এনবিআরের মতিউরের পরিবারের শত শত কোটির সম্পদ!
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৫১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪ ১৫৬ বার পড়া হয়েছে
ছাগলকান্ডে আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের নামে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদিসহ অন্তত ৬ জেলায় শত শত কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। কোথাও বাংলো বাড়ি, আবার কোথাও রিসোর্ট, কোথাও শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছেন এই কর্মকর্তা। সম্পত্তির মালিকানায় রয়েছেন ২ স্ত্রী, সন্তান ও ভাইয়েরা।
নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, আধাকাঁচা সড়কের ওপর উঁচু প্রাচীরে ঘেরা সুরম্য প্রাসাদ। বিশাল ফটক পেরোলেই ডুপ্লেক্স ভবন। এর সামনে দেশিবিদেশি গাছে সাজানো বাগান। তার পেছনে পুকুর। অন্যপাশে ছোট দুটি একতলা ভবন। কল্পনার এই প্রাসাদ রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির গ্রামের ঠিকানা।
মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের গ্রামের বাড়িটিও চারদিকে সবুজে ঘেরা। মাঝখানে একটি দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাপুরে বাড়িটি নির্মাণ করা হয় বছর দশেক আগে। দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে ঢাকায় রয়েছে অন্তত দুটি ফ্ল্যাট।
তবে স্থাবর সম্পদের ভাগ বেশি পেয়েছেন প্রথম স্ত্রী। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে লতায় মোড়ানো ৭তলা একটি ভবন রয়েছে লায়লা কানিজ লাকির নামে। ভবনের ৭তলা বিশেষভাবে সাজানো। এখানেই বাস করেন মতিউর ও লাকি।
এর খানিক পাশেই সাড়ে ১৩ কাঠা জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৫ তলা বিলাসবহুল ভবন। এতে থাকবে সুইমিং পুল, ব্যায়ামগারসহ আধুনিক নানা সুবিধা। স্থানীয়রা জানান, এই জমির মালিক মতিউরের পরিবার।
এছাড়াও চার জেলা জুড়ে মতিউর পরিবারের বাণিজ্যিক ও শিল্প স্থাপনার প্রমাণ মিলেছে। নরসিংদীর মরজালে প্রায় শতবিঘা জমির ওপর পার্ক কাম রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন মতিউরের প্রথম স্ত্রী। বিশাল লেক, শিশুদের রাইড, বাংলো, বাগান কী নেই সেখানে। এই পার্ক নির্মাণে জমি দখলেরও অভিযোগ মিলেছে।
এছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর এলাকার পাশেই ৩০০ বিঘা জমির ওপর গ্লোবাল জুতার ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান। ফ্যাক্টরিতে দেশি-বিদেশি প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ করে।
জানা গেছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মতিউর রহমান, তার স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের নামে রয়েছে ৪০টি প্লট। নরসিংদীর বেলাবতে রয়েছে ৪০ বিঘা জমির ওপর বিলাসবহুল রিসোর্ট। রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে শাহবুদ্দিন পার্কের উল্টোদিকে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের একটি ভবনে ৪টি ফ্ল্যাটও । এর প্রতিটির দাম ৫ কোটি টাকা করে। গুলশানের শান্তা প্রোপার্টিজের একাধিক প্রজেক্টে রয়েছে আটটি ফ্ল্যাট। গোয়েন্দা তথ্যমতে, মতিউরের একটি ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ১১৭ কোটি টাকা।
এছাড়াও গাজীপুর সদর, রাজধানীর খিলগাঁও মৌজায় বিভিন্ন দাগে ৪৭ শতাংশ জমি। সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ৮টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে এই কর্মকর্তার। যার দাম প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় রয়েছে ১৪ শতাং। গাজীপুর সদরে ৪৮ দশমিক ১৬ শতাংশ ও অন্য দাগে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে। ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে গাজীপুরে ৪৫ শতাংশ জমির খবর পাওয়া গেছে। গ্লোবাল সুজ লিমিটেড নামে গাজীপুরে রয়েছে ৭ খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি। এর মূল্য ৯০ কোটি টাকা।
এখানে শেষ নয়। রাজধানীর পুবাইলে ৪০ বিঘা জমিতে ‘আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট’ নামে একটি রিসোর্ট রয়েছে মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজের। পুবাইলের খিলগাঁও মৌজায় আরো ৬০ বিঘা জমি রয়েছে।
অভিযোগ ওঠার পর এনবিআর কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। মতিউর রহমানকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এরমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।