রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই ছাত্রকে পেটানোর অভিযোগ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:২২:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৪ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই ছাত্রকে হাতুড়ি ও বাঁশ দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দুই দফায় এ হামলার শিকার হন সোহেল রানা ফাতিন মাহাদি। আহত অবস্থায় রিকশায় করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান সোহেল রানা। তিনি রাজশাহী কলেজের ছাত্র। রাজশাহী কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক পরিষদ গঠিত হয়নি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এই কলেজের যেসব ছাত্র নেতৃত্ব পর্যায়ে ছিলেন, তাঁরা নিজেদের ‘রাজশাহীর সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে সোহেলও অন্যতম। আহত অপরজন ফাতিন ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি রাজশাহী এসেছিলেন বৈষমবিরোধী ছাত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী কলেজ নির্ভর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আজ মতবিনিময় ছিলো। আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় নেতা ফাতিনকে রাজশাহীতে এনে স্থানীয় কমিটি করার চেষ্টা করেছিলেন। রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলসহ অন্য গ্রুপটি এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের রাজশাহীর সমন্বয়ক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আজ একটা গ্রুপ কেন্দ্রের একজন ভুয়া সমন্বয়ককে এনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর কমিটি করার চেষ্টা করেছিল। ওই ভুয়া কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের বাড়ি রাজশাহী, তিনি ঢাকার একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই ভুয়া সমন্বয়ককে গণপিটুনি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন। পরে সোহেলের ওপর কারা হামলা করল সেটা জানি না।’
তবে যারা প্রথমে বিশৃঙ্খলা করেছেন, তারা ‘বহিরাগত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আহত সোহেল রানা। তিনি বলেন, প্রথমে ‘বহিরাগতরাই’ বিশৃঙ্খলা করে। পরে ছাত্রদল হামলা করে তার ওপরে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহেল রানা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহীর পক্ষ থেকে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। পরে সেটি কালেক্টরেট মাঠে নেওয়া হয়। ওই মাঠে গিয়ে তিনি আঁচ করেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী তাঁকে ‘টার্গেট’ করছেন।
হামলার আশঙ্কায় তাই তিনি ওই মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাঁকে কয়েকজন মিলে মারধর করেন। এরপর তিনি একটি রিকশা নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। আরেক দফা হামলার আশঙ্কায় তিনি বিকল্প পথেই হাসপাতালের দিকে রওনা দেন। তখন রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পাশে তাঁকে আবারও রিকশা থেকে নামিয়ে ২০-২৫ জন ছাত্রদল নেতাকর্মী তাকে পিটুনি দেন। হাতুড়ি ও বাঁশ দিয়ে তাঁকে ইচ্ছেমতো পেটানোর পর হামলাকারীরা চলে যান।
সোহেল রানা অভিযোগ করেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের ২০-২৫ জন তাঁকে পিটিয়েছেন। রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির দাবি করেন, এটি মূলত সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধের ফল।
তিনি বলেন, ‘সোহেলের ওপর হামলাকারী হিসেবে ছাত্রদল বলা হলেও আন্দোলনের সময় তো ছাত্রদলও ছিল। ছাত্রদল এখন পরে, আগে ওরা সমন্বয়ক। এই ছেলেটা (সোহেল) আগে জাসদ ছাত্রদল করত। পরে সমন্বয়ক হয়ে গেছে। সে সুবিধাবাদী। এ জন্য তার ওপর আক্রমণ হয়েছে বলে শুনেছি। বিস্তারিত আরও খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’
রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানিয়েছেন, সোহেল রানার শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁকে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছে। একজন হালকা আহত বলে শুনেছি। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি।’