ঢাকা ০৮:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলা

আজিজুল হক সরকার ,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৩৩:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ৪১ বার পড়া হয়েছে

602-0-0#

বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শতবছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলা শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়ী দশমীকে ঘিরে রোববার (১৩ অক্টোবর) প্রতিবছর জমে উঠে সার্বজনীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলাটি। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে এই মেলাকে ঘিরে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-আদিবাসী নানা ধর্ম-বর্ণের কিশোর কিশোরীসহ পুরুষ মহিলাদের মিলন মেলায় পরিণত হয় এই মেলা।

602-0-0#

প্রতিবছর দিনভর বিজয়া দশমীতে দুর্গাপ্রতিমা ভাসান উপলক্ষে বিশাল আকারে ফুলবাড়ী পৌরসভার অদূরেই ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে কয়েক একর জুড়ে বসেছে মেলাটি। দর্শনার্থীদের জন্য মেলা চত্বরে সারি সারিভাবে রাখা হয় উপজেলার বিভিন্ন মÐপের দুর্গা প্রতিমা। পাশেই যমুনা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।

স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনোজ কুমার মল্লিক,উত্তম দাস,শচীন দত্ত,গনেশ সাহা,পূরবী দত্তদের মতে, এটি বহু পুরোনো মেলা। এ মেলাটি উত্তরাঞ্চরের তথা এলাকার ঐতিহ্য বহন করে। প্রতিবছর দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীকে ঘিরে বসে সার্বজনীন এ বিশাল মেলাটি। হিন্দু-মুসলিমসহ সবধর্মের মানুষ এ মেলায় অংশ নেন। মেলায় জমে ওঠে হাজারো নারী-পুরুষের মিলন মেলা। ঐহিত্যবাহী এই মেলাটিকে ঘিরে ফুলবাড়ীবাসী তাদের জামাইসহ স্বজনদের জানান আমন্ত্রণ। একসময় এই মেলার ঐতিহ্য ছিল জম্বুরা ও মিষ্টিমন্ডা। মেলা শেষে প্রত্যেকে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে ফিরতেন ঐতিহ্যবাহী জম্বুরা ও মিষ্টিমন্ডা। এখনো রয়ে গেছে মেলা শেষে বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় জিলাপি,খাকড়াই,খুরমা,জামলাড়ু,খাজা,বাদশা, সাচ,কদমা,হাতি-ঘোড়া খাবার নিয়ে বাড়ি ফেরা।

602-0-0#

ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় রকমারি মিঠাই, সংসারের যাবতীয় বাঁশ-কাঠের জিনিসপত্রের দোকানসহ কসমেটিক্স, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, মাছ ধরার নানান সামগ্রী এবং বিনোদনের জন্য বসানো হতো নাগর দোলা ও চরকি।এদিকে মেলার আকর্ষণীয়, আদিবাসীদের ঢোল কর্তালের মনকাড়া সুর ও তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। এ মেলাটি আদিবাসীদের জন্য এক বিশাল মিলন মেলা। তারা বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ থেকে নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আসেন মেলা চত্বরে।

মিষ্টির দোকান দিয়েছেন উপজেলার চক্কবির গ্রামের রূপচাঁদ মিয়া (৫৫),পুটকিয়া নয়াপাড়ার সোহরাব হোসেন(৫২)। পৌরসভা কাঁটাবাড়ীর সঞ্জিত কুমার এবং মৌসুমী মিষ্টিমন্ডা বিক্রেতা তারিকুল ইসলাম ও কাজল মহন্ত বলেন, ঐতিহ্যবাহী দুর্গা দেবীর মেলাকে কেন্দ্র করে ১৫ দিন আগে থেকেই নানান ধরণের মিষ্টিমন্ডাসহ জিলাপী তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়। প্রতিবছর এ মেলায় বেচাকেনার টাকা দিয়ে প্রায় ৩/৪ মাসের সাংসারিক খরচ জোগাড় হয়।

602-0-0#

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক ধিমান চন্দ্র সাহা এবং প্রবীণ সাংবাদিক চন্দ্রনাথ গুপ্ত চান্দা বলেন, শতবছরের এই মেলাটি ফুলবাড়ীর ঐতিহ্য বহন করে। বাপ-দাদার আমল থেকেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ মেলাটি। এটি সার্বজনীন মেলা। কালের পরিবর্তে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কিছু ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও প্রতিবছরই বেশ বড় আকারেই জমে ওঠে মেলাটি। এবারও দূরদুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা মেলায় এসেছে।

দিনাজপুর জেলা শাখা পূজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন দাস বলেন,এবার উপজেলায় ৫৭টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এটি পুরাতন একটি মেলা।এ মেলাকে ঘিরে এলাকার শিশু-কিশোরদের আনন্দের সীমা থাকেনা।

602-0-0#

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ফুলবাড়ীর শতবছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে তার জন্য আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ তমাল সমকালকে বলেন, ফুলবাড়ীতে প্রতিবছর জমে উঠে সার্বজনীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলাটি। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মেলাটি এলাকার ঐতিহ্য বহন করায় সুষ্ঠুভাবে মেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৩৩:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

শতবছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলা শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়ী দশমীকে ঘিরে রোববার (১৩ অক্টোবর) প্রতিবছর জমে উঠে সার্বজনীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলাটি। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে এই মেলাকে ঘিরে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-আদিবাসী নানা ধর্ম-বর্ণের কিশোর কিশোরীসহ পুরুষ মহিলাদের মিলন মেলায় পরিণত হয় এই মেলা।

602-0-0#

প্রতিবছর দিনভর বিজয়া দশমীতে দুর্গাপ্রতিমা ভাসান উপলক্ষে বিশাল আকারে ফুলবাড়ী পৌরসভার অদূরেই ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে কয়েক একর জুড়ে বসেছে মেলাটি। দর্শনার্থীদের জন্য মেলা চত্বরে সারি সারিভাবে রাখা হয় উপজেলার বিভিন্ন মÐপের দুর্গা প্রতিমা। পাশেই যমুনা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।

স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনোজ কুমার মল্লিক,উত্তম দাস,শচীন দত্ত,গনেশ সাহা,পূরবী দত্তদের মতে, এটি বহু পুরোনো মেলা। এ মেলাটি উত্তরাঞ্চরের তথা এলাকার ঐতিহ্য বহন করে। প্রতিবছর দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীকে ঘিরে বসে সার্বজনীন এ বিশাল মেলাটি। হিন্দু-মুসলিমসহ সবধর্মের মানুষ এ মেলায় অংশ নেন। মেলায় জমে ওঠে হাজারো নারী-পুরুষের মিলন মেলা। ঐহিত্যবাহী এই মেলাটিকে ঘিরে ফুলবাড়ীবাসী তাদের জামাইসহ স্বজনদের জানান আমন্ত্রণ। একসময় এই মেলার ঐতিহ্য ছিল জম্বুরা ও মিষ্টিমন্ডা। মেলা শেষে প্রত্যেকে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে ফিরতেন ঐতিহ্যবাহী জম্বুরা ও মিষ্টিমন্ডা। এখনো রয়ে গেছে মেলা শেষে বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় জিলাপি,খাকড়াই,খুরমা,জামলাড়ু,খাজা,বাদশা, সাচ,কদমা,হাতি-ঘোড়া খাবার নিয়ে বাড়ি ফেরা।

602-0-0#

ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় রকমারি মিঠাই, সংসারের যাবতীয় বাঁশ-কাঠের জিনিসপত্রের দোকানসহ কসমেটিক্স, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, মাছ ধরার নানান সামগ্রী এবং বিনোদনের জন্য বসানো হতো নাগর দোলা ও চরকি।এদিকে মেলার আকর্ষণীয়, আদিবাসীদের ঢোল কর্তালের মনকাড়া সুর ও তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। এ মেলাটি আদিবাসীদের জন্য এক বিশাল মিলন মেলা। তারা বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ থেকে নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আসেন মেলা চত্বরে।

মিষ্টির দোকান দিয়েছেন উপজেলার চক্কবির গ্রামের রূপচাঁদ মিয়া (৫৫),পুটকিয়া নয়াপাড়ার সোহরাব হোসেন(৫২)। পৌরসভা কাঁটাবাড়ীর সঞ্জিত কুমার এবং মৌসুমী মিষ্টিমন্ডা বিক্রেতা তারিকুল ইসলাম ও কাজল মহন্ত বলেন, ঐতিহ্যবাহী দুর্গা দেবীর মেলাকে কেন্দ্র করে ১৫ দিন আগে থেকেই নানান ধরণের মিষ্টিমন্ডাসহ জিলাপী তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়। প্রতিবছর এ মেলায় বেচাকেনার টাকা দিয়ে প্রায় ৩/৪ মাসের সাংসারিক খরচ জোগাড় হয়।

602-0-0#

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক ধিমান চন্দ্র সাহা এবং প্রবীণ সাংবাদিক চন্দ্রনাথ গুপ্ত চান্দা বলেন, শতবছরের এই মেলাটি ফুলবাড়ীর ঐতিহ্য বহন করে। বাপ-দাদার আমল থেকেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ মেলাটি। এটি সার্বজনীন মেলা। কালের পরিবর্তে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কিছু ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও প্রতিবছরই বেশ বড় আকারেই জমে ওঠে মেলাটি। এবারও দূরদুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা মেলায় এসেছে।

দিনাজপুর জেলা শাখা পূজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন দাস বলেন,এবার উপজেলায় ৫৭টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এটি পুরাতন একটি মেলা।এ মেলাকে ঘিরে এলাকার শিশু-কিশোরদের আনন্দের সীমা থাকেনা।

602-0-0#

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ফুলবাড়ীর শতবছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে তার জন্য আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ তমাল সমকালকে বলেন, ফুলবাড়ীতে প্রতিবছর জমে উঠে সার্বজনীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলাটি। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মেলাটি এলাকার ঐতিহ্য বহন করায় সুষ্ঠুভাবে মেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।