বসুন্ধরা চেয়ারম্যান-এমডির বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
ব্যবসায়ীদের হয়রানি অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০০:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪ ৫৯ বার পড়া হয়েছে
ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যে ১৭৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এরমধ্যে রয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাতে ও বুধবার (২১ আগস্ট) তাদের নামে ৩টি মামলা হয়েছে ঢাকার বাড্ডা থানায়। হয়রানিমূলক এই মামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
নিহত হাফিজুল শিকদারের (২৮) বাবা আবু বকর শিকদার যে মামলা করেন, তার এজাহারে তিনি বলেন, গত ২০ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আমার ছেলে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। মেরুল বাড্ডার প্রগতি সরণিতে আসামাত্র আসামিদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে আমার ছেলে হাফিজুল শিকদারকে হত্যা করা হয়। আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে দেরি এবং থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় বাড্ডা থানার ডিউটি অফিসার এসআই ওয়ালিউর রহমান বলেন, কখন, কবে মামলা হয়েছে তা আমার জানা নেই। ঊর্ধ্বতন স্যাররা বলতে পারবেন।
পরে এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ওসি, ওসি (তদন্ত) ও ওসির (অপারেশন) মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি।
এরপর এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রিয়াজুল হক বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
ঘটনার সময় দেশেই ছিলেন না বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। এমন হয়রানিমূলক মামলায় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। তাদের ওপর দমন-পীড়ন করা হলে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কখনো ধরে রাখা যাবে না, দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে না। তাই সরকারের এখন জরুরি ভিত্তিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা উন্নত করা এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেয়া দরকার।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৫ বছরের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে সব ব্যবসায়ী এক হয়ে কাজ করছেন, এ সময় দেশের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে এমন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হামলা ও মামলা করা হলে পুরো ব্যবসায়ী সমাজে অস্থিরতা তৈরি করবে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি স্থবির হবে। তদন্ত ছাড়া এ রকম মামলা ও হয়রানি দেশের কল্যাণে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে না। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার অনেক ত্যাগের বিনিময়ে যে আন্দোলন তার সুফল থেকে বঞ্চিত হবে দেশের সাধারণ মানুষ।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। দেশের শিল্প-কারখানায় লাখ লাখ মানুষ চাকরি করে। যদি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা চালু রাখতে না পারেন, তাহলে অর্থনীতিতে সংকট বাড়বে। আমাদের আবেদন, সরকার এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের হয়রানি যেন না করে।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, মামলা দিতে হলে তার মেরিট থাকতে হবে। কোনো মেরিট নেই, গণহারে মামলা দিয়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের ধরতে গিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যাতে বন্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব ব্যবসায়ী দেশের বাইরে টাকা পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যারা এ ধরনের কাজ করেননি তাদের যেন হয়রানি না করা হয়।
ফারুক হাসান বলেন, ইকোনমি চালু রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরো শক্ত হতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে সাপ্লাই চেইনটা ঠিক রাখতে পারেন, তার জন্য পুলিশ সিকিউরিটি, সেফটি দিতে হবে। যেকোনো আন্দোলন হলে যেন সামাল দিতে পারে সেই সক্ষমতা থাকতে হবে।
দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি আমিন হেলালী বলেন, যারা ব্যবসা করছেন তাদের দেশেই পাওয়া যাচ্ছে, আর যারা লুট করছেন তারা পালিয়েছেন। লুটপাটকারীদের চাপটা ব্যবসায়ীদের ওপর আসছে, এটা হতে পারে না। এভাবে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবেন না। তখন ব্যবসা ছেড়ে দেবেন। ফলে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম হায়দার বলেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীদের নামে হয়রানিমূলক মামলা আমরা আশা করি না। যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হোক এবং বিচার হোক। না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না।