নদীর পানি গরম হয়ে যাওয়ায় ইলিশ সাগরে চলে যেতে পারে
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:৫৩:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১১০ বার পড়া হয়েছে
তাপপ্রবাহে বরিশালে শিশু এবং বয়োবৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ৪.২ ডিগ্রী ওপরে উঠে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। বর্তমান আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ‘হিট স্ট্রোক’ থেকে সবাইকে সাবধান করে দিয়ে প্রয়োজন ছাড়া রোদে ঘোরাফেরা করা থেকে বিরত থাকাসহ পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহনেরও পরামর্শ দিয়েছেন। গ্রীষ্মের শুরুতে চলমান দাবদহে বরিশাল মহানগরীর রাস্তাঘাট দুপরের অনেক আগেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
অব্যাহত তাপপ্রবাহে প্রায় চার লাখ হেক্টরের বোরো ধানের পরিচর্যা ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন কৃষিবিদরা। এর পাশাপাশি নদীর পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের নদী ত্যাগ করে গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়ার আশংকার কথাও বলেছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। প্রখর রোদের সাথে তাপপ্রবাহে জেলেরা নৌকা নিয়ে নদ-নদীতে নামতে পারছেন না।
এমনকি সোমবার (১৬ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে ৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮ ডিগ্রী বেশী। বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও এখন স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ডিগ্রী ওপরে থাকছে। ফলে ভোরের একটু ঠান্ডা হাওয়াতেও স্বস্তি মিলছে না।
গত তিনদিন ধরে অব্যাহত তাপপ্রবাহে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মের শুরুতে এসময়ে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের স্থলে সোমবার দুপুরে তা ৩৭.৬ ডিগ্রী থেকে মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) আরও এক দশমিক বেড়ে ৩৭.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছুঁয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।
অব্যাহত এই তাপপ্রবাহের সাথে বরিশালে বৃষ্টি তো দূরের কথা মেঘেরও দেখা মিলছে না। আবহাওয়া বিভাগের মতে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের অনেক নিচে রয়েছে। গত মাসেও বরিশালে স্বাভাবিকের ৩০% কম বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসেও স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের খবর জানিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস।
এপ্রিল মাসে ৬-৮ দিনে বরিশালে ১২০ থেকে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম ১৬দিনের মধ্যে গত ৮ এপ্রিল মাত্র ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চৈত্রের শেষভাগ থেকেই তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ওপরে ওঠা সহ বৃষ্টিপাতের ঘাটতিতে জনস্বাস্থ্যের সাথে কৃষি ও মৎস্য খাতেও বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভরা বোরো মৌসুমের এসময়ে পর্যাপ্ত সেচ ও সার প্রয়োগ এবং আগাছা দমন সহ মাঠে মাঠে ধানের ব্যাপক পরিচর্যার প্রয়োজন হলেও কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা খরতাপে জমির কাছেই যেতে পারছেন না। এমনকি বৃষ্টির অভাবে অতিরিক্ত সেচ প্রদানে এবার বরিশালে বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির আশংকা করছেন কৃষিবীদরা। চলতি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ১৮ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে ৪ লাখ হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, প্রখর রোদের সাথে অব্যাহত তাপ প্রবাহে জেলেরাও নদ-নদীতে স্বাভাবিক মৎস্য আহরন থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি চলমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে বরিশালের অভ্যন্তরীন ও উপকূলভাগ অভ্যন্তরের নদ-নদী থেকে ইলিশের ঝাঁক গভীর সমুদ্রে চলে যাবারও আশংকা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞগণ।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক জানান, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জেলেদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি’। তার মতে, তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে ইলিশের মাইগ্রেশনের আশংকা তৈরী হতে পারে’। তবে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনেরও আশা প্রকাশ করেন তিনি।