ঢাকা ০১:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাসিয়ারা উদযাপন করল বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উৎসব 

এলিসন সুঙ,মৌলভীবাজার 
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৩৪:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৪৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রতি বছর মতো নাচে-গানে সাজ সাজরবে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়েরা উদযাপন করলো ঐতিহ্যবাহী ১২৫তম “খাসি সেংকুট স্নেম ” অর্থাৎ  বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। 

“খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল “আয়োজনে শনিবার (২৩নভেম্বর)  দিনব্যাপী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা অধীনে  মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে এ বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। খাসিয়া ভাষায় বর্ষ বিদায়কে বলেন  ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ (Khasi Seng Kutsnem)।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১২৫তম বর্ষকে বিদায় ও ১২৬তম বর্ষকে বরণ করে নিলেন খাসিয়া জনগোষ্ঠীরা। 

ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় ‘খাসি সেঙ কুটস্যাম’ পালন করা হয়। ২৪ নভেম্বর শুক্রবার থেকে শুরু হবে খাসি বর্ষ বরণ।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে সিলেট অঞ্চলের বসবাসরত  খাসিয়া পুঞ্জির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সকল পুঞ্জি প্রধানকে পাগরী পড়িয়ে সম্মাননা জানানো হয় এবং আমন্ত্রিত  অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব। প্রাচীনকালে খাসিয়া সমাজে দেবতার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের মধ্য দিয়েই এ উৎসব পালিত হতো। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে নানা সমাহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারিকেল গাছের পাতার দিয়ে ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। এ মঞ্চে “খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল”এর প্রেসিডেন্ট  ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং’র সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি   ফিলা পঃহত্মী সঞ্চালনায় এসময় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের এডিসি আব্দুল সালাম চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম-সেবা,কমলগঞ্জ এসিল্যান্ড ডিএম সাদিক আলম শাকিন,শ্রীমঙ্গল থানা ওসি আমিনুল হক’সহ বিভিন্ন পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী সদস্যবৃন্দ ।

এই বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে খাসিয়ারা তাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে আদি পাহাড়ি নৃত্য ও গান করেন। পাশাপাশি তাদের জীবিকার প্রধান উৎসব জুম চাষ এবং জীবন-জীবিকার বিভিন্ন পদ্ধতি নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন।

সেং কুটস্নেম উৎসবের ঐতিহ্যগত খেলাধুলা, ঐতিহ্যগত পোষাক পরিধান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দ করে নিজেদের সামাজিক সম্পর্কে সুদৃঢ় করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
সেং কুটস্নেম উপলক্ষে শনিবার  সকাল থেকে মাগুরছড়া পুঞ্জির মাঠে বসে ঐতিহ্যগত মেলা। মেলায় খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেরা বসেন বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পান, তীর, ধনুকসহ বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হয়। খাসিয়া তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি, বাংলাদেশে খাসিয়াদের প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা ও পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বর্ষ বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 পাত্রখোলা হাজারীবাগ খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান প্রিচিংলী সুংঙ সুচিয়াং বলেন এ ঐতিহ্যগত খাসি অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যগত  সরঞ্জামগুলো  সংরক্ষণ জন্য একটি রিসোর্ট সেন্টার প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র পরিচালকের কাছে আহবান করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

খাসিয়ারা উদযাপন করল বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উৎসব 

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৩৪:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

প্রতি বছর মতো নাচে-গানে সাজ সাজরবে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়েরা উদযাপন করলো ঐতিহ্যবাহী ১২৫তম “খাসি সেংকুট স্নেম ” অর্থাৎ  বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। 

“খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল “আয়োজনে শনিবার (২৩নভেম্বর)  দিনব্যাপী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা অধীনে  মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে এ বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। খাসিয়া ভাষায় বর্ষ বিদায়কে বলেন  ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ (Khasi Seng Kutsnem)।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১২৫তম বর্ষকে বিদায় ও ১২৬তম বর্ষকে বরণ করে নিলেন খাসিয়া জনগোষ্ঠীরা। 

ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় ‘খাসি সেঙ কুটস্যাম’ পালন করা হয়। ২৪ নভেম্বর শুক্রবার থেকে শুরু হবে খাসি বর্ষ বরণ।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে সিলেট অঞ্চলের বসবাসরত  খাসিয়া পুঞ্জির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সকল পুঞ্জি প্রধানকে পাগরী পড়িয়ে সম্মাননা জানানো হয় এবং আমন্ত্রিত  অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব। প্রাচীনকালে খাসিয়া সমাজে দেবতার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের মধ্য দিয়েই এ উৎসব পালিত হতো। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে নানা সমাহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারিকেল গাছের পাতার দিয়ে ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। এ মঞ্চে “খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল”এর প্রেসিডেন্ট  ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং’র সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি   ফিলা পঃহত্মী সঞ্চালনায় এসময় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের এডিসি আব্দুল সালাম চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম-সেবা,কমলগঞ্জ এসিল্যান্ড ডিএম সাদিক আলম শাকিন,শ্রীমঙ্গল থানা ওসি আমিনুল হক’সহ বিভিন্ন পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী সদস্যবৃন্দ ।

এই বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে খাসিয়ারা তাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে আদি পাহাড়ি নৃত্য ও গান করেন। পাশাপাশি তাদের জীবিকার প্রধান উৎসব জুম চাষ এবং জীবন-জীবিকার বিভিন্ন পদ্ধতি নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন।

সেং কুটস্নেম উৎসবের ঐতিহ্যগত খেলাধুলা, ঐতিহ্যগত পোষাক পরিধান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দ করে নিজেদের সামাজিক সম্পর্কে সুদৃঢ় করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
সেং কুটস্নেম উপলক্ষে শনিবার  সকাল থেকে মাগুরছড়া পুঞ্জির মাঠে বসে ঐতিহ্যগত মেলা। মেলায় খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেরা বসেন বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পান, তীর, ধনুকসহ বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হয়। খাসিয়া তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি, বাংলাদেশে খাসিয়াদের প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা ও পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বর্ষ বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 পাত্রখোলা হাজারীবাগ খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান প্রিচিংলী সুংঙ সুচিয়াং বলেন এ ঐতিহ্যগত খাসি অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যগত  সরঞ্জামগুলো  সংরক্ষণ জন্য একটি রিসোর্ট সেন্টার প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র পরিচালকের কাছে আহবান করেন।