ঢাকা ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবু সাইদ হত্যায় জড়িত বেরোবির কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভিডিও ভাইরাল

রংপুর প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:১৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৭১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে হত্যা মামলা হলেও ওই দিনের ঘটনায় আবু সাইদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী ও এক শিক্ষক সরাসরি জড়িত ছিলো এবং তাদের হেলমেট পড়ে লাঠি হাতে আবার কেউ কেউ পুলিশের সাথে থেকে তাকে গুলি করে হত্যার ইন্ধন দিয়েছে এমনকি সরাসরি জড়িত ছিলো এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ভাইরাল হওয়ায় তোলপাড় চলছে।

নিহত আবু সাইদের বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা আরও ৩০/৩৫ জনের কথা উল্লেখ করা হলেও অন্তত ১০ জন আসামীর নাম এজাহারে আসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, হত্যা মামলা দায়ের করার ১৫ দিন অতিবাহিত হবার পরেও একজন আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারার ঘটনা নিয়ে নিহত আবু সাইদের পরিবার এবং বেরোবির শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

কোটা বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা আবু সাইদ পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়ে বারবার বলছিলো গুলি করলে কর, তাকে টার্গেট করে পুলিশের মুহু মুহু গুলিবর্ষনের মধ্যেও অবিচল একাকী দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার ভিডিও এখন দেশ ছাপিয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অথচ সেই সাইদ ঘটনার কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়া দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

১৬ জুলাই কোটা বিরোধী আন্দোলনের শুরুতেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেরোবির শিক্ষার্থী আবু সাইদ। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই রংপুর মেট্রোপলিটান তাজহাট থানায় বেরোবি পুলিশ ফাঁড়িন ইনচার্জ এস আই বিভুতি ভুষন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার এজাহারে শিক্ষার্থী আবু সাইদ ইট পাটকেলের আঘাতে মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ আর দেশ ত্যাগ করার পর ড, ইউনুছের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালিন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে নিহত হননি পুলিশের দায়ের করা মামলাটিকেই মুল মামলা ধরে পুলিশ সদর দপ্তর মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার আদেশ দেয়। ফলে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মনোনয়ার হোসেন মামলার পুরো নথি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে। ওই মামলাটি ছিলো গুলির নির্দ্দেশ দানকারী আর গুলি বর্ষনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের রক্ষা করার সুগভীর চক্রান্ত বলে মনে করেন শিক্ষক শিক্ষার্থী আর প্রত্যাক্ষদর্শী। সেই সাথে তাকে যে পুলিশ গুলি করছে গুলি তার পেটে লেগে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিও যা দেশ বিদেশের কোটি কোটি মানুষ দেখলো তাকে মিথ্যা প্রমানের পরিকল্পিত চেষ্টা। এ ব্যাপারে পিবিআই তদন্ত শুরু করলো কিনা সে সম্পর্কে আজ অবধি পিবিআই কোন প্রেস ব্রিফিং করেনি। তবে এ প্রতিনিধিকে রংপুর পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান তারা তদন্ত করছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো নিহত সাইদের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা তা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আপাতত নেই।

আবু সাইদ নিহত হবার পর ময়না তদন্ত প্রতিবেদন কি দেয়া হয়েছে তা জানার জন্য এ প্রতিনিধি সহ কয়েকজন গনমাধ্যম কর্মী রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাক্ষ অধ্যাপক ডা. সরোয়ারের সাথে দেখা করে প্রতিবেদন কবে দেয়া হবে জানা সম্ভব হয়নি। অথচ যে পুলিশ কর্মকর্তা গুলি করেছিলেন তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাক্ষের কাছে ধর্না দিতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয় রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের দুজন ডিসি পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদেরও দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ পেলেও গনমাধ্যম কর্মীদের আজও জানাননি। তারাও গোপন করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে যতটুকু জানা গেছে নিহত আবু সাইদের মরদেহের সুরত হাল করেছিলেন একজন নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট তিনিও শরীরে গুলির চিহ্নের কথা উল্লেখ করেননি। একই কথা বলেছেন ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক। শিক্ষার্থীরা বলছেন পুরো বিষয়টি পুলিশের পক্ষে নেবার পাকা পোক্ত পরিকল্পনা করেছেন এবং প্রাথমিক ভাবে সফল হয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ।

বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত হবার পর গত ১৮ আগষ্ট তার বড় ভাই নিজে বাদী হয়ে রংপুরের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট রাজু আহাম্মেদের আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় গুলি বর্ষনকারী দুই পুলিশ সদস্য রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান ডিসি ক্রাইম আবু মারুফ হোসেন, দুই সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন , আল ইমরান , পুলিশের আইজিপি আব্দুল্লা আল মামুন, বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া সাধারণ সম্পাদক শামীম বেরোবির দুই শিক্ষক মশিউর রহমান, আসাদ মন্ডলসহ ১৭ জনকে আসামী করা হয়। বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য মেট্রোপলিটান তাজহাট থানাকে আদেশ দেয়া হয়। তাজহাট থানা মামলাটি রেকর্ড করে পিবিআইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু মামলার আর কোন অগ্রগতি নেই কোন আসামী গ্রেফতার করেনি পিবিআই বা পুলিশ। তারা গনমাধ্যমকেও কিছু বলছেওনা। কেন এত গোপনীয়তা তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ শিক্ষক শিক্ষার্থী সহ স্বজনদের।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যা দেখা গেছে।

আবু সাইদকে হত্যার পর থেকেই বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গেছে আবু সাইদকে গুলি করার আগে প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল পুলিশকে সাইদকে গুলি করার কথা বলছেন। একই কথা বলছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জনি, এ ছাড়াও কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে বেরোবির আওয়ামী লীগ পন্থি বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীকে লাঠি হাতে অথবা মাথায় হেলমেট পড়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আবু স্ইাদ সহ অন্যান্যদের আক্রমন করার জন্য মহড়া প্রদর্শন। এদের মধ্যে উপ পরিচালক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এরশাদুজ্জামান কাজল, লাঠি হাতে মনিরুজ্জামান পলাশ , মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাফিয়ার রহমানের ছোট ভাই হাফিজার রহমান তুফানকেও লাঠি হাতে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে। এ ছাড়াও উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এরশাদুজ্জামান, লোক প্রশাসন বিভাগের কর্মচারী আমির হোসেনকে লাঠি হাতে গনিত বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, পরীক্ষা দপ্তরের কর্মচারী মামুন, জীব বিজ্ঞান অনুষদের কর্মচারী বিপ্লব, অর্থ দপ্তরের উপপরিচালক , রেজাউল , গনিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান , উপাচার্যের পিএ আবুল কালাম আজাদ সহ অনেককে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন উপাচার্যের পিএ আবুল কালাম আজাদ ছিলো ঘটনার অন্যতম নায়ক। এদের বেশীর ভাগই আবু সাইদ হত্যা মামলায় আসামীর তালিকায় নাম নেই।

আবু সাইদ নিহত হওয়ার পর গঠিত অনুসন্ধান কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমানের সাথে সোমবার বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগায্গো করা হলে তিনি বলেন আমরা তদন্ত শুরু করার সময় অনেক অডিও ভিডিও ও ছবি পেয়েছিলাম সেখানে বেরোবির অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীকে লাঠি হাতে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ পুলিশকে গুলি করতে বলছেন। আমরা অনেক তথ্য পেয়েছিলাম কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী আমাদের তদন্ত করতে নিষেধ করায় আমরা পদ্যতাগ করেছি।

এ ব্যাপারে বেরোবির শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, আবু সাইদ নিহত হবার পর তার বড় ভাই নিজে বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন হয়তো সকলের নাম দেয়া প্রাথমিক ভাবে সম্ভব না হলেও তদন্ত কালে যারাই ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন তিনি।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থী বলেছেন বেরোবির শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আসাদ মন্ডলকে এই মামলায় আসামী করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে সরাসরি অংশ নেবার কোন ভিডিও পাওয়া যায়নি। মুলক শিক্ষক রাজনীতির শিকার তিনি। মামলার বাদী নিহত আবু সাইদের বড় ভাই রমজান আলীও আসাদ মন্ডলের ব্যাপারে কিছু বলেননি।

সার্বিক বিষয়ে মামলার বাদী রমজান আলী জানান আবু সাইদ হত্যায় যারাই জড়িত তাদের সকলকেই আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আবু সাইদ হত্যায় জড়িত বেরোবির কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভিডিও ভাইরাল

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:১৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে হত্যা মামলা হলেও ওই দিনের ঘটনায় আবু সাইদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী ও এক শিক্ষক সরাসরি জড়িত ছিলো এবং তাদের হেলমেট পড়ে লাঠি হাতে আবার কেউ কেউ পুলিশের সাথে থেকে তাকে গুলি করে হত্যার ইন্ধন দিয়েছে এমনকি সরাসরি জড়িত ছিলো এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ভাইরাল হওয়ায় তোলপাড় চলছে।

নিহত আবু সাইদের বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা আরও ৩০/৩৫ জনের কথা উল্লেখ করা হলেও অন্তত ১০ জন আসামীর নাম এজাহারে আসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, হত্যা মামলা দায়ের করার ১৫ দিন অতিবাহিত হবার পরেও একজন আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারার ঘটনা নিয়ে নিহত আবু সাইদের পরিবার এবং বেরোবির শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

কোটা বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা আবু সাইদ পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়ে বারবার বলছিলো গুলি করলে কর, তাকে টার্গেট করে পুলিশের মুহু মুহু গুলিবর্ষনের মধ্যেও অবিচল একাকী দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার ভিডিও এখন দেশ ছাপিয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অথচ সেই সাইদ ঘটনার কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়া দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

১৬ জুলাই কোটা বিরোধী আন্দোলনের শুরুতেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেরোবির শিক্ষার্থী আবু সাইদ। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই রংপুর মেট্রোপলিটান তাজহাট থানায় বেরোবি পুলিশ ফাঁড়িন ইনচার্জ এস আই বিভুতি ভুষন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার এজাহারে শিক্ষার্থী আবু সাইদ ইট পাটকেলের আঘাতে মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ আর দেশ ত্যাগ করার পর ড, ইউনুছের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালিন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে নিহত হননি পুলিশের দায়ের করা মামলাটিকেই মুল মামলা ধরে পুলিশ সদর দপ্তর মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার আদেশ দেয়। ফলে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মনোনয়ার হোসেন মামলার পুরো নথি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে। ওই মামলাটি ছিলো গুলির নির্দ্দেশ দানকারী আর গুলি বর্ষনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের রক্ষা করার সুগভীর চক্রান্ত বলে মনে করেন শিক্ষক শিক্ষার্থী আর প্রত্যাক্ষদর্শী। সেই সাথে তাকে যে পুলিশ গুলি করছে গুলি তার পেটে লেগে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিও যা দেশ বিদেশের কোটি কোটি মানুষ দেখলো তাকে মিথ্যা প্রমানের পরিকল্পিত চেষ্টা। এ ব্যাপারে পিবিআই তদন্ত শুরু করলো কিনা সে সম্পর্কে আজ অবধি পিবিআই কোন প্রেস ব্রিফিং করেনি। তবে এ প্রতিনিধিকে রংপুর পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান তারা তদন্ত করছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো নিহত সাইদের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা তা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আপাতত নেই।

আবু সাইদ নিহত হবার পর ময়না তদন্ত প্রতিবেদন কি দেয়া হয়েছে তা জানার জন্য এ প্রতিনিধি সহ কয়েকজন গনমাধ্যম কর্মী রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাক্ষ অধ্যাপক ডা. সরোয়ারের সাথে দেখা করে প্রতিবেদন কবে দেয়া হবে জানা সম্ভব হয়নি। অথচ যে পুলিশ কর্মকর্তা গুলি করেছিলেন তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাক্ষের কাছে ধর্না দিতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয় রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের দুজন ডিসি পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদেরও দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ পেলেও গনমাধ্যম কর্মীদের আজও জানাননি। তারাও গোপন করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে যতটুকু জানা গেছে নিহত আবু সাইদের মরদেহের সুরত হাল করেছিলেন একজন নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট তিনিও শরীরে গুলির চিহ্নের কথা উল্লেখ করেননি। একই কথা বলেছেন ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক। শিক্ষার্থীরা বলছেন পুরো বিষয়টি পুলিশের পক্ষে নেবার পাকা পোক্ত পরিকল্পনা করেছেন এবং প্রাথমিক ভাবে সফল হয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ।

বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত হবার পর গত ১৮ আগষ্ট তার বড় ভাই নিজে বাদী হয়ে রংপুরের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট রাজু আহাম্মেদের আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় গুলি বর্ষনকারী দুই পুলিশ সদস্য রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান ডিসি ক্রাইম আবু মারুফ হোসেন, দুই সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন , আল ইমরান , পুলিশের আইজিপি আব্দুল্লা আল মামুন, বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া সাধারণ সম্পাদক শামীম বেরোবির দুই শিক্ষক মশিউর রহমান, আসাদ মন্ডলসহ ১৭ জনকে আসামী করা হয়। বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য মেট্রোপলিটান তাজহাট থানাকে আদেশ দেয়া হয়। তাজহাট থানা মামলাটি রেকর্ড করে পিবিআইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু মামলার আর কোন অগ্রগতি নেই কোন আসামী গ্রেফতার করেনি পিবিআই বা পুলিশ। তারা গনমাধ্যমকেও কিছু বলছেওনা। কেন এত গোপনীয়তা তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ শিক্ষক শিক্ষার্থী সহ স্বজনদের।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যা দেখা গেছে।

আবু সাইদকে হত্যার পর থেকেই বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গেছে আবু সাইদকে গুলি করার আগে প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল পুলিশকে সাইদকে গুলি করার কথা বলছেন। একই কথা বলছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জনি, এ ছাড়াও কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে বেরোবির আওয়ামী লীগ পন্থি বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীকে লাঠি হাতে অথবা মাথায় হেলমেট পড়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আবু স্ইাদ সহ অন্যান্যদের আক্রমন করার জন্য মহড়া প্রদর্শন। এদের মধ্যে উপ পরিচালক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এরশাদুজ্জামান কাজল, লাঠি হাতে মনিরুজ্জামান পলাশ , মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাফিয়ার রহমানের ছোট ভাই হাফিজার রহমান তুফানকেও লাঠি হাতে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে। এ ছাড়াও উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এরশাদুজ্জামান, লোক প্রশাসন বিভাগের কর্মচারী আমির হোসেনকে লাঠি হাতে গনিত বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, পরীক্ষা দপ্তরের কর্মচারী মামুন, জীব বিজ্ঞান অনুষদের কর্মচারী বিপ্লব, অর্থ দপ্তরের উপপরিচালক , রেজাউল , গনিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান , উপাচার্যের পিএ আবুল কালাম আজাদ সহ অনেককে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন উপাচার্যের পিএ আবুল কালাম আজাদ ছিলো ঘটনার অন্যতম নায়ক। এদের বেশীর ভাগই আবু সাইদ হত্যা মামলায় আসামীর তালিকায় নাম নেই।

আবু সাইদ নিহত হওয়ার পর গঠিত অনুসন্ধান কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমানের সাথে সোমবার বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগায্গো করা হলে তিনি বলেন আমরা তদন্ত শুরু করার সময় অনেক অডিও ভিডিও ও ছবি পেয়েছিলাম সেখানে বেরোবির অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীকে লাঠি হাতে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ পুলিশকে গুলি করতে বলছেন। আমরা অনেক তথ্য পেয়েছিলাম কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী আমাদের তদন্ত করতে নিষেধ করায় আমরা পদ্যতাগ করেছি।

এ ব্যাপারে বেরোবির শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, আবু সাইদ নিহত হবার পর তার বড় ভাই নিজে বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন হয়তো সকলের নাম দেয়া প্রাথমিক ভাবে সম্ভব না হলেও তদন্ত কালে যারাই ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন তিনি।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থী বলেছেন বেরোবির শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আসাদ মন্ডলকে এই মামলায় আসামী করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে সরাসরি অংশ নেবার কোন ভিডিও পাওয়া যায়নি। মুলক শিক্ষক রাজনীতির শিকার তিনি। মামলার বাদী নিহত আবু সাইদের বড় ভাই রমজান আলীও আসাদ মন্ডলের ব্যাপারে কিছু বলেননি।

সার্বিক বিষয়ে মামলার বাদী রমজান আলী জানান আবু সাইদ হত্যায় যারাই জড়িত তাদের সকলকেই আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।