ডাকাতি শেষে শিশু অপহরণ, নজরদারিতে বাবা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:০০:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৫ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার থেকে শিশু আরিসা জান্নাত জাইফাকে অপহরণের ১ সপ্তাহ আগে অপহৃত শিশুর মায়ের সঙ্গে অফিসে যাতায়াত করার সময় অপহরণকারী শাপলার পরিচয় হয়। সেসময় গ্রেপ্তার ভুক্তভোগী মা ফারজানার কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় দেন।
অপহরণকারী জানায় সে অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করে। ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুটিকে দেখভালও করতে পারবে। পরে ফাতেমা আক্তারকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য রাজি হয় শিশুটির মা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
রাজধানীর আজিমপুরে বাসায় ডাকাতির পর ৮ মাসের শিশু কন্যাকে অপহরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করেছে র্যাব। ওই ঘটনায় চারজনের উপস্থিতির তথ্য জানা গেলেও দুজনকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব। অপহরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা তদন্তের স্বার্থে নজরদারিতে রাখা হয়েছে শিশুর বাবা আবু জাফরকে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় র্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পরিকল্পনাকারী মোছা. ফাতেমা আক্তার শাপলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় অপহৃত ৮ মাস বয়সী শিশু কন্যা আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মুনীম ফেরদৌস বলেন, অপহরণের দুই সপ্তাহ আগে ওই বাসাটি রেকি করে অপহরণকারীরা। এরপর সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া নেয় ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে। বাসা ভাড়া নেওয়ার একদিন পরেই অপহরণ করে শিশুটিকে। অপহরণের পর মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হওয়ায় মুক্তিপণ দাবি করেনি অপহরণ চক্রটি।
তিনি বলেন, গত ১৫ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ফারজানা নামের এক নারীর বাসায় ডাকাতির সময় নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নেওয়ার পাশাপাশি তারা একটি বাচ্চাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য র্যাব-১০ এর কাছে সহায়তা চায়। এরপর জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব।
র্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, আরিসা জান্নাত জাইফার মায়ের নাম ফারজানা আক্তার। তিনি সরকারি চাকরি করেন এবং শিশুটির বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রাজধানীর আজিমপুরের লালবাগ টাওয়ার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় গত ৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন তারা।
গত ১৪ নভেম্বর বিকেলে বাসায় যায় গ্রেপ্তার ফাতেমা এবং শিশুটির মাকে ২০০০ টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসেবে দিয়ে বাসায় রাতযাপন করে। পরের দিন সকালে গ্রেপ্তার ফাতেমা শিশুটির মা ফারজানা আক্তারকে জানায়, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে তার বাসায় আসবে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ফাতেমা তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে ৩ ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ফাতেমা ও তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে।
এ সময় গ্রেপ্তার ফাতেমা আক্তার ও তার সহযোগীরা বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে শিশু জাইফাকে নিয়ে চলে আসে এবং তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে।
মুনীম ফেরদৌস আরও বলেন, গ্রেপ্তার ফাতেমা ও তার সহযোগীরা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনাটি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে তারা ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করতে পারেনি।
গ্রেপ্তার ফাতেমা আক্তার শাপলা সম্পর্কে তিনি বলেন: তিনি একজন গৃহিণী। ২০১০ সালে তার পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসবাস শুরু করে। পরে রাজধানীর অপর একটি কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেনি। ২০২৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং ৩-৪ মাস আগে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় তার স্বামীর নিজস্ব ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করে।
ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা? মূল পরিকল্পনাকারী ফাতেমার বিগত সময়ের কোনো অপরাধ সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে চাইলে মুনীম ফেরদৌস বলেন: ওই বাসায় ফাতেমা ছাড়াও সুমন, হাসান, রায়হান নামে তিনজনের উপস্থিতি ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে ফাতেমা। তবে ভিকটিম শিশুর মা দাবি করেছে, বোরকা পরা আরও এক নারীও ছিলেন। এখন পর্যন্ত তদন্তে জানা গেছে, অপহরণ করে টাকা আদায়ই ছিল লক্ষ্য। ভিকটিম শিশু জাইফার মা ফারজানা আক্তার ও বাবা আবু জাফরের মধ্যে দাম্পত্য মনোমালিন্য ছিল। স্বামী জাফর ওই বাসায় যাওয়া আসা করতেন। তবে তিনি বাসায় থাকতেন না। তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ভিকটিমের বাবা আবু জাফরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।