ঢাকা ০৭:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মারা গেলেন ভারতের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

বাম রাজনীতির নক্ষত্র পতন

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:২৩:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪ ৪৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ৮০ বছর বয়সে পাম অ্যাভিনিউয়ের নিজের ফ্ল্যাটেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কয়েকদিন থেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন এই রাজনীতিবীদ।

শারীরিক সমস্যার কারণে ১১ বছর ধরে ঘরবন্দি ছিলেন দেশটির সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী। সিওপিডি-তে ভুগছিলেন তিনি। একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়েছিলো তাকে।

১৯৪৪-এ উত্তর কলকাতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১-এ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ১৯৬৪-তে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বাংলা ভাষায় স্নাতক পাশ করেন তিনি। স্কুলজীবনেই এনসিসি-তে যোগদান করেন। কলেজ জীবনেও এনসিসি-র ক্যাডেট (নৌ শাখা) ছিলেন। কলেজ জীবনে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন। এরপর সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি ও সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরোর সদস্য হন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত প্রথম বাম সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৯-তে উপমুখ্যমন্ত্রীর হন।

এরপর ২০০০-তে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জ্যোতি বসু সরে দাঁড়ালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৬ থেকে ২০১১, পর পর দুবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে ২০১১-তে প্রবল তৃণমূল হাওয়ায় নিজের দীর্ঘদিনের গড় যাদবপুরেই পরাজিত হন তিনি।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার চড়াই উৎরাই এসেছে তার। ছয়ের দশকে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন বামফ্রন্টের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্তের চোখে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তার। ছয়ের দশকে পার্টির সদস্যপদ পান। পরে রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলী, কেন্দ্রীয় কমিটি ক্রমে পলিটব্যুরোর সদস্য হন। সাতের দশকে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ এই রাজনীতিবীদদ।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ১৯৭৭ সালে কাশীপুর বিধানসভা থেকে নির্বাচনে লড়াই করেন। জিতে বিধায়ক হন। ১৯৮৭ সালে প্রথমবার যাদবপুর বিধানসভার প্রার্থী হন। টানা ২৪ বছর ওই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পরিবর্তনের হাওয়ায় ২০১১ সালে তার মন্ত্রিসভার আমলা-রাজনীতিবিদ মণীশ গুপ্তর কাছে পরাজিত হতে হয় বর্ষীয়ান রাজনীতিককে। এর আগে বাংলার রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের কেন্দ্রে ভোটে লড়ে হেরে যাওয়ার রেকর্ড ছিল একমাত্র প্রফুল্লচন্দ্র সেনের। ২০১১ সালে সেই তালিকায় চলে আসেন বুদ্ধবাবুও।

২০১২ সাল থেকে রাজনীতির সাথে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। ওই বছরই শারীরিক অসুস্থতার দরুন পার্টি কংগ্রেসে যেতে পারেননি । এরপর একে একে পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য কমিটির সদস্যপদ ছেড়ে দেন। ২০১৬ সালে তাকে ফের সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়। কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। সেইসময় দলের অনুমতি ছাড়াই রাহুল গান্ধীর সাথে একই মঞ্চে হাজির হন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

মারা গেলেন ভারতের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

বাম রাজনীতির নক্ষত্র পতন

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:২৩:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪

ভারতের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ৮০ বছর বয়সে পাম অ্যাভিনিউয়ের নিজের ফ্ল্যাটেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কয়েকদিন থেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন এই রাজনীতিবীদ।

শারীরিক সমস্যার কারণে ১১ বছর ধরে ঘরবন্দি ছিলেন দেশটির সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী। সিওপিডি-তে ভুগছিলেন তিনি। একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়েছিলো তাকে।

১৯৪৪-এ উত্তর কলকাতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১-এ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ১৯৬৪-তে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বাংলা ভাষায় স্নাতক পাশ করেন তিনি। স্কুলজীবনেই এনসিসি-তে যোগদান করেন। কলেজ জীবনেও এনসিসি-র ক্যাডেট (নৌ শাখা) ছিলেন। কলেজ জীবনে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন। এরপর সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি ও সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরোর সদস্য হন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত প্রথম বাম সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৯-তে উপমুখ্যমন্ত্রীর হন।

এরপর ২০০০-তে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জ্যোতি বসু সরে দাঁড়ালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৬ থেকে ২০১১, পর পর দুবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে ২০১১-তে প্রবল তৃণমূল হাওয়ায় নিজের দীর্ঘদিনের গড় যাদবপুরেই পরাজিত হন তিনি।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার চড়াই উৎরাই এসেছে তার। ছয়ের দশকে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন বামফ্রন্টের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্তের চোখে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তার। ছয়ের দশকে পার্টির সদস্যপদ পান। পরে রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলী, কেন্দ্রীয় কমিটি ক্রমে পলিটব্যুরোর সদস্য হন। সাতের দশকে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ এই রাজনীতিবীদদ।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ১৯৭৭ সালে কাশীপুর বিধানসভা থেকে নির্বাচনে লড়াই করেন। জিতে বিধায়ক হন। ১৯৮৭ সালে প্রথমবার যাদবপুর বিধানসভার প্রার্থী হন। টানা ২৪ বছর ওই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পরিবর্তনের হাওয়ায় ২০১১ সালে তার মন্ত্রিসভার আমলা-রাজনীতিবিদ মণীশ গুপ্তর কাছে পরাজিত হতে হয় বর্ষীয়ান রাজনীতিককে। এর আগে বাংলার রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের কেন্দ্রে ভোটে লড়ে হেরে যাওয়ার রেকর্ড ছিল একমাত্র প্রফুল্লচন্দ্র সেনের। ২০১১ সালে সেই তালিকায় চলে আসেন বুদ্ধবাবুও।

২০১২ সাল থেকে রাজনীতির সাথে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। ওই বছরই শারীরিক অসুস্থতার দরুন পার্টি কংগ্রেসে যেতে পারেননি । এরপর একে একে পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য কমিটির সদস্যপদ ছেড়ে দেন। ২০১৬ সালে তাকে ফের সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়। কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। সেইসময় দলের অনুমতি ছাড়াই রাহুল গান্ধীর সাথে একই মঞ্চে হাজির হন তিনি।