ঢাকা ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেসামাল ময়লার গাড়ি , নিয়ন্ত্রণহীনতায় ঘটছে দুর্ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৩১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজধানীর মদিনাবাগ বাজার এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেপরোয়া ময়লার গাড়ি চাপায় বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) মাহিন আহমেদ (১৩) মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত ৩ বছরে ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় ১৩ জনেরমৃত্যু হয়েছে। এর মূল কারণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চালকরা বেপরোয়া ।

সড়কে চলা মানুষ ও যানবাহনকে কিছুই মনে করেন না এসব গাড়ির চালকরা । ধার ধারেন না কোনো নিয়মকানুনের। এমনকি মানেন না ট্রাফিক আইনও। ইচ্ছামতো চালান গাড়ি । চালকদের বেপরোয়া ও উগ্রতার কারণে সংস্থার গাড়িগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে । এর ফলে মারা যাচ্ছে নিরীহ মানুষগুলো । বিভিন্ন সময় মেয়র দক্ষ চালক নিয়োগে আশ্বাস দিলেও এর সমাধান হয়নি ।

পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, বিশেষজ্ঞ ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মতে, এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মূলত সিটি করপোরেশনের বর্জ্য পরিবহন ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা । অতীতে একাধিক দুর্ঘটনার তদন্তে গাড়িচালকদের গাফিলতি পাওয়া গেছে । ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও সংস্থাটির পরিবহন বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের চিত্র উঠে আসে । একই সাথে সরকারি সংস্থার গাড়ি হওয়ায় ট্রাফিক পুলিশও তাদের কিছু বলছে না । ট্রাফিক আইন অমান্য করলেও তাদের কোনো শাস্তি বা মামলা হচ্ছে না । প্রায়ই ময়লার গাড়িগুলো উল্টোপথে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করলেও ট্রাফিক পুলিশ আটকায় না । সিটি করপোরেশনের গাড়িচালকদের নিজেদের অনুকূলে বরাদ্দ থাকা গাড়ি ভাড়া করা লোকদের দিয়ে চালানোর বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ।

এ প্রসঙ্গে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ট্রাফিক পুলিশ সাধারণ নাগরিকের গাড়ি সড়কে দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র দেখে, ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে, অপরাধ করলে মামলা দেয় । কিন্তু সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো কখনো চেক করে না । সরকারি সংস্থার গাড়ি হওয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না । এ ছাড়া করপোরেশনের দক্ষ গাড়িচালক থাকে না । মশক কর্মী, হেলপার ও বহিরাগত কর্মী দিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা যায় । সিটি করপোরেশনও এসব চালককে মনিটরিং করে না । এ অনিয়ম বন্ধ করতে হবে । সবার জন্য সমান নিয়ম থাকতে হবে । তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা গেলে বেপরোয়া গতি, আচরণ অনেকটাই কমে আসবে । একই সাথে সিটি করপোরেশনের মনিটরিং সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে । গাড়ির ভিতর ড্যাশ ক্যামেরা ও স্পিড ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিং করলে হয়েতো দুর্ঘটনা কমানো যেত ।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, নির্ধারিত গাড়িচালক গাড়ি না চালিয়ে অন্যকে দিয়ে ভাড়া খাটিয়ে গাড়িটি চালানো হয়েছে । এ ধরনের অনিয়ম কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না । এ ঘটনায় কঠোরতর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে । এ রকম কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে । এ ধরনের ঘটনায় আগেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । এমনকি জড়িতদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ।

এদিকে, গত তিন বছরে ১৩ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক মারা যায়। তার নাম-ছাত্র মাহিন আহমেদ( ১৩)। এ নিয়ে গত তিন বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় ১৩ জনের মৃত্যু হলো । এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়িচাপায় ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে মারা যায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী। তার নাম-নাঈম হাসান । এর পরদিন রাজধানীর পান্থপথে সংবাদকর্মী আহসান কবির খান প্রাণ হারান ।

২০২৩ সালের ৬ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের( ডিএনসিসি) ময়লাবাহী গাড়িচাপায় এর কাপড় ব্যবসায়ী মারা যান। নিহতের নাম-আবু তৈয়ব( ২৬)। ২০২২ সালে ময়লার গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ৪ জন। একই বছরের ২ এপ্রিল খিলগাঁওয়ে ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক নারীর মৃত্যুহয়। মৃত ওই নারীর নাম-নাসরিন খানম। এরপর ২৩ জানুয়ারি মহাখালীর উড়ালসড়কের কাছে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মৃত্য হয়। তার নাম-শিখা রানী ঘরামি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বেসামাল ময়লার গাড়ি , নিয়ন্ত্রণহীনতায় ঘটছে দুর্ঘটনা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৩১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর মদিনাবাগ বাজার এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেপরোয়া ময়লার গাড়ি চাপায় বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) মাহিন আহমেদ (১৩) মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত ৩ বছরে ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় ১৩ জনেরমৃত্যু হয়েছে। এর মূল কারণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চালকরা বেপরোয়া ।

সড়কে চলা মানুষ ও যানবাহনকে কিছুই মনে করেন না এসব গাড়ির চালকরা । ধার ধারেন না কোনো নিয়মকানুনের। এমনকি মানেন না ট্রাফিক আইনও। ইচ্ছামতো চালান গাড়ি । চালকদের বেপরোয়া ও উগ্রতার কারণে সংস্থার গাড়িগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে । এর ফলে মারা যাচ্ছে নিরীহ মানুষগুলো । বিভিন্ন সময় মেয়র দক্ষ চালক নিয়োগে আশ্বাস দিলেও এর সমাধান হয়নি ।

পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, বিশেষজ্ঞ ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মতে, এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মূলত সিটি করপোরেশনের বর্জ্য পরিবহন ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা । অতীতে একাধিক দুর্ঘটনার তদন্তে গাড়িচালকদের গাফিলতি পাওয়া গেছে । ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও সংস্থাটির পরিবহন বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের চিত্র উঠে আসে । একই সাথে সরকারি সংস্থার গাড়ি হওয়ায় ট্রাফিক পুলিশও তাদের কিছু বলছে না । ট্রাফিক আইন অমান্য করলেও তাদের কোনো শাস্তি বা মামলা হচ্ছে না । প্রায়ই ময়লার গাড়িগুলো উল্টোপথে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করলেও ট্রাফিক পুলিশ আটকায় না । সিটি করপোরেশনের গাড়িচালকদের নিজেদের অনুকূলে বরাদ্দ থাকা গাড়ি ভাড়া করা লোকদের দিয়ে চালানোর বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ।

এ প্রসঙ্গে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ট্রাফিক পুলিশ সাধারণ নাগরিকের গাড়ি সড়কে দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র দেখে, ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে, অপরাধ করলে মামলা দেয় । কিন্তু সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো কখনো চেক করে না । সরকারি সংস্থার গাড়ি হওয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না । এ ছাড়া করপোরেশনের দক্ষ গাড়িচালক থাকে না । মশক কর্মী, হেলপার ও বহিরাগত কর্মী দিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা যায় । সিটি করপোরেশনও এসব চালককে মনিটরিং করে না । এ অনিয়ম বন্ধ করতে হবে । সবার জন্য সমান নিয়ম থাকতে হবে । তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা গেলে বেপরোয়া গতি, আচরণ অনেকটাই কমে আসবে । একই সাথে সিটি করপোরেশনের মনিটরিং সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে । গাড়ির ভিতর ড্যাশ ক্যামেরা ও স্পিড ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিং করলে হয়েতো দুর্ঘটনা কমানো যেত ।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, নির্ধারিত গাড়িচালক গাড়ি না চালিয়ে অন্যকে দিয়ে ভাড়া খাটিয়ে গাড়িটি চালানো হয়েছে । এ ধরনের অনিয়ম কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না । এ ঘটনায় কঠোরতর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে । এ রকম কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে । এ ধরনের ঘটনায় আগেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । এমনকি জড়িতদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ।

এদিকে, গত তিন বছরে ১৩ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক মারা যায়। তার নাম-ছাত্র মাহিন আহমেদ( ১৩)। এ নিয়ে গত তিন বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় ১৩ জনের মৃত্যু হলো । এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়িচাপায় ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে মারা যায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী। তার নাম-নাঈম হাসান । এর পরদিন রাজধানীর পান্থপথে সংবাদকর্মী আহসান কবির খান প্রাণ হারান ।

২০২৩ সালের ৬ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের( ডিএনসিসি) ময়লাবাহী গাড়িচাপায় এর কাপড় ব্যবসায়ী মারা যান। নিহতের নাম-আবু তৈয়ব( ২৬)। ২০২২ সালে ময়লার গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ৪ জন। একই বছরের ২ এপ্রিল খিলগাঁওয়ে ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক নারীর মৃত্যুহয়। মৃত ওই নারীর নাম-নাসরিন খানম। এরপর ২৩ জানুয়ারি মহাখালীর উড়ালসড়কের কাছে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মৃত্য হয়। তার নাম-শিখা রানী ঘরামি।