নেপাল থেকে কেনা বিদ্যুতেও ভরসা ভারত
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৫৩:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ ২৬ বার পড়া হয়েছে
নেপালের উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতিইউনিটের খরচ গড়ে দেড় টাকার মতো। আর সেই দেড় টাকার জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশ কিনবে খরচসহ প্রায় ১০ টাকা দামে। এরইমধ্যে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনতে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের মধ্যে গত ৩ অক্টোবর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথোরিটি (এনইএ), এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভেপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রতিনিধি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। আগামী ৫ বছরের জন্য এই বিদ্যুৎ ক্রয়ে চুক্তি করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী বছরে ৫ মাস দৈনিক ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে নেপাল থেকে। ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর এই পাঁচ মাস নেপালের প্রতিষ্ঠান এনইএ ভারতের সীমান্ত মোজাফফরপুরে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। আগামী ১৫ জুন থেকে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করবে নেপাল।
প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসবে নেপালের এই বিদ্যুৎ। এতে যে সিস্টেম লস হবে, তাও বাংলাদেশকে দিতে হবে। চুক্তিতে বিদ্যুতের দাম ঠিক করা হয় ৬ দশমিক ৪ সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ টাকা ৭৪ পয়সা। এর সাথে যুক্ত হবে ভারতের সঞ্চালন লাইনের সর্বনিম্ন মাশুল ৯০ রুপি বা ১ টাকা ৪২ পয়সা। এ ছাড়া এনভিভিএনকে দশমিক শূন্য ৫৯৫ রুপি বা ৮৪ পয়সা ট্রেড মার্জিন দিতে হবে। যা যুক্ত করলে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়ায় ১০ টাকা। নেপাল অংশের অর্থ ডলারে দিতে হবে। ডলারের দাম বাড়লে এর সঙ্গে বাড়বে বিদ্যুতেরও দাম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ভারতের সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনছে গড়ে প্রতি ইউনিট ৩ থেকে ৪ টাকা দরে। বাংলাদেশে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, সেখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ৩ টাকা ৩৫ পয়সা। সে তুলনায় নেপালের বিদ্যুতের জন্য অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি, এখন বেশি দামে বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আনার আসল কারণ জানা যাচ্ছে না।
নেপাল সীমান্ত থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশের দূরত্ব ২২ থেকে ২৬ কিলোমিটার। এই স্বল্প দূরত্বে বাংলাদেশ বিদ্যুতের করিডর চেয়েছিল ভারতের কাছে। বাংলাদেশ নিজেই সেখানে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে নেবেও বলেছিল। কিন্তু ভারত বিদ্যুতের করিডর দেয়নি। এই কারণে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে ভারতীয় সঞ্চালন লাইনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
নেপালের দেয়া ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় সংস্থা এনভিভিএন পশ্চিমবঙ্গের বহরামপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে সরবরাহ করবে। এই দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। সঞ্চালনের জন্য ভারতের প্রতিষ্ঠান এনভিভিএন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ট্রেড মার্জিন বা লাভ দিতে হবে দশমিক শূন্য ৫৯৫ রুপি। এর বাইরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য পৃথক সঞ্চালন মাশুল বা ট্রান্সমিশন চার্জ দিতে হবে, তার পরিমাণ উল্লেখ নেই চুক্তিতে। ভারতকে ট্রান্সমিশন চার্জ ও ট্রেড মার্জিনের অর্থ দিতে হবে ভারতীয় রুপিতে।
পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, ভারতে সঞ্চালন মাশুলের হিসাব বেশ জটিল। এটি একেক রাজ্যে একেক রকম হয়। কত ভোল্টের সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে তার ওপর নির্ভর করে সঞ্চালনের মাশুল। যেহেতু মোজাফফরপুর থেকে সরাসরি বহরামপুর পর্যন্ত এই ৪৫০ কিলোমিটার কোনো ডেডিকেটেড লাইন নেই, সে কারণে ভারতের এনভিভিএন কী প্রক্রিয়ায় সঞ্চালন মাশুল নির্ধারণ করে, সেটা এখনো জানে না পিডিবি।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, যদি ভারতের এনভিভিএন ৪৫০ কিলোমিটারের সঞ্চালনের সিস্টেম লস ধরে, তাহলে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুতে এর প্রভাব পড়বে ভয়াবহ। কারণ এত অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ এত অধিক পথে আনা কোনোভাবেই আর্থিকভাবে যৌক্তিক না। ভারত মোজাফফরপুরে বিদ্যুৎ নেবে আর বাংলাদেশকে মূলত পশ্চিমবঙ্গের কোনো গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ দেবে। কিন্তু তারা যদি মোজাফফরপুর টু বহরামপুরের ৪৫০ কিলোমিটার দূরত্বের সঞ্চালন মাশুল ও ট্রান্সমিশন লস ধরে, তাহলে বাংলাদেশে এসে এই বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১১ টাকার ওপরে চলে যাবে। উল্লেখ্য, ভারতে সর্বনিম্ন সঞ্চালন মাশুল বা চার্জ প্রতি ইউনিটে ৯০ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ টাকা ৪২ পয়সা।