ঢাকা ০৮:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদ্যুৎ বন্ধ নয়, সমঝোতায় সায় আদানির

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বকেয়া বিল না পেলে আগামী বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) থেকে আদানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে এই খবরেক উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গ্রুপ। বরং উল্টো চলতি সপ্তাহে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিটি।

রবিবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে একটি সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়েছে, আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ডলার বকেয়া পরিশোধ করার কোনও আল্টিমেটাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) দেননি তারা। বকেয়া আদায়ের জন্য পিডিবির সঙ্গে আলোচনা চলছে। দু’পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চায় আদানি।

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, কয়লা আমদানি নিয়ে এলসি (ঋনপত্র) সংক্রান্ত একটা জটিলতা ছিল। সেটি দু-একদিনের মধ্যে কেটে যাবে। তখন বন্ধ থাকা দ্বিতীয় ইউনিটও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এর পাশাপাশি এ সপ্তাহে যদি পিডিবি কিছু পেমেন্ট দেয় তাহলে পুরোদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম দেশ বলেন, আদানির যে বকেয়া রয়েছে তার একটা পেমেন্ট আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এস এস পাওয়ার প্লান্টের (এস আলমের বিদ্যুৎ কেন্দ্র) বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আশাকরছি সোমবারের (আজ) মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। মাতারবাড়ি ও রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রও যাতে দ্রুত উৎপাদন শুরু করতে পারে সেই প্রচেষ্টা চলছে।

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই কয়লার দাম ও চুক্তির শর্ত নিয়ে দেশ-বিদেশে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। এক পর্যায়ে পিডিবির পক্ষ থেকে আদানিকে কয়লার চড়া দাম দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে কয়লা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। তবে এক বছর পর এখন আবার ২২ শতাংশ বাড়তি দাম চাইছে আদানি।

সূত্রমতে, পটুয়াখালীর পায়রায় নির্মিত এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতি টন কয়লার দাম নিচ্ছে ৭৫ মার্কিন ডলার। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস এস পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে টন প্রতি কয়লার দাম ৮০ ডলারের কম। আর আদানি প্রতি টন কয়লার দাম চাইছে ৯৬ ডলার।

বাড়তি দাম নিয়ে বিরোধ ও বকেয়া পরিশোধের তাগিদের মধ্যে সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর পিডিবিকে চিঠি দেয় আদানি। এতে বলা হয়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে পিডিবি বকেয়া পরিশোধ না করলে ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে আদানি। কারণ, চলতি মূলধনের সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

সূত্রমতে, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানিতে আদানির নামে ঋণপত্র (এলসি) খোলার কথা থাকলেও ডলার সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তখন পিডিবির পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে ১৪৯৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় আদানি। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে ৫০০ মেগাওয়াটের মতো পৌঁছায়। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে গড়ে প্রতিদিন ১৪০০ থেকে সাড়ে ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছিল। সময়মতো বিল না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে না পারার কারণেই এমন সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে আদানি।

পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি সপ্তাহে আদানির বিল পাওনা হচ্ছে দুই কোটি ২০ লাখ থেকে আড়াই কোটি ডলার। এর বিপরীতে পিডিবি তাদের পরিশোধ করছে এক কোটি ৮০ লাখ ডলারের মতো। আগে পরিশোধের পরিমাণ আরও কম ছিল। এতে অক্টোবর পর্যন্ত তাদের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৫ কোটি ডলার। অক্টোবরে বাংলাদেশ আদানিকে বিদ্যুতের বকেয়া বাবদ নয় কোটি ৭০ লাখ ডলার দিয়েছে। যা আগের তিন মাসের পরিশোধের চেয়ে বেশি।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনও কারণে আদানি যদি সত্যি সত্যি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয় তাহলে দেশে বিদ্যুতের বড় ধরনের ঘাটতির আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি ফুলিয়ে ফাপিয়ে বলা হচ্ছে-আদানির বিদ্যুৎ বন্ধ হলে বাংলাদেশের বৃহৎ অংশ অন্ধকারে ডুববে। এসব ধারণা একেবারেই অমূলক। কারণ গরম কমে যাওয়ায় বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদাও কমে গেছে। ফলে লোডশেডিং কিছুটা বাড়লেও বড় বিপর্যয়ের কোনও শঙ্কা নেই। প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবে সরকার।

এদিকে, কয়লা সংকটের কারণে এস আলম গ্রুপের ১২২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার এস এস পাওয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ থাকায় বর্তমানে কেন্দ্রটি থেকে গড়ে ৪শ থেকে ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এলসি জটিলতার কারণে তারা সময়মতো কয়লা আমদানি করতে পারেননি। এরমধ্যে ৬০ হাজার ৫শ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে একটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছেছে।

আগামী ৮ নভেম্বর আরও প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দেশে এসে পৌঁছাবে। একইভাবে ১২ এবং ১৬ তারিখেও একই পরিমাণ কয়লা আসবে। ফলে কয়লা নিয়ে আপাতত আর সংকট থাকবে না।

পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহে ঠিকাদার নির্বাচনে কিছু জটিলতার কারণে কেন্দ্রটির কয়লা আমদানি বেশ কিছুদিন বন্ধের কারণে পুরো কয়লা শেষ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে গত ২৫ অক্টোবর পুরোপুরি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। তবে ঠিকদার নিয়ে জটিলতার অবসান হওয়ার পর গত সপ্তাহে কয়লা সরবরাহের জন্য চুক্তি হয়েছে। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানির পর আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রটি চালু হবে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা।

এদিকে, কয়লা সংকটের কারণে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে করা ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আসছে। আগামী ১০ নভেম্বরের পর দুটি ইউনিট চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রেরও প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা দাঁড়িয়েছে পিডিবির কাছে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রেখেছে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এমনকি গত ৩১ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষনের জন্য একটি ইউনিট কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়ার পরে পিডিবির অনুরোধে তা পেছানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বিদ্যুৎ বন্ধ নয়, সমঝোতায় সায় আদানির

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

বকেয়া বিল না পেলে আগামী বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) থেকে আদানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে এই খবরেক উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গ্রুপ। বরং উল্টো চলতি সপ্তাহে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিটি।

রবিবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে একটি সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়েছে, আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ডলার বকেয়া পরিশোধ করার কোনও আল্টিমেটাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) দেননি তারা। বকেয়া আদায়ের জন্য পিডিবির সঙ্গে আলোচনা চলছে। দু’পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চায় আদানি।

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, কয়লা আমদানি নিয়ে এলসি (ঋনপত্র) সংক্রান্ত একটা জটিলতা ছিল। সেটি দু-একদিনের মধ্যে কেটে যাবে। তখন বন্ধ থাকা দ্বিতীয় ইউনিটও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এর পাশাপাশি এ সপ্তাহে যদি পিডিবি কিছু পেমেন্ট দেয় তাহলে পুরোদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম দেশ বলেন, আদানির যে বকেয়া রয়েছে তার একটা পেমেন্ট আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এস এস পাওয়ার প্লান্টের (এস আলমের বিদ্যুৎ কেন্দ্র) বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আশাকরছি সোমবারের (আজ) মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। মাতারবাড়ি ও রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রও যাতে দ্রুত উৎপাদন শুরু করতে পারে সেই প্রচেষ্টা চলছে।

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই কয়লার দাম ও চুক্তির শর্ত নিয়ে দেশ-বিদেশে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। এক পর্যায়ে পিডিবির পক্ষ থেকে আদানিকে কয়লার চড়া দাম দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে কয়লা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। তবে এক বছর পর এখন আবার ২২ শতাংশ বাড়তি দাম চাইছে আদানি।

সূত্রমতে, পটুয়াখালীর পায়রায় নির্মিত এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতি টন কয়লার দাম নিচ্ছে ৭৫ মার্কিন ডলার। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস এস পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে টন প্রতি কয়লার দাম ৮০ ডলারের কম। আর আদানি প্রতি টন কয়লার দাম চাইছে ৯৬ ডলার।

বাড়তি দাম নিয়ে বিরোধ ও বকেয়া পরিশোধের তাগিদের মধ্যে সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর পিডিবিকে চিঠি দেয় আদানি। এতে বলা হয়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে পিডিবি বকেয়া পরিশোধ না করলে ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে আদানি। কারণ, চলতি মূলধনের সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

সূত্রমতে, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানিতে আদানির নামে ঋণপত্র (এলসি) খোলার কথা থাকলেও ডলার সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তখন পিডিবির পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে ১৪৯৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় আদানি। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে ৫০০ মেগাওয়াটের মতো পৌঁছায়। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে গড়ে প্রতিদিন ১৪০০ থেকে সাড়ে ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছিল। সময়মতো বিল না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে না পারার কারণেই এমন সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে আদানি।

পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি সপ্তাহে আদানির বিল পাওনা হচ্ছে দুই কোটি ২০ লাখ থেকে আড়াই কোটি ডলার। এর বিপরীতে পিডিবি তাদের পরিশোধ করছে এক কোটি ৮০ লাখ ডলারের মতো। আগে পরিশোধের পরিমাণ আরও কম ছিল। এতে অক্টোবর পর্যন্ত তাদের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৫ কোটি ডলার। অক্টোবরে বাংলাদেশ আদানিকে বিদ্যুতের বকেয়া বাবদ নয় কোটি ৭০ লাখ ডলার দিয়েছে। যা আগের তিন মাসের পরিশোধের চেয়ে বেশি।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনও কারণে আদানি যদি সত্যি সত্যি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয় তাহলে দেশে বিদ্যুতের বড় ধরনের ঘাটতির আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি ফুলিয়ে ফাপিয়ে বলা হচ্ছে-আদানির বিদ্যুৎ বন্ধ হলে বাংলাদেশের বৃহৎ অংশ অন্ধকারে ডুববে। এসব ধারণা একেবারেই অমূলক। কারণ গরম কমে যাওয়ায় বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদাও কমে গেছে। ফলে লোডশেডিং কিছুটা বাড়লেও বড় বিপর্যয়ের কোনও শঙ্কা নেই। প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবে সরকার।

এদিকে, কয়লা সংকটের কারণে এস আলম গ্রুপের ১২২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার এস এস পাওয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ থাকায় বর্তমানে কেন্দ্রটি থেকে গড়ে ৪শ থেকে ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এলসি জটিলতার কারণে তারা সময়মতো কয়লা আমদানি করতে পারেননি। এরমধ্যে ৬০ হাজার ৫শ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে একটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছেছে।

আগামী ৮ নভেম্বর আরও প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দেশে এসে পৌঁছাবে। একইভাবে ১২ এবং ১৬ তারিখেও একই পরিমাণ কয়লা আসবে। ফলে কয়লা নিয়ে আপাতত আর সংকট থাকবে না।

পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহে ঠিকাদার নির্বাচনে কিছু জটিলতার কারণে কেন্দ্রটির কয়লা আমদানি বেশ কিছুদিন বন্ধের কারণে পুরো কয়লা শেষ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে গত ২৫ অক্টোবর পুরোপুরি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। তবে ঠিকদার নিয়ে জটিলতার অবসান হওয়ার পর গত সপ্তাহে কয়লা সরবরাহের জন্য চুক্তি হয়েছে। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানির পর আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রটি চালু হবে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা।

এদিকে, কয়লা সংকটের কারণে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে করা ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আসছে। আগামী ১০ নভেম্বরের পর দুটি ইউনিট চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রেরও প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা দাঁড়িয়েছে পিডিবির কাছে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রেখেছে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এমনকি গত ৩১ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষনের জন্য একটি ইউনিট কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়ার পরে পিডিবির অনুরোধে তা পেছানো হয়েছে।