ঢাকা ০৯:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খল-দূষণে মরছে বারনই নদী

সোহরাব হোসেন সৌরভ, রাজশাহী
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:২০:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪ ১৫৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বারনই নদী। এর উৎপত্তি নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ের একটি বিল থেকে। তানোর উপজেলার মধ্য দিয়ে শিবনদী নাম ধারণ করে পবা উপজেলার বাগধানী এলাকায় এসে এই নদীটির নাম হয়েছে বারনই। দখল আর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্যে মৃতপ্রায় এই নদীটি । ড্রেজিং না করায় ননাব্যতা হারিয়েছে নদীটি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য সরাসরি পড়ছে নদীতে। এর ফলে নদীর ভারসাম্য এখন হুমকির মুখে।

নগরীর তরল বর্জ্য বর্তমানে সিটি পশু হাটের পার্শ্বের ড্রেন দিয়ে দুয়ারী খালে এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবনের পেছনে পবা গাঙ্গপাড়ার গাঙ্গদিয়ে বায়া বাজারের পাশের খালে ফেলা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে নওহাটায় বারনই নদীতে গিয়ে পড়ছে। এই বিশাক্ত পানির মধ্যে রয়েছে শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এর বর্জ্য, বিসিকসহ অন্যান্য মিল-কারখানার কেমিক্যাল বর্জ্য, নগরীর পয়ঃনিষ্কাশনের বিষাক্ত বর্জ্য। এসব কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থযুক্ত পানি প্রতিনিয়তই পবা উপজেলার কুজকাই খাল, পাকুড়িয়া, দুয়ারী ক্যানেল, বায়া- মহনন্দখালী খাল হয়ে বারানই নদীতে এসে পড়ছে।

নদীপাড়ের মানুষ এক সময় এই নদীর পানি ব্রবহার করতেন। কিন্তু এখন এই নদীর পানি আর ব্যবহার করা যায় না। শুধু তাই নয়, দূষিত এই পানিতে মাছও বাচঁতে পারে না।

এদিকে, নদীর দখল করে মাছ শিকারের জন্য পানি আটকানো হচ্ছে। এতে করে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। দখলে ফরে নদী সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা, পুঠিয়া উপজেলার এবং নাটোরের ২টি উপজেলার বারনই নদী পাড়ের গ্রামগুলোর মানুষেরা নদরে পানি ব্যবহারের ফলে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

পুঠিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আকরাম আলী বলেন, এই নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় নৌকা,ছোট ট্রলার চলাচল করতো। সেই সময়ে আমাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো এই নদী। এই নদী দিয়ে আমরা ভবানীগঞ্জ, বাগমারা বিভিন্ন পণ্য নিয়ে গেছি। কিন্তু কালের বিব্রতনে এখন এই নদী হারিয়ে যাচ্ছে। নদীটি বাচাঁতে হলে খুব শ্রীঘই নদী ড্রেজিং করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে।

পিল্লাপাড়া এলাকার আয়েশা বেগম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে এই নদীর পানি ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন আপনারা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন এই নদী নদীর পানি থেকে দূর্গন্ধ বের হয়। এই নদীর পানিতে গোসল করলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা হয় গায়ে চুলকানী বের হয়।

পবা উপজেলার সেনেটারী ইন্সপেক্টর জালাল আহম্মেদ বলেন, তরল বর্জ্যরে কারনে পবার বায়া ও দুয়ারি ২টি খালসহ বারনই নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। দূষিত পানির কারনে নদীপাড়ের মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, রাজশাহী মহানগরীর তরল বর্জ্য পবার যে দুটি খালে ফেলা হচ্ছে সে দুটির মধ্যে বায়া এলাকাটির নাম বারাহী নদী এবং দুয়ারীটির নাম বিলুপ্ত নবগঙ্গা নদী। এই দুটি নদী বেয়ে নগরীর তরল বর্জ্য গিয়ে পড়ছে নওহাটার বারনই নদীতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

খল-দূষণে মরছে বারনই নদী

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:২০:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

বারনই নদী। এর উৎপত্তি নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ের একটি বিল থেকে। তানোর উপজেলার মধ্য দিয়ে শিবনদী নাম ধারণ করে পবা উপজেলার বাগধানী এলাকায় এসে এই নদীটির নাম হয়েছে বারনই। দখল আর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্যে মৃতপ্রায় এই নদীটি । ড্রেজিং না করায় ননাব্যতা হারিয়েছে নদীটি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য সরাসরি পড়ছে নদীতে। এর ফলে নদীর ভারসাম্য এখন হুমকির মুখে।

নগরীর তরল বর্জ্য বর্তমানে সিটি পশু হাটের পার্শ্বের ড্রেন দিয়ে দুয়ারী খালে এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবনের পেছনে পবা গাঙ্গপাড়ার গাঙ্গদিয়ে বায়া বাজারের পাশের খালে ফেলা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে নওহাটায় বারনই নদীতে গিয়ে পড়ছে। এই বিশাক্ত পানির মধ্যে রয়েছে শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এর বর্জ্য, বিসিকসহ অন্যান্য মিল-কারখানার কেমিক্যাল বর্জ্য, নগরীর পয়ঃনিষ্কাশনের বিষাক্ত বর্জ্য। এসব কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থযুক্ত পানি প্রতিনিয়তই পবা উপজেলার কুজকাই খাল, পাকুড়িয়া, দুয়ারী ক্যানেল, বায়া- মহনন্দখালী খাল হয়ে বারানই নদীতে এসে পড়ছে।

নদীপাড়ের মানুষ এক সময় এই নদীর পানি ব্রবহার করতেন। কিন্তু এখন এই নদীর পানি আর ব্যবহার করা যায় না। শুধু তাই নয়, দূষিত এই পানিতে মাছও বাচঁতে পারে না।

এদিকে, নদীর দখল করে মাছ শিকারের জন্য পানি আটকানো হচ্ছে। এতে করে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। দখলে ফরে নদী সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা, পুঠিয়া উপজেলার এবং নাটোরের ২টি উপজেলার বারনই নদী পাড়ের গ্রামগুলোর মানুষেরা নদরে পানি ব্যবহারের ফলে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

পুঠিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আকরাম আলী বলেন, এই নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় নৌকা,ছোট ট্রলার চলাচল করতো। সেই সময়ে আমাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো এই নদী। এই নদী দিয়ে আমরা ভবানীগঞ্জ, বাগমারা বিভিন্ন পণ্য নিয়ে গেছি। কিন্তু কালের বিব্রতনে এখন এই নদী হারিয়ে যাচ্ছে। নদীটি বাচাঁতে হলে খুব শ্রীঘই নদী ড্রেজিং করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে।

পিল্লাপাড়া এলাকার আয়েশা বেগম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে এই নদীর পানি ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন আপনারা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন এই নদী নদীর পানি থেকে দূর্গন্ধ বের হয়। এই নদীর পানিতে গোসল করলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা হয় গায়ে চুলকানী বের হয়।

পবা উপজেলার সেনেটারী ইন্সপেক্টর জালাল আহম্মেদ বলেন, তরল বর্জ্যরে কারনে পবার বায়া ও দুয়ারি ২টি খালসহ বারনই নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। দূষিত পানির কারনে নদীপাড়ের মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, রাজশাহী মহানগরীর তরল বর্জ্য পবার যে দুটি খালে ফেলা হচ্ছে সে দুটির মধ্যে বায়া এলাকাটির নাম বারাহী নদী এবং দুয়ারীটির নাম বিলুপ্ত নবগঙ্গা নদী। এই দুটি নদী বেয়ে নগরীর তরল বর্জ্য গিয়ে পড়ছে নওহাটার বারনই নদীতে।