ছাগলকাণ্ডের পর উপজেলা পরিষদে অনুপস্থিত চেয়ারম্যান লায়লা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪৩:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪ ১০৯ বার পড়া হয়েছে
ছাগলকাণ্ডের পর আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে জনসমক্ষে আর দেখা যাচ্ছে না। কার্যালয়েও আসছেন না। বাড়িতেও নেই, মুঠোফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।
রোববার (২৩ জুন) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউএনও ইকবাল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অনুপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ। পরিষদে তার কক্ষটিও তালাবদ্ধ।
এদিকে, উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তারা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ ঈদের দু’দিন আগে সর্বশেষ অফিস করেন। ঈদের ছুটি শেষ হলেও কার্যালয়ে আসেননি তিনি। তাদের ধারণা, ছাগলকাণ্ডে তিনিও বিব্রত।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান বলেন, লায়লা কানিজ ব্যক্তিগত কারণে আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু, কবে আসবেন তা বলেননি। ছুটিও নেননি।
সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন লায়লা কানিজ। ২০২২ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে এসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হন তিনি। রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বেও। ছাগলকাণ্ডের পর তার সম্পদের বিবরণ শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
হলফনামায় লায়লা কানিজের যত সম্পদ: সদ্য শেষ হওয়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও লায়লা কানিজ চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হয়। এ কারণে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনের হলফনামায় দেখা যায়, লায়লা কানিজের সম্পদের মধ্যে ১৫৪ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে রাজউকে ৫ কাঠা, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ,সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ জমি।
নির্বাচনী হলফনামার তথ্যমতে, লায়লা কানিজের বার্ষিক আয় কৃষি খাত থেকে ১৮ লাখ টাকা। আর বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে নয় লাখ ৯০ হাজার। শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫। ব্যাংক সুদ থেকে এক লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, লায়লা কানিজ এসব সম্পদ গড়েছেন তার স্বামী আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের অবৈধ উপার্জনে। শিক্ষকতার আয়ে বা পেনশনের টাকায় তার এতো সম্পদ থাকার কথা নয়।
এসব বিষয়ে জানতে লায়লা কানিজের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেন বলেন, ম্যাডাম (লায়লা কানিজ) রায়পুরায় নেই, তিনি ঢাকায় রয়েছেন।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, লায়লা কানিজ সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করলেও রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সাথে বিয়ের পর তার ভাগ্য খুলে যায়। এমপি রাজিউদ্দীন আহমেদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে তার উত্থান। মরজাল এলাকায় পৈতৃক বাড়িতে একটি ডুপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি।