৮ বছর বন্ধ নির্বাচন
লালন একাডেমির দায়িত্ব চান বাউলরা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২৭:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ৪৩ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘদিন কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর নির্বাচন না হওয়ায় বাউলসহ সংস্কৃতির ব্যক্তিত্বসহ সাধারণ মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কুষ্টিয়া কুষ্টিয়ায় লালন একাডেমির সর্বশেষ নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৯ জুন। ৩ বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৬ সালের জুন মাসে। এরপরই পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা।
অথচ ৮ বছরেও এই কমিটির আর নির্বাচন হয়নি। ফলে লালন ভক্ত-অনুসারীসহ স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সম্প্রতি লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা ‘আওয়ামী লীগের দোষর ও হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে’ আসন্ন তিরোধান দিবস পালনের প্রস্তুতি নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন।
এদিকে আগামী ১৭, ১৮ ও ১৯ অক্টোবর কুমারখালীর ছেউরিয়া আখড়াবাড়িতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিনদিনব্যাপী লালন শাহের ১৩৪ তম তিরোধান দিবস। লালন একাডেমি সূত্রে জানা গেছে,গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আজীবন ও সাধারণ সদস্যের প্রত্যক্ষ ভোটে ৩ বছর মেয়াদে নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। তবে পদাধিকার বলে জেলার জেলা প্রশাসক হন লালন একাডেমির সভাপতি। ২০১৩ সালে গঠিত কমিটির মেয়াদ ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার পর গঠন করা হয় ৩ মাস মেয়াদি এডহক কমিটি। পদাধিকারবলে ওই কমিটির আহবায়ক হন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক । নেজারত ডেপুটি কালেক্টরকে সদস্য সচিব করে গঠিত হয় ৬ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি।
জানা গেছে,২০১৩ সালে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খানকে হারিয়ে কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন কুষ্টিয়া রাইফেল ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রেজানুর রহমান খান চৌধুরী মুকুল। তিনি লালন একাডেমির নানাবিধ অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাইজাল আলী খান হেরে যাওয়ায় একাডেমির অনৈতিক সুবিধা ভোগ করা অন্যান্য সদস্যদের বাকা নজরে পড়েন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। পদাধিকার বলে সভাপতি ডিসির সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতামতের অমিল শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই এক প্রকার বাধ্য হয়েই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে সড়ে দাঁড়ান রেজানুর রহমান খান চৌধুরী মুকুল। এরপরেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় চাপড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম হককে।
নির্বাচিত কমিটির সাবেক নির্বাহী সদস্য আব্দুক রাজ্জাক বাচ্চু বলেন,আমাদের নির্বাচিত কমিটি মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙে দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এরপরেই আহবায়ক কমিটি গঠন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আজও লালন একাডেমির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজানুর রহমান খান চৌধুরী মুুকুল বলেন,লালন একাডেমির তৎকালীন সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের সাথে আমার মত পার্থক্যে দেখা দেয়। আমি তার বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা ও অনৈতিক কর্মকান্ডে বাঁধা দেওয়ায় তিনি আমার বিপক্ষে ছিলেন। এইভাবে কাজ করা যাবে না ভেবে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলাম।
অ্যাডহক কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে সোচ্চার থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়ার অন্যতম সমন্বয়ক আলমাস মামুন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোষর ও হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে’ আসন্ন লালন শাহের তিরোধান দিবস পালনের প্রস্তুতি সভা করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক। এরপরেই আমরা লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে আন্দোলন করেছি। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানালে তিনি জানিয়েছেন এটা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত¡াবধানে। পরবর্তীতে আমরা সরাসরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সাথে দেখা করছি।
এদিকে, কয়েকজন বাউল বলেন,লালন একাডেমি মুলত বাউল ও ভক্ত অনুসারীদের স্থান। অথচ তারা নিজেরাই অবহেলিত। ঠিকমত তাদের মূল্যায়ণ করা হয়না। বিভিন্ন সময় দাবি উঠেছে লালন একাডেমি পরিচালনা দায়িত্ব ভার বাউলদের উপর ছেড়ে দেওয়ার। কিন্তু তা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এখানে নিজেদের স্বার্থে আহবায়ক কমিটি নির্বাচন দেয়না। সবাই কোন না কোন ভাবে সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। তাই ‘লালন একাডেমিকে সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে পরিচালনায় নির্বাচিত কমিটির বিকল্প নেই।’ তিনি দ্রত নির্বাচন নেওয়ার দাবি জানান।
কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছাঃ শারমিন আখতার বলেন,তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর নির্বাচন সংক্রান্ত করণীয় ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।