কেরাণীগঞ্জে রূপালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতি
চিকিৎসার অর্থ জোগাতে ব্যাংকে ডাকাতি, খেলনা পিস্তল নিয়ে ১৮ লাখ টাকা লুট
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৫৯:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫৪ বার পড়া হয়েছে
ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রূপালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতদের জিম্মিদশা থেকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টার ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্ধার করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, তিনজন ডাকাত ব্যাংক কর্মকর্তাদের জিম্মি করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পাশের একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে ব্যাংকে ডাকাতির কথা বলা হয়।
আরও পড়ুন : চিরকুটে মোবাইল নম্বর দেয় ডাকাতরা, এরপর একে একে বেড়িয়ে আসে
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ।
তিনি বলেন, কিডনিজনিত অসুস্থতায় মৃত্যুপথযাত্রী এক রোগীর চিকিৎসার অর্থ জোগাড় কররেত ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয় বলে দাবি করেন আত্মসমর্পণ করা এক তরুণ ও দুই কিশোর।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া পাকাপুল এলাকায় রূপালী ব্যাংক পিএলসির জিনজিরা শাখায় কিছু দুষ্কৃতকারীরা প্রবেশ করে। একপর্যায়ে তারা ব্যাংকে কর্মরত ১০ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ৬ গ্রাহককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এরপর তারা ব্যাংকের কাউন্টার থেকে নগদ ১৫ লাখ টাকা লুট করে একটি ব্যাগে গচ্ছিত রাখে। একই সাথে আরও তিন লাখ টাকা তিনজনের প্যান্টের পকেটে রাখে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরের (৯৯৯) মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাতদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলে। এ সময় তাদের দাবি করা ১৫ লাখ টাকা ও তাদের নিরাপদ স্থানে যেতে সহযোগিতা করার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা পর তারা আত্মসমপর্ণ করতে রাজি হন। পরে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হেফাজতে নিয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন : কেরানীগঞ্জে ব্যাংকে ঢুকে গ্রাহকদের জিম্মি, ৩ ডাকাতের আত্মসমর্পণ
ব্যাংকে হানা দেয়া একজন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার কুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিয়ন মোল্লা ওরফে নীরব (২২)। অন্য দুজনের বয়স ১৬ বছর। তারা কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা। নীরব পেশায় একজন গাড়িচালক। অন্য দুজন শিক্ষার্থী। তাদের কাছ থেকে ব্যাংক থেকে লুট করা নগদ ১৮ লাখ টাকা, চারটি খেলনা পিস্তল, দুটি চাকু, একটি লোহার পাইপ, একটি স্কুলব্যাগ, তিনটি মাস্ক, তিন জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস ও তিনটি কালো চশমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি আহম্মদ মুঈদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তারা বিদেশি বিভিন্ন সিনেমা ও সিরিজ দেখে অ্যাডভেঞ্চার (রোমাঞ্চকর) অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটাতে পারেন। তবে তাদের দাবি করা কিডনিজনিত অসুখে মৃত্যুপথযাত্রী এক রোগীর চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তাদের সাথে আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব আল হোসাইন ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন : কেরানীগঞ্জে ব্যাংকে ডাকাতের হাতে জিম্মি গ্রাহকরা, ঘিরে রেখেছে র্যাব-পুলিশ
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ডাকাত দলের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে তাদের আত্মসমর্পণে রাজি করানো হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা জানালা দিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করে। এরপর একটি বন্দুক জানালা দিয়ে ফেলা হয়। বাকি অস্ত্রগুলো ব্যাগে ভরে বাইরে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। তারপর একে একে ডাকাত দলের সদস্যরা বেড়িয়ে আসে। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন ডাকাত সদস্যকে গাড়িতে তুলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডাকাত দলের সদস্যরা চিরকুটে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়েছিল। আর সেই মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে ডাকাত দলের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তিন ডাকাত সদস্যেরই বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ডাকাত সদস্যদের বিস্তারিত পরিচয় জানানো হয়নি। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের ভেতর থেকে ৩ ডাকাতকে আটক হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে রূপালী ব্যাংকের কেরাণীগঞ্জ শাখায় ডাকাতদল প্রবেশ করে। এরপর ভবনের ভেতরে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ উপস্থিত সবাইকে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল জিম্মি করে ফেলে। ওই সময় পুলিশ জানায়,অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের সদস্যদের জিম্মি করেছে ডাকাতদল। প্রায় ১০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও ১৫ জনের মতো গ্রাহক ব্যাংকে জিম্মি রয়েছে। ডাকাতদের আটক ও জিম্মিদের উদ্ধারে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যাংকটি ঘিরে রাখে।