ঢাকা ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুলে আসতে ভালো লাগে না”খোলা মাঠে চলছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠদান

পাবনা প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫ ৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বামনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে পাঠগ্রহণ করছে দ্বিতীয় শ্রেণির বেশ কিছু শিক্ষার্থী। ক্লাস চলাকালীন রুপা খাতুন নামের শ্রেণি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করছিলেন, ‘স্কুলে এসে কেমন লাগে, ক্লাস করতে কেমন লাগে?’ সঙ্গে সঙ্গেই সব শিক্ষার্থী বলে ওঠে, ‘স্কুলে আসতে ভয় লাগে’! 

এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার ভয় গ্রাস করেছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, এমন ভয় গ্রাস করছে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যেও। যে কারণে বছরের শুরুতে পাঠগ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। 

প্রতিদিনই শিক্ষকরা বাড়ি থেকে স্কুলে ডেকে আনছেন শিক্ষার্থীদের। আর অনেকটা বাধ্য হয়েই স্কুলের খোলা মাঠে পাঠদান দিচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে দীর্ঘসময় রোদের আলোয় বসে পড়ালেখা করতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে। অনেকেই হচ্ছে অসুস্থ।

পাঠদান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওই স্কুলের শিক্ষকদের। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে এমন অবস্থা চলে আসলেও স্কুলের নতুন ভবন তৈরির ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। শুধু কী তাই, স্কুলটি রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় প্রায়শই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। অতিসম্প্রতি আহত হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষার্থী।

স্কুল সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৭১ সালে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ৯৩ নম্বর বামনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এরপর সেখানে তিনকক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি হয়। 

২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকে স্কুলে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রতিদিনই শ্রেণিকক্ষের ছাদ থেকে খুলে পড়ে পলেস্তারা। জানালা-দরজারও অবস্থাও বেহাল। শৌচাগারের অবস্থাও শোচনীয়।

বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী দুই শিফটে পাঠগ্রহণ করে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় সিঁড়ি ঘরের ছোট্ট কুটুরির মধ্যে গাদাগাদি হয়ে ক্লাস করে শিশু শিক্ষার্থীরা। আর ভাঙ্গাচোরা এবং ভবনের বেহাল অবস্থার কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা থাকেন আতঙ্কে।

দ্বিতীয় শ্রেণির শান্ত, ইছা, স্বপ্না, রুপাইয়া নামে কয়েকজন শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে বলে, ঘরের মধ্যে (শ্রেণিকক্ষ) বসতে ভয় লাগে। মাঝে মধ্যেই সিমেন্টের স্তূপ খুলে পড়ে। গরমের দিনে ফ্যান চালানো যায় না। আবার শীতের দিনেও রোদের মধ্যে বেশি সময় ধরে ক্লাস করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়।

বামনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম স্বপন বলেন, স্কুল ভবনটা অনেক পুরোনো। তারপর শ্রেণিকক্ষ সংকট তো রয়েছেই। বার বার উপজেলা শিক্ষা অফিসে একটি ভবন ও প্রাচীরের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে স্কুলে শিক্ষার্থী ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই স্কুলের ভবনের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি লিখিত আকারে জানানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

স্কুলে আসতে ভালো লাগে না”খোলা মাঠে চলছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠদান

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বামনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে পাঠগ্রহণ করছে দ্বিতীয় শ্রেণির বেশ কিছু শিক্ষার্থী। ক্লাস চলাকালীন রুপা খাতুন নামের শ্রেণি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করছিলেন, ‘স্কুলে এসে কেমন লাগে, ক্লাস করতে কেমন লাগে?’ সঙ্গে সঙ্গেই সব শিক্ষার্থী বলে ওঠে, ‘স্কুলে আসতে ভয় লাগে’! 

এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার ভয় গ্রাস করেছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, এমন ভয় গ্রাস করছে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যেও। যে কারণে বছরের শুরুতে পাঠগ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। 

প্রতিদিনই শিক্ষকরা বাড়ি থেকে স্কুলে ডেকে আনছেন শিক্ষার্থীদের। আর অনেকটা বাধ্য হয়েই স্কুলের খোলা মাঠে পাঠদান দিচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে দীর্ঘসময় রোদের আলোয় বসে পড়ালেখা করতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে। অনেকেই হচ্ছে অসুস্থ।

পাঠদান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওই স্কুলের শিক্ষকদের। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে এমন অবস্থা চলে আসলেও স্কুলের নতুন ভবন তৈরির ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। শুধু কী তাই, স্কুলটি রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় প্রায়শই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। অতিসম্প্রতি আহত হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষার্থী।

স্কুল সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৭১ সালে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ৯৩ নম্বর বামনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এরপর সেখানে তিনকক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি হয়। 

২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকে স্কুলে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রতিদিনই শ্রেণিকক্ষের ছাদ থেকে খুলে পড়ে পলেস্তারা। জানালা-দরজারও অবস্থাও বেহাল। শৌচাগারের অবস্থাও শোচনীয়।

বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী দুই শিফটে পাঠগ্রহণ করে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় সিঁড়ি ঘরের ছোট্ট কুটুরির মধ্যে গাদাগাদি হয়ে ক্লাস করে শিশু শিক্ষার্থীরা। আর ভাঙ্গাচোরা এবং ভবনের বেহাল অবস্থার কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা থাকেন আতঙ্কে।

দ্বিতীয় শ্রেণির শান্ত, ইছা, স্বপ্না, রুপাইয়া নামে কয়েকজন শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে বলে, ঘরের মধ্যে (শ্রেণিকক্ষ) বসতে ভয় লাগে। মাঝে মধ্যেই সিমেন্টের স্তূপ খুলে পড়ে। গরমের দিনে ফ্যান চালানো যায় না। আবার শীতের দিনেও রোদের মধ্যে বেশি সময় ধরে ক্লাস করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়।

বামনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম স্বপন বলেন, স্কুল ভবনটা অনেক পুরোনো। তারপর শ্রেণিকক্ষ সংকট তো রয়েছেই। বার বার উপজেলা শিক্ষা অফিসে একটি ভবন ও প্রাচীরের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে স্কুলে শিক্ষার্থী ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই স্কুলের ভবনের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি লিখিত আকারে জানানো হয়েছে।