ঢাকা ১০:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাশিমপুর কারাগার থেকে ১২৭ জন বিডিআর সদস্য কারামুক্ত

‘বাবাকে আমি চিনিনা, বড় হয়ে শুনেছি কারাগারে বন্দি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৭:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫ ১৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পিলখানায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় জামিনের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১২৭ জন বিডিআর সদস্য কারামুক্ত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার সময় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১২৮ জন বন্দির মধ্যে ১৩ জন মুক্তি পান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন কাশিমপুর হাই,সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন,বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে ১৩ বিডিআর সদস্যদের মুক্তির কাগজপত্র কারাগারে আসলে তা যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোন মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়।

একই দিনে বেলা সাড়ে ১১ টার সময় কারাগার-১ থেকে ২৫ জন বিডিআর সদস্য মুক্তি পান। বিষয়টি নিশ্চিত করে কাশিমপুর কারাগার-১ এর জেল সুপার মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, ৮৪ জন বিডিআর সদস্যদের মধ্যে জামিন পাওয়া ২৫ জনকে কারামুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের মুক্তির কাগজপত্র কারাগারে আসলে তা যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোন মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সবশেষ দুপুর দেড়টার সময় কারাগার -২ থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া ৭৯ জন বিডিআর সদস্য কারামুক্ত হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কাশিমপুর কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার মোঃ আল মামুন বলেন,৩৭৮ জন বন্দির মধ্যে ৭৯ জন জামিন পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোন মামলায় আটকাদেশ না থাকায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ১২৭ জন বিডিআর সদস্যের মুক্তির খবরে সকাল থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। প্রথমে সকাল সাড়ে দশটার সময় হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জন বিডিআর সদস্য বের হন। এর পর পর্যায়ক্রমে কারাগার-১ ও কারাগার-২ থেকে ১১৪ জন বিডিআর সদস্য বের হন। এ সময় জামিনে মুক্তি পাওয়া বিডিআর সদস্যরা পরিবারের সদস্যদের দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরিবার ও বিডিআর সদস্যদের আহাজারিতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে এক হৃদয় বিধায়ক ঘটনার সৃষ্টি হয়।

জামিনে মুক্তি পাওয়া ময়মনসিংহ ৪৫ ব্যাটেলিয়ন এর সিপাহী মো: এনামুল বলেন, আমরা যারা নিরপরাধ ছিলাম, আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাইঠাছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার তাদের সবাইকে পূনরায় চাকুরীতে পূনর্বহাল করতে হবে। সকল প্রকার সুযোগ সবিধা দিতে হবে। এঘটনায় যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের শাস্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের এ বিষয়ে কোন কিছু বলা হয়নি, শুধু বলা হয়েছে সাক্ষী দিতে হবে। কার নামে সাক্ষী দিতে হবে আমরা কিছুই জানিনা। সাক্ষী দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাদের মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠায় খুনি হাসিনা সরকার ।

সদ্য মুক্তি পাওয়া ঢাকা সদর ব্যাটিলয়ন এর সিপাহী আবু হাসান জানান,যখন বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনা ঘটে তখন আমার চাকরির বয়স ছয় মাস। পিলখানাতে পাঁচটি গেট আছে সেই পাঁচটি গেটই আমি চিনতাম না। অথচ আমাকে করা হয়েছে আসামি। যেসব সিনিয়র স্যারদের আমরা পিতা সমতুল্য সম্মান করতাম আজকে তাদের হত্যার দায়ে আমাদের মিথ্যা মামলায় কারা ভোগ করতে হয়েছে ১৬ টি বছর।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমরা যেন আমাদের হারানো সম্মান ফিরে পাই।

ঢাকা সদর ব্যাটলিয়ন এর আরেক সিপাহী জামাল উদ্দিন খানের মেয়ে জুয়েনা জামাল ঐশী বলেন, আমার বাবাকে আমি চিনিনা। বড় হয়ে শুনেছি । আমার বয়স যখন ১ বছর তখন আমার বাবাকে বিডিআর হত্যা মামালায় আসামি করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাবার মুখ দেখতে পারবো। এই অনুভূতির কথা বলে শেষ করা যাবে। কোনদিন বাবার আদর পায়নি। আজ মন ভরে বাবাকে দেখবো। জুয়েনা জামাল ঐশী যখন কথা বলছিলেন তার চোখের পানি টলমল করে গাল বেয়ে পরছিল।

উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ও যাদের বিরুদ্ধে কোনো আপিল হয়নি এমন দুই শতাধিক আসামি। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার অস্থায়ী আদালত তাদের এই জামিন দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

কাশিমপুর কারাগার থেকে ১২৭ জন বিডিআর সদস্য কারামুক্ত

‘বাবাকে আমি চিনিনা, বড় হয়ে শুনেছি কারাগারে বন্দি’

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৭:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

পিলখানায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় জামিনের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১২৭ জন বিডিআর সদস্য কারামুক্ত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার সময় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১২৮ জন বন্দির মধ্যে ১৩ জন মুক্তি পান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন কাশিমপুর হাই,সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন,বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে ১৩ বিডিআর সদস্যদের মুক্তির কাগজপত্র কারাগারে আসলে তা যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোন মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়।

একই দিনে বেলা সাড়ে ১১ টার সময় কারাগার-১ থেকে ২৫ জন বিডিআর সদস্য মুক্তি পান। বিষয়টি নিশ্চিত করে কাশিমপুর কারাগার-১ এর জেল সুপার মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, ৮৪ জন বিডিআর সদস্যদের মধ্যে জামিন পাওয়া ২৫ জনকে কারামুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের মুক্তির কাগজপত্র কারাগারে আসলে তা যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোন মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সবশেষ দুপুর দেড়টার সময় কারাগার -২ থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া ৭৯ জন বিডিআর সদস্য কারামুক্ত হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কাশিমপুর কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার মোঃ আল মামুন বলেন,৩৭৮ জন বন্দির মধ্যে ৭৯ জন জামিন পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোন মামলায় আটকাদেশ না থাকায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ১২৭ জন বিডিআর সদস্যের মুক্তির খবরে সকাল থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। প্রথমে সকাল সাড়ে দশটার সময় হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জন বিডিআর সদস্য বের হন। এর পর পর্যায়ক্রমে কারাগার-১ ও কারাগার-২ থেকে ১১৪ জন বিডিআর সদস্য বের হন। এ সময় জামিনে মুক্তি পাওয়া বিডিআর সদস্যরা পরিবারের সদস্যদের দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরিবার ও বিডিআর সদস্যদের আহাজারিতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে এক হৃদয় বিধায়ক ঘটনার সৃষ্টি হয়।

জামিনে মুক্তি পাওয়া ময়মনসিংহ ৪৫ ব্যাটেলিয়ন এর সিপাহী মো: এনামুল বলেন, আমরা যারা নিরপরাধ ছিলাম, আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাইঠাছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার তাদের সবাইকে পূনরায় চাকুরীতে পূনর্বহাল করতে হবে। সকল প্রকার সুযোগ সবিধা দিতে হবে। এঘটনায় যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের শাস্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের এ বিষয়ে কোন কিছু বলা হয়নি, শুধু বলা হয়েছে সাক্ষী দিতে হবে। কার নামে সাক্ষী দিতে হবে আমরা কিছুই জানিনা। সাক্ষী দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাদের মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠায় খুনি হাসিনা সরকার ।

সদ্য মুক্তি পাওয়া ঢাকা সদর ব্যাটিলয়ন এর সিপাহী আবু হাসান জানান,যখন বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনা ঘটে তখন আমার চাকরির বয়স ছয় মাস। পিলখানাতে পাঁচটি গেট আছে সেই পাঁচটি গেটই আমি চিনতাম না। অথচ আমাকে করা হয়েছে আসামি। যেসব সিনিয়র স্যারদের আমরা পিতা সমতুল্য সম্মান করতাম আজকে তাদের হত্যার দায়ে আমাদের মিথ্যা মামলায় কারা ভোগ করতে হয়েছে ১৬ টি বছর।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমরা যেন আমাদের হারানো সম্মান ফিরে পাই।

ঢাকা সদর ব্যাটলিয়ন এর আরেক সিপাহী জামাল উদ্দিন খানের মেয়ে জুয়েনা জামাল ঐশী বলেন, আমার বাবাকে আমি চিনিনা। বড় হয়ে শুনেছি । আমার বয়স যখন ১ বছর তখন আমার বাবাকে বিডিআর হত্যা মামালায় আসামি করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাবার মুখ দেখতে পারবো। এই অনুভূতির কথা বলে শেষ করা যাবে। কোনদিন বাবার আদর পায়নি। আজ মন ভরে বাবাকে দেখবো। জুয়েনা জামাল ঐশী যখন কথা বলছিলেন তার চোখের পানি টলমল করে গাল বেয়ে পরছিল।

উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ও যাদের বিরুদ্ধে কোনো আপিল হয়নি এমন দুই শতাধিক আসামি। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার অস্থায়ী আদালত তাদের এই জামিন দেন।