ঢাকা ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তামিম হত্যায় নেপথ্যে কারা

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৮:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪ ৫০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এ ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। হাতিরঝিল থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা এসে প্লিজেন্ট প্রপার্টিস লিমিটেডের প্রকৌশলীসহ তিনজনকে আটক করে নিয়ে যান।

রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার মহানগর প্রজেক্টে দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিমের বাড়িতে ঢুকে হত্যায় প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজ লিমিটেডের মালিক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (নারায়ণগঞ্জ) মো. মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। যদিও শেখ রবিউল বিষয়টি অস্বীকার করেন।

জানা গেছে, এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তামিম। যোগ দেন দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগে।

জানা যায়, মহানগর প্রজেক্টের বাড়িটির ৭ তলায় দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন তামিম ও তার পরিবার। প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজ লিমিটেড ডেভেলপার কোম্পানি তাদের ৫টি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তামিমরা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে বছর খানেক আগে একটি মামলাও করা হয়।

ওই বাড়ির ৭সি ফ্ল্যাটটি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (নারায়ণগঞ্জ) উপপরিচালক মো. মামুন, নিজের বলে দাবি করে ডেভেলপার প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজ ও অন্য দুই প্লট মালিকের যোগসাজশে দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

৭সি ফ্ল্যাটের মূল মালিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ বলেন, মো. মামুনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেই। দখলদার মো. মামুন ৭সি ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে দিতে আমাদের নানারকম চাপ প্রয়োগ করত এবং ফ্ল্যাটটির রেজিস্ট্রেশন পাবার জন্য ডেভেলপারের যোগসাজশে আমাদের সকল ফ্ল্যাটের কাজ বন্ধ করে দেন। এমনকি ৭সি ফ্ল্যাটটি না ছাড়লে সে আমাদের ৭বি ফ্ল্যাটও দখল নিবে বলে হুমকি দেয়।

মামলাসূত্রে জানা যায়, মামুন একজন আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হলেও অত্যন্ত অসৎ, উগ্র, পরধন লোভী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারি ব্যক্তি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মামুনের দখলকরা ৭সি ফ্ল্যাটটিতে তার শ্বশুর ফজলুর রহমান থাকত। যিনি সাবেক ডিবিপ্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের শ্বশুর মো. সোলায়মানের ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। তামিমের পরিবারের অভিযোগ, মামুন সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফ্লাট ও জমি মালিকদের জিম্মি করে জোরপূর্বক ফ্লাট দখল করেন। এটা তার আর একটি পেশা। এর আগেও মামুন ডিবি হারুনের শ্বশুর সোলায়মানের সহযোগিতায় ফ্ল্যাট দখলের বাণিজ্য চালিয়েছে। হারুনের সঙ্গে মামুনের সখ্যতা থাকায় থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেয়নি পুলিশ।

এ বিষয়ে মো. মামুনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বেশকয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি এবং অফিসিয়াল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

নিহত তামিমের মামা মাসুদ করিম জানান, বুধবার (৯ অক্টোবর) ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে তামিমদের একটি সমঝোতা হয়। আট তলায় দুটি ফ্ল্যাট তাদের দেওয়ার কথা জানানো হয়। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে আট তলার ফ্ল্যাটে লেবার দিয়ে কিছু কাজ করাচ্ছিলেন তামিম৷ তখন হঠাৎ ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপক আব্দুল লতিফ মির্জা, তার সন্ত্রাসী বাহিনী ফ্ল্যাটে অতর্কিত হামলা চালায়। তামিমকে মারধর করতে থাকে তারা। চিৎকার শুনে তামিমের বড় ভাই সামভির জাহান ইসলাম ছুটে আসলে তাকেও মারধর করে এক পর্যায়ে চলে যায় তারা। তখন জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে সহায়তা চান ভুক্তভোগীরা। এর মধ্যে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তামিম। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মনোয়ারা হাসপাতালে। পরে পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

তবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মৃত্যুর খবর জেনেছি। পুলিশ তদন্ত করে জানুক কারা জড়িত। আমার পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা থাকবে।

হাতিরঝিল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, মহানগর প্রজেক্টের ওই বাড়িটির জমির মালিক তামিমের বাবাসহ মোট তিনজন। তাদের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্বের জের ধরে ওই বাড়িতে ঢোকেন প্লিজেন্ট প্রোপার্টিস নামে ডেভলপার কোম্পানির লোকজন। তাদের সঙ্গে বহিরাগত কয়েকজন ছিলেন।

তারা জমির মালিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তারা তামিমের বুকে কিল-ঘুষি দেন। এরপর তার গলা টিপে ধরেন। তামিম অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়দের কয়েকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে হাতিরঝিল থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা এসে প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজের প্রকৌশলীসহ তিনজনকে আটক করে নিয়ে যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তামিম হত্যায় নেপথ্যে কারা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৮:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪

এ ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। হাতিরঝিল থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা এসে প্লিজেন্ট প্রপার্টিস লিমিটেডের প্রকৌশলীসহ তিনজনকে আটক করে নিয়ে যান।

রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার মহানগর প্রজেক্টে দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিমের বাড়িতে ঢুকে হত্যায় প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজ লিমিটেডের মালিক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (নারায়ণগঞ্জ) মো. মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। যদিও শেখ রবিউল বিষয়টি অস্বীকার করেন।

জানা গেছে, এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তামিম। যোগ দেন দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগে।

জানা যায়, মহানগর প্রজেক্টের বাড়িটির ৭ তলায় দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন তামিম ও তার পরিবার। প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজ লিমিটেড ডেভেলপার কোম্পানি তাদের ৫টি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তামিমরা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে বছর খানেক আগে একটি মামলাও করা হয়।

ওই বাড়ির ৭সি ফ্ল্যাটটি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (নারায়ণগঞ্জ) উপপরিচালক মো. মামুন, নিজের বলে দাবি করে ডেভেলপার প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজ ও অন্য দুই প্লট মালিকের যোগসাজশে দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

৭সি ফ্ল্যাটের মূল মালিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ বলেন, মো. মামুনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেই। দখলদার মো. মামুন ৭সি ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে দিতে আমাদের নানারকম চাপ প্রয়োগ করত এবং ফ্ল্যাটটির রেজিস্ট্রেশন পাবার জন্য ডেভেলপারের যোগসাজশে আমাদের সকল ফ্ল্যাটের কাজ বন্ধ করে দেন। এমনকি ৭সি ফ্ল্যাটটি না ছাড়লে সে আমাদের ৭বি ফ্ল্যাটও দখল নিবে বলে হুমকি দেয়।

মামলাসূত্রে জানা যায়, মামুন একজন আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হলেও অত্যন্ত অসৎ, উগ্র, পরধন লোভী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারি ব্যক্তি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মামুনের দখলকরা ৭সি ফ্ল্যাটটিতে তার শ্বশুর ফজলুর রহমান থাকত। যিনি সাবেক ডিবিপ্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের শ্বশুর মো. সোলায়মানের ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। তামিমের পরিবারের অভিযোগ, মামুন সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফ্লাট ও জমি মালিকদের জিম্মি করে জোরপূর্বক ফ্লাট দখল করেন। এটা তার আর একটি পেশা। এর আগেও মামুন ডিবি হারুনের শ্বশুর সোলায়মানের সহযোগিতায় ফ্ল্যাট দখলের বাণিজ্য চালিয়েছে। হারুনের সঙ্গে মামুনের সখ্যতা থাকায় থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেয়নি পুলিশ।

এ বিষয়ে মো. মামুনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বেশকয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি এবং অফিসিয়াল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

নিহত তামিমের মামা মাসুদ করিম জানান, বুধবার (৯ অক্টোবর) ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে তামিমদের একটি সমঝোতা হয়। আট তলায় দুটি ফ্ল্যাট তাদের দেওয়ার কথা জানানো হয়। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে আট তলার ফ্ল্যাটে লেবার দিয়ে কিছু কাজ করাচ্ছিলেন তামিম৷ তখন হঠাৎ ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপক আব্দুল লতিফ মির্জা, তার সন্ত্রাসী বাহিনী ফ্ল্যাটে অতর্কিত হামলা চালায়। তামিমকে মারধর করতে থাকে তারা। চিৎকার শুনে তামিমের বড় ভাই সামভির জাহান ইসলাম ছুটে আসলে তাকেও মারধর করে এক পর্যায়ে চলে যায় তারা। তখন জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে সহায়তা চান ভুক্তভোগীরা। এর মধ্যে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তামিম। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মনোয়ারা হাসপাতালে। পরে পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

তবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মৃত্যুর খবর জেনেছি। পুলিশ তদন্ত করে জানুক কারা জড়িত। আমার পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা থাকবে।

হাতিরঝিল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, মহানগর প্রজেক্টের ওই বাড়িটির জমির মালিক তামিমের বাবাসহ মোট তিনজন। তাদের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্বের জের ধরে ওই বাড়িতে ঢোকেন প্লিজেন্ট প্রোপার্টিস নামে ডেভলপার কোম্পানির লোকজন। তাদের সঙ্গে বহিরাগত কয়েকজন ছিলেন।

তারা জমির মালিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তারা তামিমের বুকে কিল-ঘুষি দেন। এরপর তার গলা টিপে ধরেন। তামিম অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়দের কয়েকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে হাতিরঝিল থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা এসে প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজের প্রকৌশলীসহ তিনজনকে আটক করে নিয়ে যান।