ঢাকা ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে শ্রম আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবতা

এডভোকেট এম খালেদ আহমদ
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:১৮:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শ্রম আইন একটি বিশেষ আইন । বর্তমানে বাংলাদেশে ‘শ্রম আইন ২০০৬’ এর কার্যকারিতা বিদ্যমান । শ্রম আইন ২০০৬ এর অধীনে ৩৫১ ধারা বলে ‘শ্রম বিধিমালা ২০১৫’ গ্যাজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে এবং শ্রম আইনে তার কার্যকারিতা রয়েছে ।

বর্তমান শ্রম আইনের ২১৪ ধারাতে ‘শ্রম আদালত স্থাপন ও আনুষাঙ্গিক বিষয়’ বর্ণিত আছে । শ্রম আদালতের গঠন প্রক্রিয়া ধারা ২১৪ এর (৩), (৪) , (৫ ) ও (৬) উপধারায় বর্ণিত আছে ।

উপধারা ৩ অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান ও দুজন সদস্যের সমন্বয়ে শ্রম আদালত গঠিত হবে, উপধারা ৪ অনুযায়ী শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান সরকার কর্তৃক কর্মরত জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজ হতে নিযুক্ত করা হয়, উপধারা ৫ অনুযায়ী শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের নিযুক্তির শর্তাবলী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে থাকে, উপধারা ৬ অনুযায়ী দুজন সদস্যের একজন মালিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী এবং অপরজন শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তারা উপধারা ৯ এ বর্ণিত পন্থায় নিযুক্ত হয়ে থাকেন এবং উপধারা ৭ এ সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পন্থায় সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা দুটি সদস্য তালিকা প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছে; যার একটিতে ছয় জন মালিক প্রতিনিধিদের নাম এবং অন্যটিতে ছয় জন শ্রমিক প্রতিনিধির নাম থাকবে ।

শ্রম আদালতের রায়, সিদ্ধান্ত অথবা কোন দন্ডের বিরুদ্ধে শ্রম আইন ২০০৬ সালের ২১৭ ধারা অনুসারে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যাবে এবং এ ধরনের আপিলের ক্ষেত্রে উক্ত ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে । উক্ত আপিল ট্রাইব্যুনালটি একজন চেয়ারম্যান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সদস্য সংখ্যা নিয়ে গঠিত হবে এবং ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বা অতিরিক্ত বিচারক হতে নিযুক্ত হবেন এবং ট্রাইবুনারের কোন সদস্য সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বা অতিরিক্ত বিচারক হবেন অথবা অন্যূন তিন বছর কর্মরত আছেন বা ছিলেন এমন কোন জেলা জজ হতে নিযুক্ত হবেন । যদি চেয়ারম্যান কোন কারণে অনুপস্থিত থাকেন বা কার্যসম্পাদনে কোন প্রকার অপরাগতা প্রকাশ করেন তবে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পূর্ববর্তী Employment of Labour Standing Ordinance Act 1965 এর ২৫ ধারায় শ্রমিকের চাকরি সংক্রান্ত প্রতিকারের বিধান ছিল ।এছাড়াও শিল্প সম্পর্কের অধ্যাদেশ ৩৪ ধারায় ও কিছুটা প্রতিকারের বিধান ছিল । কিন্তু শ্রম আইন ২০০৬ সর্বশেষ প্রণীত হওয়ায় বর্তমানে এই একটি মাত্র আইন প্রচলিত আছে ।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে শ্রম আইন ২০০৬ এর সাথে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য প্রণয়নকৃত প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইন ১৯৮০ তুলনা করলে শ্রম আইনের ত্রুটিগুলো কোনভাবেই উপেক্ষা করা যায় না/ খুব সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে প্রতিকারের বিধান রয়েছে এবং প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইনের ৪ ধারায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মামলা দায়ের করতে পারেন এবং কোন আদেশের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে উক্ত ব্যক্তির জন্য আপীলের বিধান ও রয়েছে।

প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬(৩) ধারায় বলা হয়েছে; “আপীল আবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসনিক আপীল ট্রাইবুনাল প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের কোন সিদ্ধান্ত বা আদেশ নিশ্চিত , স্থগিত , পরিবর্তন বা সংশোধন করিতে পারেন এবং এইরূপ আপীল নিষ্পত্তিতে প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত নিম্নোক্ত ৬(ক) এর শর্তসাপেক্ষে চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে ।” উল্লেখিত ৬ (ক) ধারাটি …………………..সালে সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজন করা হয় এবং উক্ত ধারাটির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে গণপ্রজাতন্ত্রী সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের বিধানবলী হাইকোর্ট বিভাগে ভাবে প্রযোজ্য ঠিক একইভাবে প্রশাসনিক আপীলেট ট্রাইবুনালের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইনের ৬(ক) ধারা অনুসারে আপিল ট্রাইব্যুনালের কোন রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল বিভাগে মামলা (Leave Petition) করতে পারবেন ।

কিন্তু শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো প্রতিকারের বিধান নেই । ফলে মালিক শ্রেণী শ্রম আপিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন । কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা যায় হাইকোর্টে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন থাকার কারণে শ্রমিক বা শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পত্তি হতে অনেক দেরি হয় ফলে শ্রমিকেরা মামলা জয়লাভ করেও কাঙ্খিত ফলাফল বাস্তবে লাভ করতে পারেন না ।

বাংলাদেশ সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ যেমন বাংলাদেশের সকল নাগরিকের আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভ নিশ্চিত করেছে ঠিক একইভাবে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ -লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করেছে।

সংবিধানের উল্লেখিত অনুচ্ছেদ সমুহের মর্মানুসারে, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ (ক) ধারার মত বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীও যেন সরাসরি আপিল বিভাগে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা করতে পারেন সেই রকম বিধান সংযুক্ত করা বর্তমানে আইনগত দাবী হয়ে উঠেছে ।

উল্লেখ যে ১৮৮৬ সালের শিকাগো শহরে শ্রমিকদের ন্যায দাবিতে যে আত্মাহুতি হয়েছিল, সেই আত্মাহুতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজও পহেলা মে পৃথিবীব্যাপী গণমানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আসছেন। সম্প্রীতি শ্রম আইনের একটি সংশোধনী মহামান্য প্রেসিডেন্টের নিকট থেকে ফিরে এসেছে এবং এই সংশোধনীটি জাতীয় সংসদ কর্তৃক পুনরায় বিবেচনা করে পাশ করার সময় শ্রম আইনে (অর্থাৎ শ্রম আইন ২০০৬) এ প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইনের ৬(ক) ধারার মত সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যাতে শ্রম আপিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল বিভাগে মামলা করতে পারে সে অনুসারে সংশোধনী আনয়ন করলে শ্রমজীবী মানুষ প্রকৃতভাবে উপকৃত হবেন এবং মহান পহেলা মে দিবসের মহান আত্মত্যাগ প্রকৃত সফলতা লাভ করবে ।

লেখক পরিচিতি : এম খালেদ আহমদ বাংলাদেশ সুপ্রিম কার্টের একজন এডভোকেট।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বাংলাদেশে শ্রম আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবতা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:১৮:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শ্রম আইন একটি বিশেষ আইন । বর্তমানে বাংলাদেশে ‘শ্রম আইন ২০০৬’ এর কার্যকারিতা বিদ্যমান । শ্রম আইন ২০০৬ এর অধীনে ৩৫১ ধারা বলে ‘শ্রম বিধিমালা ২০১৫’ গ্যাজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে এবং শ্রম আইনে তার কার্যকারিতা রয়েছে ।

বর্তমান শ্রম আইনের ২১৪ ধারাতে ‘শ্রম আদালত স্থাপন ও আনুষাঙ্গিক বিষয়’ বর্ণিত আছে । শ্রম আদালতের গঠন প্রক্রিয়া ধারা ২১৪ এর (৩), (৪) , (৫ ) ও (৬) উপধারায় বর্ণিত আছে ।

উপধারা ৩ অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান ও দুজন সদস্যের সমন্বয়ে শ্রম আদালত গঠিত হবে, উপধারা ৪ অনুযায়ী শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান সরকার কর্তৃক কর্মরত জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজ হতে নিযুক্ত করা হয়, উপধারা ৫ অনুযায়ী শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের নিযুক্তির শর্তাবলী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে থাকে, উপধারা ৬ অনুযায়ী দুজন সদস্যের একজন মালিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী এবং অপরজন শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তারা উপধারা ৯ এ বর্ণিত পন্থায় নিযুক্ত হয়ে থাকেন এবং উপধারা ৭ এ সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পন্থায় সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা দুটি সদস্য তালিকা প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছে; যার একটিতে ছয় জন মালিক প্রতিনিধিদের নাম এবং অন্যটিতে ছয় জন শ্রমিক প্রতিনিধির নাম থাকবে ।

শ্রম আদালতের রায়, সিদ্ধান্ত অথবা কোন দন্ডের বিরুদ্ধে শ্রম আইন ২০০৬ সালের ২১৭ ধারা অনুসারে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যাবে এবং এ ধরনের আপিলের ক্ষেত্রে উক্ত ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে । উক্ত আপিল ট্রাইব্যুনালটি একজন চেয়ারম্যান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সদস্য সংখ্যা নিয়ে গঠিত হবে এবং ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বা অতিরিক্ত বিচারক হতে নিযুক্ত হবেন এবং ট্রাইবুনারের কোন সদস্য সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বা অতিরিক্ত বিচারক হবেন অথবা অন্যূন তিন বছর কর্মরত আছেন বা ছিলেন এমন কোন জেলা জজ হতে নিযুক্ত হবেন । যদি চেয়ারম্যান কোন কারণে অনুপস্থিত থাকেন বা কার্যসম্পাদনে কোন প্রকার অপরাগতা প্রকাশ করেন তবে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পূর্ববর্তী Employment of Labour Standing Ordinance Act 1965 এর ২৫ ধারায় শ্রমিকের চাকরি সংক্রান্ত প্রতিকারের বিধান ছিল ।এছাড়াও শিল্প সম্পর্কের অধ্যাদেশ ৩৪ ধারায় ও কিছুটা প্রতিকারের বিধান ছিল । কিন্তু শ্রম আইন ২০০৬ সর্বশেষ প্রণীত হওয়ায় বর্তমানে এই একটি মাত্র আইন প্রচলিত আছে ।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে শ্রম আইন ২০০৬ এর সাথে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য প্রণয়নকৃত প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইন ১৯৮০ তুলনা করলে শ্রম আইনের ত্রুটিগুলো কোনভাবেই উপেক্ষা করা যায় না/ খুব সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে প্রতিকারের বিধান রয়েছে এবং প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইনের ৪ ধারায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মামলা দায়ের করতে পারেন এবং কোন আদেশের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে উক্ত ব্যক্তির জন্য আপীলের বিধান ও রয়েছে।

প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬(৩) ধারায় বলা হয়েছে; “আপীল আবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসনিক আপীল ট্রাইবুনাল প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের কোন সিদ্ধান্ত বা আদেশ নিশ্চিত , স্থগিত , পরিবর্তন বা সংশোধন করিতে পারেন এবং এইরূপ আপীল নিষ্পত্তিতে প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত নিম্নোক্ত ৬(ক) এর শর্তসাপেক্ষে চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে ।” উল্লেখিত ৬ (ক) ধারাটি …………………..সালে সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজন করা হয় এবং উক্ত ধারাটির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে গণপ্রজাতন্ত্রী সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের বিধানবলী হাইকোর্ট বিভাগে ভাবে প্রযোজ্য ঠিক একইভাবে প্রশাসনিক আপীলেট ট্রাইবুনালের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইনের ৬(ক) ধারা অনুসারে আপিল ট্রাইব্যুনালের কোন রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল বিভাগে মামলা (Leave Petition) করতে পারবেন ।

কিন্তু শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো প্রতিকারের বিধান নেই । ফলে মালিক শ্রেণী শ্রম আপিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন । কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা যায় হাইকোর্টে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন থাকার কারণে শ্রমিক বা শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পত্তি হতে অনেক দেরি হয় ফলে শ্রমিকেরা মামলা জয়লাভ করেও কাঙ্খিত ফলাফল বাস্তবে লাভ করতে পারেন না ।

বাংলাদেশ সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ যেমন বাংলাদেশের সকল নাগরিকের আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভ নিশ্চিত করেছে ঠিক একইভাবে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ -লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করেছে।

সংবিধানের উল্লেখিত অনুচ্ছেদ সমুহের মর্মানুসারে, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ (ক) ধারার মত বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীও যেন সরাসরি আপিল বিভাগে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা করতে পারেন সেই রকম বিধান সংযুক্ত করা বর্তমানে আইনগত দাবী হয়ে উঠেছে ।

উল্লেখ যে ১৮৮৬ সালের শিকাগো শহরে শ্রমিকদের ন্যায দাবিতে যে আত্মাহুতি হয়েছিল, সেই আত্মাহুতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজও পহেলা মে পৃথিবীব্যাপী গণমানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আসছেন। সম্প্রীতি শ্রম আইনের একটি সংশোধনী মহামান্য প্রেসিডেন্টের নিকট থেকে ফিরে এসেছে এবং এই সংশোধনীটি জাতীয় সংসদ কর্তৃক পুনরায় বিবেচনা করে পাশ করার সময় শ্রম আইনে (অর্থাৎ শ্রম আইন ২০০৬) এ প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইনের ৬(ক) ধারার মত সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যাতে শ্রম আপিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল বিভাগে মামলা করতে পারে সে অনুসারে সংশোধনী আনয়ন করলে শ্রমজীবী মানুষ প্রকৃতভাবে উপকৃত হবেন এবং মহান পহেলা মে দিবসের মহান আত্মত্যাগ প্রকৃত সফলতা লাভ করবে ।

লেখক পরিচিতি : এম খালেদ আহমদ বাংলাদেশ সুপ্রিম কার্টের একজন এডভোকেট।