ঢাকা ১১:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে : রেবেকা

আজিজুল হক সরকার,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ৯৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পোশাকশিল্পের সোনালি স্বপ্নের সাথে নিজের জীবনের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে দুঃস্বপ্নের কালো আঁধারে ছেয়ে গেছে রেবেকার জীবন। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দুর্ঘটনায় দু’পা হারিয়েছেন রেবেকা খাতুন (৩০)। সাথে হারিয়েছেন মা, দাদি, ফুফাতো ভাই ও বোনকেও।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের সকাল ৮.৫৯ মিনিটের ট্র্যাজেডি। এরই মধ্যে কেটে গেছে ১১টি বছর । রানা প্লাজা থেকে এবং শরীরের দু’অঙ্গহানি’র ক্ষতিপূরণ এখনো মেলেনি। রেবেকার সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে।


দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ২নং আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়ার মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেবেকা খাতুন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় গার্মেন্টস শ্রমিক রেবেকা খাতুন বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে আজ চির পঙ্গু। এখন দু’পা হারিয়ে চার দেয়ালে বন্দিজীবন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই পা হারানো রেবেকা খাতুনের বাড়িতে স্বামী নেই, গেছেন দিনমজুর করতে। সে তার ৪ বছরের ছেলে মাদানী আন্নুর এবং ১০ বছরের কন্যা সন্তান সিজরাতুন মুনতাহার (৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে) কে পাশে নিয়ে বসে আছে।বড় জা আনোয়ারা এসে কাজে সহযোগিতা করছেন।

রেবেকার দুঃসহ স্মৃতি: রেবেকা জানালেন,নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানার বালিচান গ্রামে তাদের বাড়ি। ছোট বেলায় মায়ের কোলে থাকাবস্থায় বাবা মারা যায়। কষ্টের সংসার চালাতে মা হিমশিম খাওয়াতে মা আবার বিয়ে করেন। নতুন বাবা আমাকে দেখতে পারতো না। সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত। ওই দুঃখ-কষ্টের কারণে সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে মা, দাদি, ফুপু, ফুপাতো ভাই -বোন মিলে ৬ জন সাভারে চাকরি করতে যাই। সেখানেই আমার স্বামী মোস্তাফিজুর সাথে পরিচয়। রাজ মিস্ত্রির কাজ করতেন এবং আমাদের পাশাপাশি থাকতেন। কখনো কথা হতো, প্রসঙ্গ ক্রমে ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ায় সৎ বাবার সংসারে দুঃখ-কষ্টের কথগুলো শুনতে শুনতে আমার স্বামী সেই দুঃখের অংশীদার হতে আমাকে বিয়ে কারার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিয়ে করে। বিয়ের ৩ বছরের দিকে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ঘটে। আমি দুই পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হলাম। সেই দুঃখের অংশীদার (পঙ্গু স্ত্রীকে নিয়ে) যে আমার স্বামীকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে তা কখনো ভাবিনি…(অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে)!

সেদিনের দুঃসহ বর্ণনায় রেবেকা বলেন, রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার দিন সকাল ৯টায় মা আমাকে খাবার জন্য ডাকে। হাতে একটা ছোট কাজ থাকায় মাকে বললাম, তুমি যাও আমি আসছি… । বলার এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রেবেকার সুখের সংসার হয়ে যায় লন্ডভন্ড। ঘটনার পর তার জ্ঞানছিল না। দুইদিন পর জ্ঞান ফিরে এলে দেখেন পায়ের ওপর বিম চাপা পড়েছে, অন্ধকার এক জায়গায় পড়ে আছেন তিনি। তখন চিৎকার করতে থাকলে কয়েকজন উদ্ধারকর্মী কাছেআসেন। কিন্তু বড় বোঝা তার শরীরে চাপা থাকায় তখনো উদ্ধার করতে পারেননি উদ্ধার কর্মীরা। এ সময় রেবেকা উদ্ধারকর্মীদের তার স্বামীর মুঠোফোন নম্বর দেন। পরে তার স্বামী এসে উদ্ধার কর্মীদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেবেকাকে চিকিৎসা নিতে হয়। বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় এক বছর তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়।

পঙ্গু রেবেকা খাতুন বলেন, দুই পায়ের হাড় বেড়ে যাওয়ায় অত্যধিক যন্ত্রণা-কষ্ট হয়। দুই পা ৪ বার করে মোট ৮ বার কাটা হয়েছে। ১১ মাস ১৭ দিন ঢাকার শ্যামলী পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসায় থাকতে হয়েছে। অপরেশন করতে তখন ৯০ ব্যাগ রক্ত লেগেছে। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে হলে আজও বুকটা কেঁদে ওঠে.. এই হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলছিলেন রানাপ্লাজা দুর্ঘটনায় পঙ্গু রেবেকা।

রেবেকার স্বামী মোস্তাফিজুর বলেন,১০/১২ বছর বয়সে ঢাকায় আমি রাজ মিস্ত্রির কাজ করতে যাই। রেবেকাও সাভারে গার্মেন্টসে চাকরি করতো। সেখানেই রেবেকার সাথে পরিচয়। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, আমার মা নেই,রেবেকার বাবা নেই, দুজনেই এতিম। দু’জনের মনেই সীমাহীন কষ্ট! তাই এতিমে এতিমে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের ক’মাসপরই এই মর্মান্তিক ট্রাজেডি। পঙ্গু স্ত্রীকে দেখাশুনার জন্য আমি বাইরে কাজ করতে পারি না। প্রস্রাব-পায়খানাকরা, বাচ্চাদের সামলানোস হঘর-সংসারের সব কাজে সহযোগিতা করতে হয়। স্বামীর সহায়তা ছাড়া তার একদিনও চলে না। ব্র্যাক আর সরকারি ওই অর্থ ছাড়া কোনো সহায়তা পাননি। তিনি সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের নীতিমালার নিয়ম অনুযায়ী শরীরের দুই অঙ্গহানি ঘটলে ১৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করেন। যেখানে রেবেকা পেয়েছেন ১০ লাখ।

উল্লেখ্য ,সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের সহায়তা হিসেবে (নীতিমালার) শরীরের দুই অঙ্গহানি ঘটলে ১৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র; ডান হাত -ডান পা অঙ্গহানি হলে ১২ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র এবং বাম হাত-বাম পা অঙ্গহানি হলে ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র পাওয়ার কথা। কিন্তু রেবেকার দুই পা হারিয়েও পেয়েছেন মাত্র ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। সেই সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ ৩ মাস অন্তর মাসে ৮ হাজার ৬শ’ করে পাচ্ছেন বলে জানালেন রেবেকা। রেবেকা আক্ষেপ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে দু’পাহারানোর জন্য ১৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র পাবার বিষয়টি আবারও পুনর্বিবেচনার আরজি করেন।

আলাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.নাজমুস সাকির বাবলু বলেন, আমার ইউনিয়নের এই ঘটনাটি হৃদয় বিদারক! পঙ্গুত্ব বরণকারী রেবেকার জন্য সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সমাজের জন্যও কিছু করা দরকার,আমি সহায়তা করার চেষ্টা করবো।তার জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগবে।

ব্র্যাক দিনাজপুর জেলা সমন্বয়ক অমল কুমার দাম বলেন, বেসরকারি সংস্থা ব্রাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের আওতায় ব্রাক-এর পক্ষ থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে রেবেকার জন্য ৭ লাখ ২১হাজার টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি, চিকিৎসা, কিছু অনুদান দিয়েছে এবং ঘোড়াঘাটেও একজনের জন্য করা হয়েছে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় পরবর্তীতে এই প্রজেক্টটি আর সম্প্রসারণ হয়নি।

ফুবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো.আলকামাহতমাল বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো রেবেকা খাতুনের বিষয়টি আমার এখানে (ফুলবাড়ীতে) নতুন আসায় বিস্তারিত জানা নেই। শুনেছি তাকে বাড়ি-কিছু অর্থ দেয়া হয়েছে।বিস্তারিত জেনে আরও সহায়তার বিষয়টি যদি করা যায় আমি তা বিশেষ বিবেচনায় দেখবো।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, আপাতত রানা প্লাজা ট্্র্যাজিডি দুর্ঘটনায় আহতদের সহায়তা নিয়ে কোনো আপডেট নেই। যদি থাকে সহায়তা করার মতো, সে ব্যাপারে আমরা উদার দৃষ্টিরা খবো। কেননা,মানবিকতার বিষয়টি অবশ্যই দেখা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে : রেবেকা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

পোশাকশিল্পের সোনালি স্বপ্নের সাথে নিজের জীবনের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে দুঃস্বপ্নের কালো আঁধারে ছেয়ে গেছে রেবেকার জীবন। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দুর্ঘটনায় দু’পা হারিয়েছেন রেবেকা খাতুন (৩০)। সাথে হারিয়েছেন মা, দাদি, ফুফাতো ভাই ও বোনকেও।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের সকাল ৮.৫৯ মিনিটের ট্র্যাজেডি। এরই মধ্যে কেটে গেছে ১১টি বছর । রানা প্লাজা থেকে এবং শরীরের দু’অঙ্গহানি’র ক্ষতিপূরণ এখনো মেলেনি। রেবেকার সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে।


দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ২নং আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়ার মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেবেকা খাতুন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় গার্মেন্টস শ্রমিক রেবেকা খাতুন বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে আজ চির পঙ্গু। এখন দু’পা হারিয়ে চার দেয়ালে বন্দিজীবন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই পা হারানো রেবেকা খাতুনের বাড়িতে স্বামী নেই, গেছেন দিনমজুর করতে। সে তার ৪ বছরের ছেলে মাদানী আন্নুর এবং ১০ বছরের কন্যা সন্তান সিজরাতুন মুনতাহার (৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে) কে পাশে নিয়ে বসে আছে।বড় জা আনোয়ারা এসে কাজে সহযোগিতা করছেন।

রেবেকার দুঃসহ স্মৃতি: রেবেকা জানালেন,নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানার বালিচান গ্রামে তাদের বাড়ি। ছোট বেলায় মায়ের কোলে থাকাবস্থায় বাবা মারা যায়। কষ্টের সংসার চালাতে মা হিমশিম খাওয়াতে মা আবার বিয়ে করেন। নতুন বাবা আমাকে দেখতে পারতো না। সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত। ওই দুঃখ-কষ্টের কারণে সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে মা, দাদি, ফুপু, ফুপাতো ভাই -বোন মিলে ৬ জন সাভারে চাকরি করতে যাই। সেখানেই আমার স্বামী মোস্তাফিজুর সাথে পরিচয়। রাজ মিস্ত্রির কাজ করতেন এবং আমাদের পাশাপাশি থাকতেন। কখনো কথা হতো, প্রসঙ্গ ক্রমে ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ায় সৎ বাবার সংসারে দুঃখ-কষ্টের কথগুলো শুনতে শুনতে আমার স্বামী সেই দুঃখের অংশীদার হতে আমাকে বিয়ে কারার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিয়ে করে। বিয়ের ৩ বছরের দিকে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ঘটে। আমি দুই পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হলাম। সেই দুঃখের অংশীদার (পঙ্গু স্ত্রীকে নিয়ে) যে আমার স্বামীকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে তা কখনো ভাবিনি…(অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে)!

সেদিনের দুঃসহ বর্ণনায় রেবেকা বলেন, রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার দিন সকাল ৯টায় মা আমাকে খাবার জন্য ডাকে। হাতে একটা ছোট কাজ থাকায় মাকে বললাম, তুমি যাও আমি আসছি… । বলার এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রেবেকার সুখের সংসার হয়ে যায় লন্ডভন্ড। ঘটনার পর তার জ্ঞানছিল না। দুইদিন পর জ্ঞান ফিরে এলে দেখেন পায়ের ওপর বিম চাপা পড়েছে, অন্ধকার এক জায়গায় পড়ে আছেন তিনি। তখন চিৎকার করতে থাকলে কয়েকজন উদ্ধারকর্মী কাছেআসেন। কিন্তু বড় বোঝা তার শরীরে চাপা থাকায় তখনো উদ্ধার করতে পারেননি উদ্ধার কর্মীরা। এ সময় রেবেকা উদ্ধারকর্মীদের তার স্বামীর মুঠোফোন নম্বর দেন। পরে তার স্বামী এসে উদ্ধার কর্মীদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেবেকাকে চিকিৎসা নিতে হয়। বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় এক বছর তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়।

পঙ্গু রেবেকা খাতুন বলেন, দুই পায়ের হাড় বেড়ে যাওয়ায় অত্যধিক যন্ত্রণা-কষ্ট হয়। দুই পা ৪ বার করে মোট ৮ বার কাটা হয়েছে। ১১ মাস ১৭ দিন ঢাকার শ্যামলী পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসায় থাকতে হয়েছে। অপরেশন করতে তখন ৯০ ব্যাগ রক্ত লেগেছে। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে হলে আজও বুকটা কেঁদে ওঠে.. এই হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলছিলেন রানাপ্লাজা দুর্ঘটনায় পঙ্গু রেবেকা।

রেবেকার স্বামী মোস্তাফিজুর বলেন,১০/১২ বছর বয়সে ঢাকায় আমি রাজ মিস্ত্রির কাজ করতে যাই। রেবেকাও সাভারে গার্মেন্টসে চাকরি করতো। সেখানেই রেবেকার সাথে পরিচয়। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, আমার মা নেই,রেবেকার বাবা নেই, দুজনেই এতিম। দু’জনের মনেই সীমাহীন কষ্ট! তাই এতিমে এতিমে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের ক’মাসপরই এই মর্মান্তিক ট্রাজেডি। পঙ্গু স্ত্রীকে দেখাশুনার জন্য আমি বাইরে কাজ করতে পারি না। প্রস্রাব-পায়খানাকরা, বাচ্চাদের সামলানোস হঘর-সংসারের সব কাজে সহযোগিতা করতে হয়। স্বামীর সহায়তা ছাড়া তার একদিনও চলে না। ব্র্যাক আর সরকারি ওই অর্থ ছাড়া কোনো সহায়তা পাননি। তিনি সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের নীতিমালার নিয়ম অনুযায়ী শরীরের দুই অঙ্গহানি ঘটলে ১৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করেন। যেখানে রেবেকা পেয়েছেন ১০ লাখ।

উল্লেখ্য ,সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের সহায়তা হিসেবে (নীতিমালার) শরীরের দুই অঙ্গহানি ঘটলে ১৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র; ডান হাত -ডান পা অঙ্গহানি হলে ১২ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র এবং বাম হাত-বাম পা অঙ্গহানি হলে ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র পাওয়ার কথা। কিন্তু রেবেকার দুই পা হারিয়েও পেয়েছেন মাত্র ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। সেই সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ ৩ মাস অন্তর মাসে ৮ হাজার ৬শ’ করে পাচ্ছেন বলে জানালেন রেবেকা। রেবেকা আক্ষেপ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে দু’পাহারানোর জন্য ১৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র পাবার বিষয়টি আবারও পুনর্বিবেচনার আরজি করেন।

আলাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.নাজমুস সাকির বাবলু বলেন, আমার ইউনিয়নের এই ঘটনাটি হৃদয় বিদারক! পঙ্গুত্ব বরণকারী রেবেকার জন্য সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সমাজের জন্যও কিছু করা দরকার,আমি সহায়তা করার চেষ্টা করবো।তার জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগবে।

ব্র্যাক দিনাজপুর জেলা সমন্বয়ক অমল কুমার দাম বলেন, বেসরকারি সংস্থা ব্রাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের আওতায় ব্রাক-এর পক্ষ থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে রেবেকার জন্য ৭ লাখ ২১হাজার টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি, চিকিৎসা, কিছু অনুদান দিয়েছে এবং ঘোড়াঘাটেও একজনের জন্য করা হয়েছে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় পরবর্তীতে এই প্রজেক্টটি আর সম্প্রসারণ হয়নি।

ফুবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো.আলকামাহতমাল বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো রেবেকা খাতুনের বিষয়টি আমার এখানে (ফুলবাড়ীতে) নতুন আসায় বিস্তারিত জানা নেই। শুনেছি তাকে বাড়ি-কিছু অর্থ দেয়া হয়েছে।বিস্তারিত জেনে আরও সহায়তার বিষয়টি যদি করা যায় আমি তা বিশেষ বিবেচনায় দেখবো।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, আপাতত রানা প্লাজা ট্্র্যাজিডি দুর্ঘটনায় আহতদের সহায়তা নিয়ে কোনো আপডেট নেই। যদি থাকে সহায়তা করার মতো, সে ব্যাপারে আমরা উদার দৃষ্টিরা খবো। কেননা,মানবিকতার বিষয়টি অবশ্যই দেখা হবে।