ঢাকা ১১:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বসুন্ধরা পারলে কেন সিটি করপোরেশন পারবে না

ইমদাদুল হক মিলন
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভোররাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল । সারা রাত আকাশে মেঘ ছিল । আষাঢ় শেষ হয়ে আসছে । বর্ষাকাল । এখন এরকমই হওয়ার কথা । আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হবে হঠাৎ করেই । ঝুপ ঝুপ করে নামবে বৃষ্টি । কখনও থেকে থেকে, কখনও অবিরাম । এ বছরের বর্ষায় প্রবল বৃষ্টি হতে পারে, আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন । জলবায়ু পরিবর্তন এখন পৃথিবীর সবচাইতে বড় সমস্যা । যেদিন আমরা পিছনে ফেলে এসেছি, যে আবহাওয়ায় বড় হয়েছি, সেই আবহাওয়া এখন আর নেই । শীতের দেশগুলোতে তীব্র গরম পড়ছে । শীতকালে শীত পড়ছে আগের তুলনায় বেশি । বরফের পাহাড় গলে যাচ্ছে আন্টার্টিকায় । দাবানলে পুড়ছে আমেরিকার বনভূমি । প্রকৃতি উল্টো- পাল্টা হয়ে গেছে । বদলে গেছে বহু কিছু ।

আরও পড়ুন :গরু ‘মাফিয়া’ ইমরান, সঙ্গী ছিলো বেনজীরও

এ বছরের গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল । মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা । জীবজগৎ বিপর্যস্ত । আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, বর্ষায় প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে । ক’দিন আগে তাই হলো । ভোররাত থেকে বৃষ্টি । সকাল দশটা এগারোটা পর্যস্ত থামার নাম নেই । আকাশ অন্ধকার হয়ে আছে । বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছায়াময় পরিবেশ । আমি একটু বেলা করে উঠেছি । মধ্যমাত্রার বৃষ্টি তখনও ঝরছে । দুপুর নাগাদ টেলিভিশন আর অনলাইনগুলো দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম । ঢাকা শহরের বহু এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে । রিকশার পাদানিতে উঠে গেছে পানি । বাসের চাকা ডুবে গেছে । প্রাইভেটকার ডুবে গেছে, জেগে আছে শুধু গাড়ির ছাদটুকু । নিউমার্কেট আর কাঁটাবন এলাকার দোকানপাটের ভিতর কোমর পানি । ছোট আর মাঝারি ব্যবসায়ীরা পড়ে গেছেন ব্যাপক সংকটে । দোকানের মালামাল রক্ষা করতে পারেননি । সব ভেসে গেছে বৃষ্টিতে । শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে ।

আরও পড়ুন :প্রশ্নফাঁসের টাকা পেতেন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা!

অন্যদিকে মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ । কর্মস্থলে যাওয়া মানুষ, বাড়ি ফেরার মানুষ, ছাত্র- ছাত্রী প্রত্যেকেই পড়েছে চরম দুর্ভোগে । গাড়ি চলছে না । হেঁটে বাড়ি ফিরছে মানুষ । তাদের কোমরের ওপর পর্যন্ত পানি । পুরান ঢাকার অলিগলি রাজপথ ডুবে গেছে । ঘরে ঢুকে গেছে পানি । মানুষ দিশেহারা । এ অবস্থা কেমন করে সামাল দেবে? এক বেলার বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত । অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য । কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না । বৃষ্টি হলেই ডুবছে রাস্তাঘাট । বিপাকে পড়ছে মানুষ । আবহাওয়াবিদদের সাবধানতা বা ভবিষ্যদ্বাণী সিটি করপোরেশন দুটো সেভাবে মনে রাখেনি ।

মনে রেখে আগাম ব্যবস্থা নিলে শহরবাসী এরকম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ত না । এই বিষয়ে দুই মেয়রের তীক্ষ্ণ নজর থাকা জরুরি ছিল । ঢাকার খালগুলো প্রায় সবই বুজে গেছে । দখল হয়ে গেছে । সবই আছে খালগুলোতে, শুধু পানিটাই নেই । পানির প্রবাহ বলতে কিছু নেই । ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে গেছে একেকটা খাল । মেয়র মহোদয়দের দেখি, প্রায়ই খাল উদ্ধারের অভিযান করছেন । দু- একটা খাল দখল মুক্তও করছেন । তারপর আর খবর নেই । আগের মতো দখল হয়ে যাচ্ছে । আরেক মহাশত্রু হয়েছে পলিথিন । এই জিনিসের কোনও বিনাশ নেই । শুধুমাত্র পলিথিনই ডুবিয়ে দিচ্ছে অনেক অর্জন ।

আরও পড়ুন :বেনজীরের আলাদীনের চেরাগ দুদকে বন্দি

এই বিষয়টি নিয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি । পলিথিনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে দেশ । পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা কাজে লাগাতে হবে । এক্ষেত্রে সরকার ও মিডিয়া মিলে জনসচেতনা গড়ে তোলা জরুরি । মানুষ সচেতন হলে সমাজ পরিশিলিত হয় । গত তিরিশ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা । এখন বসুন্ধরা ঢাকার সবচাইতে অভিজাত এলাকা । সবচাইতে আকর্ষণীয় এলাকা । বসুন্ধরায় কারও একটি ফ্ল্যাট বা কারও এক টুকরো জমি থাকলে তিনি খুব গৌরববোধ করেন । বসুন্ধরার মতো সুবিন্যস্ত আবাসিক এলাকা ঢাকায় আর নেই । এলাকাটির পরিকল্পনা করা হয়েছে সম্পূর্ণতই ইউরোপ- আমেরিকার ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর লাগোয়া অতি আধুনিক আবাসিক শহরগুলোর মতো করে ।

সুপরিকল্পিত ও সুব্যবস্থাপূর্ণ । বড় বড় রাস্তা । রাস্তার ধার আর আইল্যান্ডগুলো সবুজ গাছপালায় ভর্তি । রাজউকের বিল্ডিংকোড মেনে নির্মিত প্রতিটি বাড়ি । সঙ্গে আছে বসুন্ধরার নিজস্ব কঠোর তদারকি । নিয়মের বাইরে একটি ইটও বসানো যাবে না । একটি গাছের পাতাও ছেঁড়া যাবে না । অন্যদিকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা । পুরুষমানুষরা তো বটেই, নারী ও শিশুরা চাইলেও রাত দুপুরে বাড়ির বাইরে বেড়াতে বেরোতে পারে । ডিস্টার্ব করা তো দূরের কথা, চোখ তুলেও তাকাবার সাহস পাবে না কেউ । নিরাপত্তায় নিয়োজিত গাড়িভর্তি কর্মী চব্বিশঘণ্টা টহল দিচ্ছে ।

আরও পড়ুন :ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কলকাতায় যাচ্ছেন স্ত্রী ও মেয়ে

ঢাকার ভিতরেই বসুন্ধরা সম্পূর্ণ এক আলাদা জগৎ । স্বপ্নের বাসভূমি । এটা সম্ভব হয়েছে সুপরিকল্পনা ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন আর প্রয়োগের ফলে । গত কয়েক বছর আগে বর্ষার বৃষ্টিতে বসুন্ধরার কোথাও কোথাও পানি জমে যেত । এই নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন কর্তৃপক্ষ । সুদূর প্রসারী আধুনিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে রাতারাতি সামাল দিলেন সেই সমস্যা । গড়ে তুললেন অত্যাধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা । যত বৃষ্টিই হোক, বসুন্ধরায় এখন আর পানি জমে না । জোরালো ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টির পানি এক মিনিটও দাঁড়াতে পারে না । সঙ্গে আছে এলাকার ড্রেনগুলোর সঠিক তদারকি । পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বহুকর্মী নিয়োজিত এই কাজে । কী নেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়? হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, খেলার মাঠ, শপিং মল, সুন্দর সুন্দর মসজিদ, গোরস্থান, অতি আধুনিক সব রেস্টুরেন্ট । এক কথায় সব মিলিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা বর্তমান বিশ্বের অতি আধুনিক এক মনোরম শহর ।

আরও পড়ুন : কোটা ইস্যু: ঢাবিতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা নিয়ে কথাগুলো বলার কারণ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা । বসুন্ধরায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার অনুকরণ করে তাঁরা খুব সহজেই হঠাৎ বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা শহরকে অনেকখানি মুক্তি দিতে পারেন ।

মানুষকে দুর্ভোগ মুক্ত করতে পারেন, ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে পারেন ক্ষতির হাত থেকে । ছাত্র- ছাত্রী আর পথচলা মানুষদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পারেন । বৃষ্টির তোড়ে হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়া গৃহবাসীদের সুরক্ষা দিতে পারেন । এই শহরের মানুষকে স্বস্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে পারেন । এসব তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে । বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয় তাঁরা ভাববেন । তাঁদের চোখের সামনেই তো উদাহরণ হিসেবে আছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বসুন্ধরা পারলে কেন সিটি করপোরেশন পারবে না

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

ভোররাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল । সারা রাত আকাশে মেঘ ছিল । আষাঢ় শেষ হয়ে আসছে । বর্ষাকাল । এখন এরকমই হওয়ার কথা । আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হবে হঠাৎ করেই । ঝুপ ঝুপ করে নামবে বৃষ্টি । কখনও থেকে থেকে, কখনও অবিরাম । এ বছরের বর্ষায় প্রবল বৃষ্টি হতে পারে, আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন । জলবায়ু পরিবর্তন এখন পৃথিবীর সবচাইতে বড় সমস্যা । যেদিন আমরা পিছনে ফেলে এসেছি, যে আবহাওয়ায় বড় হয়েছি, সেই আবহাওয়া এখন আর নেই । শীতের দেশগুলোতে তীব্র গরম পড়ছে । শীতকালে শীত পড়ছে আগের তুলনায় বেশি । বরফের পাহাড় গলে যাচ্ছে আন্টার্টিকায় । দাবানলে পুড়ছে আমেরিকার বনভূমি । প্রকৃতি উল্টো- পাল্টা হয়ে গেছে । বদলে গেছে বহু কিছু ।

আরও পড়ুন :গরু ‘মাফিয়া’ ইমরান, সঙ্গী ছিলো বেনজীরও

এ বছরের গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল । মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা । জীবজগৎ বিপর্যস্ত । আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, বর্ষায় প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে । ক’দিন আগে তাই হলো । ভোররাত থেকে বৃষ্টি । সকাল দশটা এগারোটা পর্যস্ত থামার নাম নেই । আকাশ অন্ধকার হয়ে আছে । বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছায়াময় পরিবেশ । আমি একটু বেলা করে উঠেছি । মধ্যমাত্রার বৃষ্টি তখনও ঝরছে । দুপুর নাগাদ টেলিভিশন আর অনলাইনগুলো দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম । ঢাকা শহরের বহু এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে । রিকশার পাদানিতে উঠে গেছে পানি । বাসের চাকা ডুবে গেছে । প্রাইভেটকার ডুবে গেছে, জেগে আছে শুধু গাড়ির ছাদটুকু । নিউমার্কেট আর কাঁটাবন এলাকার দোকানপাটের ভিতর কোমর পানি । ছোট আর মাঝারি ব্যবসায়ীরা পড়ে গেছেন ব্যাপক সংকটে । দোকানের মালামাল রক্ষা করতে পারেননি । সব ভেসে গেছে বৃষ্টিতে । শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে ।

আরও পড়ুন :প্রশ্নফাঁসের টাকা পেতেন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা!

অন্যদিকে মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ । কর্মস্থলে যাওয়া মানুষ, বাড়ি ফেরার মানুষ, ছাত্র- ছাত্রী প্রত্যেকেই পড়েছে চরম দুর্ভোগে । গাড়ি চলছে না । হেঁটে বাড়ি ফিরছে মানুষ । তাদের কোমরের ওপর পর্যন্ত পানি । পুরান ঢাকার অলিগলি রাজপথ ডুবে গেছে । ঘরে ঢুকে গেছে পানি । মানুষ দিশেহারা । এ অবস্থা কেমন করে সামাল দেবে? এক বেলার বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত । অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য । কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না । বৃষ্টি হলেই ডুবছে রাস্তাঘাট । বিপাকে পড়ছে মানুষ । আবহাওয়াবিদদের সাবধানতা বা ভবিষ্যদ্বাণী সিটি করপোরেশন দুটো সেভাবে মনে রাখেনি ।

মনে রেখে আগাম ব্যবস্থা নিলে শহরবাসী এরকম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ত না । এই বিষয়ে দুই মেয়রের তীক্ষ্ণ নজর থাকা জরুরি ছিল । ঢাকার খালগুলো প্রায় সবই বুজে গেছে । দখল হয়ে গেছে । সবই আছে খালগুলোতে, শুধু পানিটাই নেই । পানির প্রবাহ বলতে কিছু নেই । ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে গেছে একেকটা খাল । মেয়র মহোদয়দের দেখি, প্রায়ই খাল উদ্ধারের অভিযান করছেন । দু- একটা খাল দখল মুক্তও করছেন । তারপর আর খবর নেই । আগের মতো দখল হয়ে যাচ্ছে । আরেক মহাশত্রু হয়েছে পলিথিন । এই জিনিসের কোনও বিনাশ নেই । শুধুমাত্র পলিথিনই ডুবিয়ে দিচ্ছে অনেক অর্জন ।

আরও পড়ুন :বেনজীরের আলাদীনের চেরাগ দুদকে বন্দি

এই বিষয়টি নিয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি । পলিথিনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে দেশ । পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা কাজে লাগাতে হবে । এক্ষেত্রে সরকার ও মিডিয়া মিলে জনসচেতনা গড়ে তোলা জরুরি । মানুষ সচেতন হলে সমাজ পরিশিলিত হয় । গত তিরিশ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা । এখন বসুন্ধরা ঢাকার সবচাইতে অভিজাত এলাকা । সবচাইতে আকর্ষণীয় এলাকা । বসুন্ধরায় কারও একটি ফ্ল্যাট বা কারও এক টুকরো জমি থাকলে তিনি খুব গৌরববোধ করেন । বসুন্ধরার মতো সুবিন্যস্ত আবাসিক এলাকা ঢাকায় আর নেই । এলাকাটির পরিকল্পনা করা হয়েছে সম্পূর্ণতই ইউরোপ- আমেরিকার ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর লাগোয়া অতি আধুনিক আবাসিক শহরগুলোর মতো করে ।

সুপরিকল্পিত ও সুব্যবস্থাপূর্ণ । বড় বড় রাস্তা । রাস্তার ধার আর আইল্যান্ডগুলো সবুজ গাছপালায় ভর্তি । রাজউকের বিল্ডিংকোড মেনে নির্মিত প্রতিটি বাড়ি । সঙ্গে আছে বসুন্ধরার নিজস্ব কঠোর তদারকি । নিয়মের বাইরে একটি ইটও বসানো যাবে না । একটি গাছের পাতাও ছেঁড়া যাবে না । অন্যদিকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা । পুরুষমানুষরা তো বটেই, নারী ও শিশুরা চাইলেও রাত দুপুরে বাড়ির বাইরে বেড়াতে বেরোতে পারে । ডিস্টার্ব করা তো দূরের কথা, চোখ তুলেও তাকাবার সাহস পাবে না কেউ । নিরাপত্তায় নিয়োজিত গাড়িভর্তি কর্মী চব্বিশঘণ্টা টহল দিচ্ছে ।

আরও পড়ুন :ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কলকাতায় যাচ্ছেন স্ত্রী ও মেয়ে

ঢাকার ভিতরেই বসুন্ধরা সম্পূর্ণ এক আলাদা জগৎ । স্বপ্নের বাসভূমি । এটা সম্ভব হয়েছে সুপরিকল্পনা ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন আর প্রয়োগের ফলে । গত কয়েক বছর আগে বর্ষার বৃষ্টিতে বসুন্ধরার কোথাও কোথাও পানি জমে যেত । এই নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন কর্তৃপক্ষ । সুদূর প্রসারী আধুনিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে রাতারাতি সামাল দিলেন সেই সমস্যা । গড়ে তুললেন অত্যাধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা । যত বৃষ্টিই হোক, বসুন্ধরায় এখন আর পানি জমে না । জোরালো ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টির পানি এক মিনিটও দাঁড়াতে পারে না । সঙ্গে আছে এলাকার ড্রেনগুলোর সঠিক তদারকি । পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বহুকর্মী নিয়োজিত এই কাজে । কী নেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়? হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, খেলার মাঠ, শপিং মল, সুন্দর সুন্দর মসজিদ, গোরস্থান, অতি আধুনিক সব রেস্টুরেন্ট । এক কথায় সব মিলিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা বর্তমান বিশ্বের অতি আধুনিক এক মনোরম শহর ।

আরও পড়ুন : কোটা ইস্যু: ঢাবিতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা নিয়ে কথাগুলো বলার কারণ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা । বসুন্ধরায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার অনুকরণ করে তাঁরা খুব সহজেই হঠাৎ বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা শহরকে অনেকখানি মুক্তি দিতে পারেন ।

মানুষকে দুর্ভোগ মুক্ত করতে পারেন, ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে পারেন ক্ষতির হাত থেকে । ছাত্র- ছাত্রী আর পথচলা মানুষদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পারেন । বৃষ্টির তোড়ে হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়া গৃহবাসীদের সুরক্ষা দিতে পারেন । এই শহরের মানুষকে স্বস্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে পারেন । এসব তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে । বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয় তাঁরা ভাববেন । তাঁদের চোখের সামনেই তো উদাহরণ হিসেবে আছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ।