রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানায়, আরও শতাধিক জান্তা বাহিনীর সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। মায়ানমার অংশে নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফ সীমান্তজুড়ে এখন গোলাগুলি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করছে সীমান্তের বাসিরা।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, মঙ্গলবার রাতে ৪৬ জন জান্তা বাহিনীর যোদ্ধা পালিয়ে আসে। তাদেরকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসাদের দ্রæত স্বদেশে ফেরত পাঠালে এলাকার ভীতিকর পরিস্থিতি কেটে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে, মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন বাড়ছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দেশটির সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি সদস্যের সংখ্যা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করা সদস্যদের রাখা হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ অবস্থায় উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন স্থানীয়রা। জনপ্রতিনিধি বলছেন, তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে নানামুখী সমস্যা।

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে যেমন রয়েছে স্থলপথ, ঠিক তেমনি আছে নদী ও সাগরপথ। প্রতিদিন সীমান্তের ওপারে কোনো না কোনো ঘাঁটিতে হচ্ছে গোলার বিস্ফোরণ। চলছে তীব্র গুলি বিনিময়। তবে এখন বিজিপি ও আরাকান আর্মির মধ্যকার লড়াই জোরালো হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ জামছড়ি সীমান্তের বিপরীতে মায়ানমারের অভ্যন্তরে।

আর আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা। অন্যদিকে গুলি, গোলার বিস্ফোরণ ও বিজিপি সদস্যদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনায় আতঙ্কে সীমান্তের বাসিন্দারা।

চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসেন ৩৩০ জন।

এর মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, চারজন বিজিপি পরিবারের সদস্য, দুইজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও চারজন বেসামরিক নাগরিক। তাদেরকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

অনুপ্রেবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, আমরা নাফনদ ও সমুদ্র পথে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার রেখেছি। পাশাপাশি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোস্ট গার্ড প্রস্তুত রয়েছে।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন, তারা সবাই আমাদের হেফাজতে রয়েছেন এবং সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।