মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্থা: ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতারা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ৫৭ বার পড়া হয়েছে
কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্থার ঘটনায় মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের ৩দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তারা গ্রেফতার হয়নি।
তবে এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে গত মঙ্গলবার ৫ জনকে গ্রেফতারের পর ৫৪ ধারায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। এর মধ্যে এজাহারে নাম না থাকায় ৪ আসামীর জামিন প্রদান করেছে আদালত। অপর আসামী এজাহার নামীয় হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছে পুলিশ। ঘটনার ৬দিনেও মূলহোতারা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু ও তার পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গত রবিবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্থা করা হয়। এসময় আবদুল হাই কানুকে এলাকাছাড়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরিবারের অভিযোগ, হেনস্থাকারী লোকজন স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে হেনস্থার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত সোমবার রাতে ৫জনকে আটক করে পুলিশ। পরে গত মঙ্গলবার ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এরই মধ্যে আবদুল হাই কানুর দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে চারজনের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। এজাহারে নাম থাকায় অপর একজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, জুতার মালা পরানোয় ১শ কোটি টাকার মানহানি এবং মারধরের অভিযোগে ওই মুক্তিযোদ্ধার দায়েরকৃত মামলাটি গত বুধবার রাতে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করা হয়। মামলায় ১০ জনকে অভিযুক্ত করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়।
এদিকে মামলা দায়েরের ৩দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে ঘটনার সাথে জড়িত মূল হোতারা। এ নিয়ে ওই মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে ঘটনার সাথে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করা হলেও গত সোমবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের বিবৃতিতে দলটির দুই সমর্থককে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু সাংবাদিকদের বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার গলায় জুতার মালা দেওয়া মানে সব মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেওয়া। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই অপমানের বিচার চাই।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এ টি এম আক্তার উজ জামান সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযোদ্ধার দায়েরকৃত মামলায় কুলিয়ারা গ্রামের ইসমাইল হোসেন মজুমদারকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। ৫৪ ধারায় প্রেরণ হওয়ায় একজন গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। এজাহারে নাম না থাকায় অপর ৪জনকে গ্রেফতারের বিষয়ে আবেদন করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর থেকে আসামিদের সকলেই আত্মগোপনে রয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
কুমিল্লার আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মুজিবুর রহমান বলেন, গ্রেফতার হওয়া ৫ জনের মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকালে ৪ জনের জামিন আদেশ হয়েছে। পরে জামিন আদেশ আদালত থেকে কারাগারে পৌছানোর পর তারা কারামুক্ত হন। অপর একজনকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুর মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু চৌদ্দগ্রাম উপজেলার লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষকলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।