ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনা/ অতিরিক্ত পণ্য বহনের ঘটনা চাঁপা দিতে সরিয়ে ফেলা হলো সিমেন্ট
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:০৯:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১০৫ বার পড়া হয়েছে
ঝালকাঠির গাবখানে ব্রীজের টোল ঘরের সামনে ১৪ জন নিহতের ঘটনায় ট্রাক চালক ও হেল্পারকে দায়ী করে ঝালকাঠি সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারে নিহতের ভাই মোঃ হাদিউর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।মামলায় অতিরিক্ত সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের লাইসেন্স বিহীন চালক মোঃ আল আমিন হাওলাদার ও হেলপার মো. নাজমুল শেখ এর নাম উলেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এরইমধ্যে পুলিশ চালক ও হেলপারকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
ঝালকাঠির গাবখানে ব্রীজ থেকে টোল ঘরের কাছে বুধবার ( ১৭ এপ্রিল) ট্রাকে অতিরিক্ত সিমেন্ট থাকায় বেশী প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের দাবী। তবে ঝালকাঠি সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ এই দাবীকে অযৌক্তিক জানিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।
এদিকে, অতিরিক্ত সিমেন্ট বোঝাই করে ভারীযানের লাইসেন্স ছাড়াই দ্রুত গতিতে চালিয়ে আসা দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকের সিমেন্ট সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। কারণ অতিরিক্ত সিমেন্ট বোঝাইয়ের বিষয়টি চাপা দিতে এই কৌশল নেওয়া হতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারনা।
গাবখান এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশার ও কালাম হাওলাদারসহ আরও অনেকে জানান, গাবখান ব্রীজের উচ্চতা বেশী হওয়ায় ব্রীজ থেকে টোল ঘর পর্যন্ত এপ্রোচ সড়কের ঢালু বেশী। তাই ভারী যানবাহন নামার সময় গতি বেড়ে যাওয়ায় ব্রীজের কাছে টোল ঘর পর্যন্ত আসতে গতি নিয়ন্ত্রন করা কস্টকর। এই অবস্থায় অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে ভারীযান নামার সময় গতি আরও বেড়ে গিয়ে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও স্থানীয়দের অভিযোগ খুলনা বরিশাল মহাসড়কের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডিজিটাল টোলঘর চালু করা হলে দ্রুত সময়ে যানবাহনের টোল আদায় করা সম্ভব হবে।
স্থানীয়দের এই ধারনা সঠিক নয় জানিয়ে ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান বলেন, ২০০১ সালে নির্মিত এই গাবখান ব্রীজ উদ্বোধনের পর থেকে গত ২৩ বছরে এ ধরনের দুর্ঘটনা এই প্রথম। তাই স্থানীয়দেরও ধারনা যদি সঠিক হতো তা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এখানে আরও ঘটতো।
তিনি বলেন, ৯১৮ মিটারের এই গাবখান ব্রীজের দু’পাশে মোট এপ্রোচ রাস্তা রয়েছে ৪৫৯ মিটার। এরমধ্যে গাবখান ব্রীজ থেকে ঝালকাঠির প্রান্তে এপ্রোচ সড়ক ২৩০ মিটার। এরপর আরও ৩০ মিটার দূরে টোল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তাই দ্রুত গতি সম্পন্ন ভারি যানবাহন টোলঘর পর্যন্ত আসতে গতি নিয়ন্ত্রন করা মোটেই কঠিন কিছু নয়। তাই টোলঘর এপ্রোচ সড়ক থেকে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, তারপরও টোল ঘরটি কিছুটা দূরত্বে সড়িয়ে নেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশপাশি ৭.৩ মিটারের এই মহাসড়কে বরিশালে রূপাতলি থেকে খুলনা পর্যন্ত চার লেনের সড়ক নির্মানের প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে। যা চালু হলে ২৪ মিটারের প্রশস্থ সড়কে ডিজিটাল টোল ঘরসহ অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ায় টোল আদায় সম্ভব হবে।
অপরদিকে, ট্রাকে অতিরিক্ত সিমেন্ট বোঝাই করে খুলনা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার বিষয়টি চাঁপা দিতে মালিক পক্ষ দুর্ঘটনাকবলিত স্থান থেকে ইতিমধ্যেই ১৫০ বস্তা সিমেন্ট সরিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ১ টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় কে বা কারা ট্রলিতে সিমেন্টের বস্তা উঠিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এসময় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সেখানে সেভেন রিং কোম্পানীর সিমেন্ট ভর্তী ট্রলী চালক মোঃ আসিফ জানায়, কিছুক্ষন আগে আরও দুটি ট্রলিতে ১৫০ বস্তা সিমেন্ট এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কে বা কারা এই সিমেন্ট নিয়েছে জানতে চাইলে ট্রলি চালক জানায়, সিমেন্ট কোম্পানীর কর্মকর্তা পরিচয়ে সিমেন্ট নিয়ে গেছে। এসময় আসপাশে আরও কয়েকজন কোম্পানীর লোক পরিচয়ে সেখানে অবস্থান করলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে শটকে পরে।
এ সময় টোল ঘরের কর্মীরা জানায়, আমরা এই সিমেন্ট ট্রলী ভরার সময় বাঁধা দিলে তারা জানায় পুলিশের অনুমুিত নিয়ে তারা এই সিমেন্ট নিচ্ছে। বিষয়টি তাৎক্ষনিকপুলিশ সুপারকে অবহিত করলে থানা থেকে পুলিশ এসে সিমেন্ট ভর্তী ট্রলীটিসহ অবশিষ্ট সিমেন্ট উদ্ধার করে থানায় নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে।
সেখানে উপস্থিত সদর থানার এসআই জুয়েল জানান, ওসি স্যারের নির্দেশে এখানকার সিমেন্ট থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি। এছাড়া সরিয়ে ফেলাসিমেন্ট উদ্ধারের চেষ্টা করছি।
দুর্ঘটনা কবলিত স্থান থেকে এই সিমেন্ট সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে স্থানিয়রা জানায়, ট্রাকে অতিরিক্ত সিমেন্ট বোঝাইয়ের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে মালিক পক্ষ তাদের লোক দিয়ে এই সিমেন্ট সরিয়েছে।
এসব বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার স্থান থেকে ঘটনার আলামত হিসেবে সিমেন্ট ভর্তী ব্যাগগুলো জব্দ করে নিয়ে এসেছি। এছাড়াও সেখান সেখান থেকে আরও কিছু সরিয়ে ফেলা সিমেন্ট উদ্ধার করা হলে জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এখন পর্যন্ত মোট কত ব্যাগ সিমেন্ট জব্দ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন গণনা চলছে।
উলেখ্য, ১৭ এপ্রিল দুর্ঘটানকবলিত ট্রাকটিতে ৪শ বস্তা সিমেন্ট রয়েছে বলে ট্রাক চালকের রাত দিয়ে পুলিশ সুত্র জানায়। একটি পরিবহণ সূত্রের দাবী অনুযায়ী দুর্ঘটনা বলিত ১০ টনের ট্রাকটিতে ২শ বস্তা সিমেন্ট বহনের ক্ষমতা ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত সমেন্ট বহনের কারনে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ট্রাকটি এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদী এই মামলায় অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করে লাইসেন্সবিহীন ট্রাকের চালক এই দুর্ঘটা ঘটিয়েছে বলে উলেখ করা হয়।
মামলায় ঝালকাঠি ও রাজাপুর এলাকার ৯ জনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে। ঝালকাঠি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।