ঢাকা ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপেক্ষা বাড়ছে উত্তরের মানুষের

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫২:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ২৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চলতি বছর ডিসেম্বরে কাজ শেষে উদ্বোধনের কথা ছিল দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু। তবে নিমার্ণ কাজ শতভাগ শেষ হলেও এখনই উদ্বোধন হচ্ছে না সেতুটি। ২০২৫ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি উদ্বোধনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আর পুরোদমে ট্রেন চলাচল করাতে সময় লাগবে আরও কয়েক মাস। ফলে রেলপথে যোগযোগ সহজ হতে আরও অপেক্ষা করতে হবে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের।

এদিকে কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও চুলচেরা ব্যয় বিশ্লেষণে ৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের সাথে সারা দেশের রেলযোগাযোগ ও রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। একদিকে গোটা দেশ রেল যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবে। অপরদিকে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ খাতে সড়কপথের পাশাপাশি রেল যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই রেলসেতু চালু হলে বাড়বে যাত্রীসংখ্যাও। পণ্য পরিবহনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি বেগবান হবে। পাশাপাশি ট্রান্সএশিয়ান রেলপথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ।

প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান জানান, সেতুর কাজ শেষ হলেও উদ্বোধন হবে জানুয়ারির মাঝামাঝি।সেতুটি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয়ের থেকে ৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সেতুটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে সময় সাশ্রয়। যমুনা নদীতে বর্তমান সেতুটি বিপজ্জনক হওয়ায় একটি ট্রেন পার হতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় নেয়। আমরা যদি এই সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালাই, তাহলে মাত্র ৫ মিনিটে যমুনা পার হওয়া যাবে। এতে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলবে।

বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প ডব্লিউডি-১ এর মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম বলেন, সেতুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভারত থেকে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে একটু জটিলতার কারণে সেতুর দুই পাশের স্টেশনে শুরু থেকে কম্পিউটার ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জানুয়ারিতে সেতুটি চালু হলেও পূর্ণগতি অর্থাৎ ১২০ কিলোমিটার বেগ পাওয়া যাবে না। চালু হওয়ার ঠিক দুই মাসের মধ্যে সেতুর দুপাশে সিবিআইএস সংযুক্ত করা সম্ভব হবে।

২০২০ সালের আগস্ট মাসে ৯ হাজার ৭৩৪ শমিক ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে এ ব্যয় বেড়ে াঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ শমিক ৯৬ কোটি টাকা। যার ১২ হাজার ১৪৯ শমিক ২ কোটি টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিয়েছে। এ প্রকল্পের মূল নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩। কিন্তু প্রথম সংশোধনে এ সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৫ এ স্থানান্তরিত করা হয়। এরআগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।

জানা যায়, সেতুর স্প্যানে স্লিপারবিহীন রেললাইন বসানো হয়েছে। দেশের রেললাইনে জাপানি এ প্রযুক্তির ব্যবহার এটাই প্রথম। এ প্রযুক্তিতে স্টিল স্ট্রাকচারের গার্ডারের সঙ্গে রেললাইনের সংযোগ প্রযুক্তিতে কোনো স্লিপার থাকবে না।

রেলসেতুতে ব্রডগেজ ও মিটারগেজস্লু ধরনের রেললাইনের সমন্বয়ে ডুয়েলগেজ ট্র্যাক বসানো হয়েছে। ডাবল লাইনের এই সেতুতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর অর্ধাবৃত্তাকৃতির বিপরীত অংশে ভারী লোহার পাত যুক্ত করে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করায় একটি ট্রেনকে সেতু পাড়ি দিতে ২২ মিনিট সময় লাগে। এতে করে সেতুর দুই দিকে ট্রেনের জট সৃষ্টি হয়। এ কারণে উত্তরবঙ্গের সাথে ঢাকার রেলযোগাযোগে প্রতিটি ট্রেনকে গড়ে ৩০ মিনিট করে বেশি লাগে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

অপেক্ষা বাড়ছে উত্তরের মানুষের

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫২:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

চলতি বছর ডিসেম্বরে কাজ শেষে উদ্বোধনের কথা ছিল দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু। তবে নিমার্ণ কাজ শতভাগ শেষ হলেও এখনই উদ্বোধন হচ্ছে না সেতুটি। ২০২৫ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি উদ্বোধনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আর পুরোদমে ট্রেন চলাচল করাতে সময় লাগবে আরও কয়েক মাস। ফলে রেলপথে যোগযোগ সহজ হতে আরও অপেক্ষা করতে হবে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের।

এদিকে কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও চুলচেরা ব্যয় বিশ্লেষণে ৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের সাথে সারা দেশের রেলযোগাযোগ ও রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। একদিকে গোটা দেশ রেল যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবে। অপরদিকে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ খাতে সড়কপথের পাশাপাশি রেল যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই রেলসেতু চালু হলে বাড়বে যাত্রীসংখ্যাও। পণ্য পরিবহনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি বেগবান হবে। পাশাপাশি ট্রান্সএশিয়ান রেলপথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ।

প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান জানান, সেতুর কাজ শেষ হলেও উদ্বোধন হবে জানুয়ারির মাঝামাঝি।সেতুটি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয়ের থেকে ৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সেতুটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে সময় সাশ্রয়। যমুনা নদীতে বর্তমান সেতুটি বিপজ্জনক হওয়ায় একটি ট্রেন পার হতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় নেয়। আমরা যদি এই সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালাই, তাহলে মাত্র ৫ মিনিটে যমুনা পার হওয়া যাবে। এতে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলবে।

বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প ডব্লিউডি-১ এর মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম বলেন, সেতুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভারত থেকে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে একটু জটিলতার কারণে সেতুর দুই পাশের স্টেশনে শুরু থেকে কম্পিউটার ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জানুয়ারিতে সেতুটি চালু হলেও পূর্ণগতি অর্থাৎ ১২০ কিলোমিটার বেগ পাওয়া যাবে না। চালু হওয়ার ঠিক দুই মাসের মধ্যে সেতুর দুপাশে সিবিআইএস সংযুক্ত করা সম্ভব হবে।

২০২০ সালের আগস্ট মাসে ৯ হাজার ৭৩৪ শমিক ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে এ ব্যয় বেড়ে াঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ শমিক ৯৬ কোটি টাকা। যার ১২ হাজার ১৪৯ শমিক ২ কোটি টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিয়েছে। এ প্রকল্পের মূল নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩। কিন্তু প্রথম সংশোধনে এ সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৫ এ স্থানান্তরিত করা হয়। এরআগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।

জানা যায়, সেতুর স্প্যানে স্লিপারবিহীন রেললাইন বসানো হয়েছে। দেশের রেললাইনে জাপানি এ প্রযুক্তির ব্যবহার এটাই প্রথম। এ প্রযুক্তিতে স্টিল স্ট্রাকচারের গার্ডারের সঙ্গে রেললাইনের সংযোগ প্রযুক্তিতে কোনো স্লিপার থাকবে না।

রেলসেতুতে ব্রডগেজ ও মিটারগেজস্লু ধরনের রেললাইনের সমন্বয়ে ডুয়েলগেজ ট্র্যাক বসানো হয়েছে। ডাবল লাইনের এই সেতুতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর অর্ধাবৃত্তাকৃতির বিপরীত অংশে ভারী লোহার পাত যুক্ত করে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করায় একটি ট্রেনকে সেতু পাড়ি দিতে ২২ মিনিট সময় লাগে। এতে করে সেতুর দুই দিকে ট্রেনের জট সৃষ্টি হয়। এ কারণে উত্তরবঙ্গের সাথে ঢাকার রেলযোগাযোগে প্রতিটি ট্রেনকে গড়ে ৩০ মিনিট করে বেশি লাগে।