মেম্বারদের কাছে আস্থা হারালে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও সংসদীয় পদ্ধতির কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন একই আইনে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই করতে চায় সংস্কার কমিশন। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ-এসব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট হবে সদস্য বা কাউন্সিলর পদে। সদস্য বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার পর আগ্রহীরা মেয়ের বা চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হতে পারবেন। তারপর কাউন্সিলর বা সদস্যরা তাদের নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র ও চেয়ারম্যানরা জবাবদিহি করবেন কাউন্সিলর বা মেম্বারদের কাছে।
কাউন্সিলর বা মেম্বারদের কাছে আস্থা হারালে মেয়র বা চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হবে। তবে মেয়র, চেয়ারম্যানের পদ হারালেও কাউন্সিলর অথবা মেম্বার থেকে যাবেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ এসব কথা জানান।
এ সময় তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া উচিত। কারণ স্থানীয় নির্বাচন করার কারণে আমাদের কমিশনের সক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে যে সাপোর্ট দরকার হবে, তা নিশ্চিত হয়ে যাবে।
স্থানীয় সরকার হচ্ছে এক ব্যক্তিসর্বস্ব, মেয়র বা চেয়ারম্যাননির্ভর। কাউন্সিলর ও সদস্যরা এখানে কেউ নন। মেয়র, চেয়ারম্যানরা তাদের কিছু দিলে পাবেন, না দিলে পাবেন না। এই পদ্ধতি আমরা চালু করে রেখেছি। আবার এই পদ্ধতি এমনভাবে দলীয়করণ করে ফেলেছি যে অন্য কেউ এখানে আসতেও পারবে না। আগে অন্য দলের মেয়র, চেয়ারম্যানও থাকতেন। তখন একটা ভারসাম্য তৈরি হতো। এখন সে অবস্থা নেই। দলের বাইরে কেউ এসে গেলে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
আমরা যদি কলকাতা সিটি করপোরেশন দেখি, সেখানে প্রায় দেড় শ ওয়ার্ড আছে। মেয়র পদে সেখানে কেউ সরাসরি নির্বাচন করতে পারেন না। মেয়র হতে যিনি আকাঙ্ক্ষা রাখেন তাকে আগে কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হতে হয়। কাউন্সিলর নির্বাচনের পর নির্বাচিত কাউন্সিলররাই ঠিক করবেন কাকে তারা মেয়র করবেন। সেখানে দলীয় প্রতীকেই কাউন্সিলর নির্বাচন হয়।
সে হিসাবে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সে দল থেকেই একজন মেয়র নির্বাচিত হন। সেখানে মেয়রের শক্ত বিরোধী পক্ষ থাকে। বিরোধী দলের নেতা সেখানে ডেপুটি মেয়রের মর্যাদা পান। কলকাতা সিটি করপোরেশনের সভা পরিচালনার জন্য কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। তার ভূমিকা থাকে আমাদের জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো। সেখানে কাউন্সিলরদের কাজ হচ্ছে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মতো। তারা স্থায়ী কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান হন। সবাই সেখানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। এতে প্রতিষ্ঠানটি প্রাণবন্ত থাকে। আমাদের এখানে কাউন্সিল পদ্ধতি নেই।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশে জাতীয় নির্বাচন একটি, আর স্থানীয় নির্বাচন পাঁচটি। পাঁচটি স্থানীয় সরকারের মধ্যে তিনটির নির্বাচন-ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা প্রায় সারা দেশে হয়। সিটি করপোরেশন হয় মহানগর এলাকায়। জেলা পরিষদে আসলে কোনো নির্বাচনই হয় না। এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের আগে যদি জাতীয় নির্বাচনে যাই, তাহলে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা ঝুলে যাবে।
গত নির্বাচন কমিশনের করা স্থানীয় নির্বাচনে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১৯ থেকে ২০ লাখ লোক লেগেছে। ২২৫ দিনের মতো সময় লেগেছে। তাই স্থানীয় নির্বাচনে যদি পার্লামেন্টারি সিস্টেম নিয়ে আসি, তাহলে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন একই সিস্টেমে করতে পারব। খরচ নেমে আসবে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে। লোক লাগবে আট লাখ। সময় লাগবে ৪৫ দিন। এই সিস্টেমে যাওয়ার জন্য অধ্যাদেশ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব।