ঢাকা ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশি মাছ ধরার ট্রলারে গুলি

মিয়ানমার থেকে ফিরল ট্রলার, ভেতরে মরদেহসহ ১১ জেলে

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৩০:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪ ৩৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিবর্ষণের শিকার হওয়া মাছ ধরার বাংলাদেশি ছয়টি ট্রলারের মধ্যে একটি ট্রলার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে ফিরে এসেছে। ট্রলারে একজন জেলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ ও দুজন গুলিবিদ্ধ জেলেসহ ১১ জন জেলে রয়েছে।

কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন ও শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় আরো পাঁচটি ট্রলার ও অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি জেলে মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে আটক রয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নাজমুল হক জানান , নিহত ও গুলিবিদ্ধ জেলেসহ ১১ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে একটি ট্রলার দুপুর দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে ফিরেছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য জেলের মৃতদেহ নৌপুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দাদের মালিকাধীন ওই পাঁচটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর কবলে পড়ে। ওই সময় বাংলাদেশি ট্রলার লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে তারা।

মিয়ানমারর নৌবাহিনীর গুলিতে নিহত মো. ওসমান(৫০) শাহপরীর দ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়া এলাকার সাইফুল কম্পানির মালিকাধীন ট্রলারের জেলে।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন- শাহপরীর দ্বীপ বাজার পাড়ার বাসিন্দা রাজু ও আরেকজন মাঝের পাড়ার মো. রফিক। তবে অন্য জেলেদের নাম ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ধরে নিয়ে যাওয়া ছয় ট্রলারের মালিক হলো- শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রীপাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান, মৃত আলী হোছনের ছেলে আবদুল্লাহ, তার ভাই আতা উল্লাহ ও উত্তরপাড়ার ছৈয়দ মাঝির ছেলে মো. আছেম ও মো. কায়সার। এসব ট্রলারে অর্ধশতাধিক মাঝি-মাল্লা রয়েছেন।

তবে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের কোস্টগার্ড ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ট্রলারের মালিক মো. কায়সার।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালামও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তার এলাকার ছয়টি ট্রলার সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যায়। এ সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনী গুলিবর্ষণ করে। এতে একজন মারা যায়। এ ছাড়া আরো দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েছি।

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন কাছাকাছি মাছ শিকার করে ফেরার সময় একটি ট্রলারকে গুলি করে মিয়ানমার নৌবাহিনী। ট্রলারে থাকা একজন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আর বাকি দুজন গুলিবিদ্ধ।

আহত জেলে মোহাম্মদ রফিক বলেন, অলি আহমেদ ট্রলার নিয়ে গত চারদিন আগে ১০ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বৃহস্পতিবার ফেরার পথে সাগরে মিয়ানমারের অংশে অবস্থান নেয়া মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সংকেত দিয়ে তাদের দিকে যেতে বলে। ওটা মিয়ানমারের পানিসীমা হওয়ায় তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে চলে আসতে থাকে। এ সময় পরপর গুলিবর্ষণ করে তারা। এ ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হন। আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যরা অক্ষত আছে।

এ ব্যাপারে বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমারের সীমান্তে নৌবাহিনীর গুলিতে একজন নিহত এবং আরও দুজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী জানান, সেন্টমার্টিনের কাছে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে এক বাংলাদেশি জেলে নিহত ও দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বাংলাদেশি মাছ ধরার ট্রলারে গুলি

মিয়ানমার থেকে ফিরল ট্রলার, ভেতরে মরদেহসহ ১১ জেলে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৩০:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিবর্ষণের শিকার হওয়া মাছ ধরার বাংলাদেশি ছয়টি ট্রলারের মধ্যে একটি ট্রলার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে ফিরে এসেছে। ট্রলারে একজন জেলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ ও দুজন গুলিবিদ্ধ জেলেসহ ১১ জন জেলে রয়েছে।

কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন ও শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় আরো পাঁচটি ট্রলার ও অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি জেলে মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে আটক রয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নাজমুল হক জানান , নিহত ও গুলিবিদ্ধ জেলেসহ ১১ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে একটি ট্রলার দুপুর দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে ফিরেছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য জেলের মৃতদেহ নৌপুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দাদের মালিকাধীন ওই পাঁচটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর কবলে পড়ে। ওই সময় বাংলাদেশি ট্রলার লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে তারা।

মিয়ানমারর নৌবাহিনীর গুলিতে নিহত মো. ওসমান(৫০) শাহপরীর দ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়া এলাকার সাইফুল কম্পানির মালিকাধীন ট্রলারের জেলে।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন- শাহপরীর দ্বীপ বাজার পাড়ার বাসিন্দা রাজু ও আরেকজন মাঝের পাড়ার মো. রফিক। তবে অন্য জেলেদের নাম ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ধরে নিয়ে যাওয়া ছয় ট্রলারের মালিক হলো- শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রীপাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান, মৃত আলী হোছনের ছেলে আবদুল্লাহ, তার ভাই আতা উল্লাহ ও উত্তরপাড়ার ছৈয়দ মাঝির ছেলে মো. আছেম ও মো. কায়সার। এসব ট্রলারে অর্ধশতাধিক মাঝি-মাল্লা রয়েছেন।

তবে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের কোস্টগার্ড ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ট্রলারের মালিক মো. কায়সার।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালামও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তার এলাকার ছয়টি ট্রলার সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যায়। এ সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনী গুলিবর্ষণ করে। এতে একজন মারা যায়। এ ছাড়া আরো দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েছি।

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন কাছাকাছি মাছ শিকার করে ফেরার সময় একটি ট্রলারকে গুলি করে মিয়ানমার নৌবাহিনী। ট্রলারে থাকা একজন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আর বাকি দুজন গুলিবিদ্ধ।

আহত জেলে মোহাম্মদ রফিক বলেন, অলি আহমেদ ট্রলার নিয়ে গত চারদিন আগে ১০ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বৃহস্পতিবার ফেরার পথে সাগরে মিয়ানমারের অংশে অবস্থান নেয়া মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সংকেত দিয়ে তাদের দিকে যেতে বলে। ওটা মিয়ানমারের পানিসীমা হওয়ায় তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে চলে আসতে থাকে। এ সময় পরপর গুলিবর্ষণ করে তারা। এ ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হন। আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যরা অক্ষত আছে।

এ ব্যাপারে বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমারের সীমান্তে নৌবাহিনীর গুলিতে একজন নিহত এবং আরও দুজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী জানান, সেন্টমার্টিনের কাছে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে এক বাংলাদেশি জেলে নিহত ও দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী।