সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এনবিআরের মতিউর
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪৩:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪ ১৩৫ বার পড়া হয়েছে
ছাগলকাণ্ডের ঘটনায় ফেঁসে গেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মো. মতিউর রহমান। ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত কাণ্ডের পর বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এই সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এরমধ্যে বেরিয়ে এসেছে তার সম্পদের তথ্য। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মতিউরের জ্ঞাত এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য জানতে মাঠে নেমেছে।
বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম হাওলাদারের ছেলে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান। শুরুতে ১৯৯০ সালে চাকরি নেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনে। এরপর ১৯৯৩ সালে ১১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ‘কাস্টমস ক্যাডার’ হিসেবে যোগ দেন। ২০১৫ সালে কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পান। মতিউর রহমান ব্রাসেলসে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার, ভ্যাট কমিশনারসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের (সিইভিটি) প্রেসিডেন্ট।
মতিউর রহমানের নামে বিশাল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৭/এ সড়কের ৩৮৪ নম্বর বাড়িতে স্ত্রীর নামে ৫০১ নম্বর ফ্ল্যাট। একই ব্লকের এক নম্বর সড়কের ৫১৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৭ তলা বাড়ি। যার দাম ৪০ কোটি টাকা। এ বাড়ির দোতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন মতিউর রহমান।
এছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর এলাকার পাশেই ৩০০ বিঘা জমির ওপর গ্লোবাল জুতার ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান। ফ্যাক্টরিতে দেশি-বিদেশি প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ করে।
জানা গেছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মতিউর রহমান, তার স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের নামে রয়েছে ৪০টি প্লট। নরসিংদীর বেলাবতে রয়েছে ৪০ বিঘা জমির ওপর বিলাসবহুল রিসোর্ট। রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে শাহবুদ্দিন পার্কের উল্টোদিকে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের একটি ভবনে ৪টি ফ্ল্যাটও । এর প্রতিটির দাম ৫ কোটি টাকা করে। গুলশানের শান্তা প্রোপার্টিজের একাধিক প্রজেক্টে রয়েছে আটটি ফ্ল্যাট। গোয়েন্দা তথ্যমতে, মতিউরের একটি ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ১১৭ কোটি টাকা।
এছাড়াও গাজীপুর সদর, রাজধানীর খিলগাঁও মৌজায় বিভিন্ন দাগে ৪৭ শতাংশ জমি। সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ৮টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে এই কর্মকর্তার। যার দাম প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় রয়েছে ১৪ শতাং। গাজীপুর সদরে ৪৮ দশমিক ১৬ শতাংশ ও অন্য দাগে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে। ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে গাজীপুরে ৪৫ শতাংশ জমির খবর পাওয়া গেছে। গ্লোবাল সুজ লিমিটেড নামে গাজীপুরে রয়েছে ৭ খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি। এর মূল্য ৯০ কোটি টাকা।
এখানে শেষ নয়। রাজধানীর পুবাইলে ৪০ বিঘা জমিতে ‘আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট’ নামে একটি রিসোর্ট রয়েছে মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজের। পুবাইলের খিলগাঁও মৌজায় আরো ৬০ বিঘা জমি রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মতিউর রহমানের বক্তব্য নিতে মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় স্ত্রী ব্যাংক কর্মকর্তা। তাদের নামেও রয়েছে অঢেল সম্পদ।
আরও জানা গেছে, শুধু দেশে নয়, বিদেশে বাড়ি রয়েছে মতিউরের। তার ছেলের রয়েছে বিশ্বের নামিদামী ব্র্যান্ডের গাড়ির কালেকশন। এসব বিষয়ে এরমধ্যে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।