ঢাকা ০৮:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুসলমান নাগরিক সমাজের ৮ দফা দাবিতে সমাবেশ (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:৫৩:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ৬০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে আট দফা দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা করেছে মুসলমান নাগরিক সমাজ। রোববার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগ মোড় ফালইয়াফরাহু চত্বরে এক সমাবেশে তারা এসব দাবির ঘোষণা করেন। সমাবেশ শেষে সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুসলমান নাগরিক সমাজ। এতে নানা বয়সি মানুষ অংশ নেন।

মুসলমান নাগরিক সমাজের সদস্য মোহাম্মদ সাদমান ও মোহাম্মদ ফাইয়াজ লিখিত দাবি পড়ে শোনান।

সমাবেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যেসব দাবি জানানো হয়েছে, তা হচ্ছে –

নবীজির পবিত্র শানে মানহানী করলে শরঈ শাস্তি নিশ্চিত করণ, পাঠ্যক্রমে নূরে মুসজাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামদের পবিত্র জীবনী মুবারক অন্তর্ভূক্তকরণ এবং পবিত্র দ্বীন-ইসলাম নির্ভর শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা, কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিকে সংবিধান সংশোধন করা, দ্রব্যমূল্য ও চিকিৎসা সেবার উর্ধ্বগতি হ্রাস, পাহাড়ে উপজাতিদের পৃথক রাষ্ট্র গঠন করার ষড়যন্ত্র দমন, হিন্দুত্ববাদী ভারতসহ বিদেশী রাষ্ট্র তোষণ বন্ধ করা, ভারতসহ বিশ্বের যে কোন স্থানে মুসলমান নির্যাতন হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার প্রতিবাদ করা ও মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ না করা।

ক. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক শানে কোন কুলাঙ্গার মানহানী করলে তার শরঈ শাস্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে এ অপরাধ যদি ভিন্ন কোন দেশে ঘটে, তবে ঐ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করতে হবে এবং অপরাধীর শরঈ বিচার নিশ্চিত করতে ঐ দেশকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

খ. পবিত্র দ্বীন ইসলাম নির্ভর শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষানীতিতে এমন কোন নীতি রাখা যাবে না, যা পবিত্র দ্বীন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। পাঠ্যক্রমে পাঠ্যক্রমে নূরে মুসজাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারক অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। পাশাপাশি ভারতীয় মুশরিকদের বানানো বিকৃত ইতিহাস বাদ দিতে হবে, মুসলমানদের সঠিক ইতিহাস প্রকাশ করতে হবে। পাঠ্যক্রম থেকে সুদ-ঘুষের অংক বাদ দিতে হবে, হারাম গান-বাজনা-খেলাধূলা পাঠ বাদ দিতে হবে। পাঠ্যক্রমে কোন মতেই সমকামী ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষা রাখা যাবে না। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান শিশুদেরকে কাফির-মুশরিক কবি-সাহিত্যিকদের লেখা গদ্য-পদ্য পড়ানো যাবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে পাঠ্যক্রমে অবশ্যই আরবী ভাষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গ. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেছেন। জনগণের দাবী হচ্ছে, সংবিধান যারাই সংস্কার করুক, সংবিধানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দ্বীনি অনুভূতির প্রতিফলন থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ মেনেই সংবিধানের ধারা-উপধারা প্রণয়ন করতে হবে, কিছুতেই কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন কিছু প্রবেশ করানো যাবে না। সংবিধানে রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম অবশ্যই বহাল রাখতে হবে এবং কুফরী মতবাদ বাদ দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর আস্থা ও ভরসা ফিরিয়ে আনতে হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার বিভিন্ন শব্দ কৌশল ব্যবহার করে দেশে অনৈসলামিক বিষয় চালু করছে। যেমন- চলচ্চিত্রে সেন্সর বোর্ড বাতিল করে সার্টিফিকেশন বোর্ড চালুর মাধ্যমে পর্নোগ্রাফীকে বৈধ করার পায়তারা, অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গঠনের নাম দিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে সমকামীতা চালু করার কোশেষ ইত্যাদি। সরকারের স্মরণ রাখতে হবে, জনগণ এখন বোকা নয়। তারা এসব ধোকাবাজি ধরতে পারে। গত আওয়ামী সরকার “কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না”, এই ওয়াদা দিয়ে ক্ষমতায় এসে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন পাশ করেছিলো। এতে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উৎখাত করে। বর্তমান সরকারও যদি ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পথে হাটে তবে তাদেরকেও আওয়ামীলীগের পরিণতি বরণ করতে হবে।


উল্লেখ্য দেশ পরিচালনায় যে যত আইন বা পদ্ধতির কথা কথাই বলুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে সমগ্র দুনিয়ার শাসন ব্যবস্থা হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালামে উনাদের আদলেই হওয়া উচিত, কারণ সে ব্যবস্থা ব্যতিত ইনসাফ সম্বলিত শাসন ব্যবস্থা কখনই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

ঘ. দ্রব্যমূল্য ও চিকিৎসা সেবার উর্ধ্বগতি হ্রাসে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। সব কিছুর দাম বেশি। বাজারে শাক-সবজীতে হাত দেয়া যাচ্ছে না। মাছ-গোশতের দাম বাড়ায় এতদিন গরীব-মধ্যবিত্তের আমিষের চাহিদা পূরণ করতো ডিম। সেই একটি ডিমের দামও বেড়েছে। আগে চালের দাম বাড়লে বলা হতো আলু খান। এখন চাল-আলুর দাম সমানে সমান। মানুষ তাহলে খাবে কী? বর্তমান জিনিসপত্রের উর্ধ্বগতিতে অনেক পরিবার খাদ্য খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। খাদ্যের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে গরীব ও মধ্যবিত্তকে খাবার খাওয়া বন্ধ করা ব্যতিত উপায় থাকবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত দ্রুত দ্রব্যমূল্য হ্রাস করে জনগণের জন্য তা সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা।
পাশাপাশি, বর্তমানে দেশে চিকিৎসা খরচ জনগণের সক্ষমতার বাইরে রয়েছে। জনগণ যেন চিকিৎসার মত মৌলিক ও জরুরী চাহিদা সহজে লাভ করতে পারে, সেজন্য চিকিৎসার খরচও জনগণের সক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।

ঙ. তিন পার্বত্য জেলাকে বাংলাদেশ থেকে পৃথক করে ভিন্ন রাষ্ট্র গঠন করার ষড়যন্ত্র করছে উপজাতি গোষ্ঠীগুলো। এজন্য তারা নিজেদের আদিবাসী বলে দাবী করছে এবং আমেরিকা-ভারত বা জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন বিদেশীদের সহায়তা কামনা করে স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবী তুলছে। পাহাড়ি উপজাতিদের এ ষড়যন্ত্র কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেয়া যাবে না। সরকারের এ দিকে তীক্ষ্ণ নজর দিতে হবে, প্রয়োজনে পাহাড়ে সেনা চৌকি ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করতে হবে। উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক ৪০ হাজার বাঙালী হত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে। পাহাড়ে কথিত তিন রাজার শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে যে আইন ও শাসন চলবে, ঐ তিন পার্বত্য জেলায় একই আইন জারি করতে হবে। পাহাড়ে বাঙালী-উপজাতি বৈষম্য অবসান ঘটাতে হবে। পাহাড়ে বাঙালীদের জমি ক্রয়ের অধিকার দিতে হবে। রাষ্ট্র উপজাতিদের আলাদা কোন কোটা সুবিধা দিতে পারবে না।

চ. বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারত বিরোধী বড় বড় কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তারা আওয়ামীলীগের মতই ভারতসহ বিদেশী রাষ্ট্র তোষণ নীতি অব্যাহত রেখেছে।


বাংলাদেশের জনগণ যেখানে দামের কারণে ইলিশ খেতে পায় না, সেখানে আইন ভঙ্গ করে ভারতে কম মূল্যে ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানি করা হচ্ছে।


সীমান্তে এখনও বিএসএফ বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা অব্যাহত রেখেছে। কয়েকদিন আগেও কুমিল্লা সীমান্তে এক বাংলাদেশীকে হত্যা করে লাশ নিয়ে গেছে ভারত। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ সরকার দায়সারা চিঠি পাঠালেও ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এখন পর্যন্ত কোন জোরালে প্রতিবাদ করেনি। উল্টো দূর্গা পূজা উপলক্ষে খুনি বিএসএফের কাছে মিষ্টি বিতরণ করেছে বিজিবি।

হিন্দুত্ববাদ তোষণের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জানা যায়, বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ মুসলমানদের দ্বীনি মাহফিলে বাধা দেয়া হচ্ছে, অপরদিকে হিন্দুদের পুলিশ-সেনা পাহারা দিয়ে পূজা করানো হচ্ছে। পুলিশ-সেনা পাহারা দিয়ে যেভাবে পূজা মণ্ডপগুলো রক্ষা করা হয়, সেভাবে কেন মাজার শরীফ ও মাহফিলগুলোকে নিরাপত্তা দেয়া হয় না?

বিশেষভাবে লক্ষণীয়, দূর্গা পূজার ছুটি বাড়িয়ে ভারত ও হিন্দুত্ববাদীদের খুশি করার চেষ্টায় নেমেছে বর্তমান সরকার। আওয়ামী সরকার যেভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বাদ দিয়ে ভারত ও হিন্দুত্ববাদীদের খুশি করায় মনোযোগী ছিলো, বর্তমান সরকারের কার্যক্রমও একইরকম দৃশ্যমান হচ্ছে। বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পথে হেটে আওয়ামীলীগের পরিণতি যেন বরণ না করতে হয়, সে বিষয়ে তাদের সতর্ক থাকা উচিত।

ছ. সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কদমতলা এলাকায় এখন মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হচ্ছে। জানা যায়, দূর্গা পূজার জন্য মুসলমানদের থেকে চাঁদাবাজি করতে যায় হিন্দুত্ববাদীরা। মুসলমানরা পূজার চাঁদা না দেয়ায় মুসলমানদের দোকানপাট লুটপাট করে তারা। এতে মুলসলমানরা প্রতিবাদ করলে উল্টো মুসলমানদের গুলি করে শহীদ করে ভারতীয় পুলিশ। এসময় উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের বাড়িঘর লুটপাট করে, মসজিদে হামলা করে পবিত্র কুরআন শরীফে আগুন ধরিয়ে দেয়। নাউযুবিল্লাহ। এই খবর সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত এ ঘটনার কোন প্রতিবাদ করেনি। বাংলাদেশে মিথ্যা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধোঁয়া তুলে যদি ভারত তার প্রতিবাদ জানাতে পারে, তবে ভারতে প্রকৃত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ কেন বাংলাদেশ জানাতে পারবে না ? বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই এর প্রতিবাদ করতে হবে।

জ. বাংলাদেশের মুসলমানরা নিজেদের অধিকারের কথা বললেই অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ বলছে, “বাংলাদেশের মুসলমানদের এসব বিষয়ে কথা বলার দরকার নেই। মুসলমানদের এখন চুপ থাকতে হবে। নয়ত ভারতসহ বিদেশীরা ইস্যু পাবে।” দেখা যাচ্ছে, যে সরকার বাক স্বাধীনতার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে, তারাই এখন মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ করতে চায়।

প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যরা নিজেদের অধিকারের কথা বলতে পারলে মুসলমানরা কেন বলতে পারবে না? মুসলমানদেরকেও সেই অধিকার দিতে হবে। কিছুতেই মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ করা চলবে না। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছিলো। বর্তমান সরকার যেন আওয়মীলীগের মত ফ্যাসিস্ট আচরণ না করে সেই ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

মুসলমান নাগরিক সমাজের ৮ দফা দাবিতে সমাবেশ (ভিডিও)

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:৫৩:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে আট দফা দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা করেছে মুসলমান নাগরিক সমাজ। রোববার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগ মোড় ফালইয়াফরাহু চত্বরে এক সমাবেশে তারা এসব দাবির ঘোষণা করেন। সমাবেশ শেষে সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুসলমান নাগরিক সমাজ। এতে নানা বয়সি মানুষ অংশ নেন।

মুসলমান নাগরিক সমাজের সদস্য মোহাম্মদ সাদমান ও মোহাম্মদ ফাইয়াজ লিখিত দাবি পড়ে শোনান।

সমাবেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যেসব দাবি জানানো হয়েছে, তা হচ্ছে –

নবীজির পবিত্র শানে মানহানী করলে শরঈ শাস্তি নিশ্চিত করণ, পাঠ্যক্রমে নূরে মুসজাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামদের পবিত্র জীবনী মুবারক অন্তর্ভূক্তকরণ এবং পবিত্র দ্বীন-ইসলাম নির্ভর শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা, কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিকে সংবিধান সংশোধন করা, দ্রব্যমূল্য ও চিকিৎসা সেবার উর্ধ্বগতি হ্রাস, পাহাড়ে উপজাতিদের পৃথক রাষ্ট্র গঠন করার ষড়যন্ত্র দমন, হিন্দুত্ববাদী ভারতসহ বিদেশী রাষ্ট্র তোষণ বন্ধ করা, ভারতসহ বিশ্বের যে কোন স্থানে মুসলমান নির্যাতন হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার প্রতিবাদ করা ও মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ না করা।

ক. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক শানে কোন কুলাঙ্গার মানহানী করলে তার শরঈ শাস্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে এ অপরাধ যদি ভিন্ন কোন দেশে ঘটে, তবে ঐ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করতে হবে এবং অপরাধীর শরঈ বিচার নিশ্চিত করতে ঐ দেশকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

খ. পবিত্র দ্বীন ইসলাম নির্ভর শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষানীতিতে এমন কোন নীতি রাখা যাবে না, যা পবিত্র দ্বীন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। পাঠ্যক্রমে পাঠ্যক্রমে নূরে মুসজাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারক অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। পাশাপাশি ভারতীয় মুশরিকদের বানানো বিকৃত ইতিহাস বাদ দিতে হবে, মুসলমানদের সঠিক ইতিহাস প্রকাশ করতে হবে। পাঠ্যক্রম থেকে সুদ-ঘুষের অংক বাদ দিতে হবে, হারাম গান-বাজনা-খেলাধূলা পাঠ বাদ দিতে হবে। পাঠ্যক্রমে কোন মতেই সমকামী ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষা রাখা যাবে না। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান শিশুদেরকে কাফির-মুশরিক কবি-সাহিত্যিকদের লেখা গদ্য-পদ্য পড়ানো যাবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে পাঠ্যক্রমে অবশ্যই আরবী ভাষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গ. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেছেন। জনগণের দাবী হচ্ছে, সংবিধান যারাই সংস্কার করুক, সংবিধানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দ্বীনি অনুভূতির প্রতিফলন থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ মেনেই সংবিধানের ধারা-উপধারা প্রণয়ন করতে হবে, কিছুতেই কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন কিছু প্রবেশ করানো যাবে না। সংবিধানে রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম অবশ্যই বহাল রাখতে হবে এবং কুফরী মতবাদ বাদ দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর আস্থা ও ভরসা ফিরিয়ে আনতে হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার বিভিন্ন শব্দ কৌশল ব্যবহার করে দেশে অনৈসলামিক বিষয় চালু করছে। যেমন- চলচ্চিত্রে সেন্সর বোর্ড বাতিল করে সার্টিফিকেশন বোর্ড চালুর মাধ্যমে পর্নোগ্রাফীকে বৈধ করার পায়তারা, অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গঠনের নাম দিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে সমকামীতা চালু করার কোশেষ ইত্যাদি। সরকারের স্মরণ রাখতে হবে, জনগণ এখন বোকা নয়। তারা এসব ধোকাবাজি ধরতে পারে। গত আওয়ামী সরকার “কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না”, এই ওয়াদা দিয়ে ক্ষমতায় এসে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন পাশ করেছিলো। এতে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উৎখাত করে। বর্তমান সরকারও যদি ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পথে হাটে তবে তাদেরকেও আওয়ামীলীগের পরিণতি বরণ করতে হবে।


উল্লেখ্য দেশ পরিচালনায় যে যত আইন বা পদ্ধতির কথা কথাই বলুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে সমগ্র দুনিয়ার শাসন ব্যবস্থা হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালামে উনাদের আদলেই হওয়া উচিত, কারণ সে ব্যবস্থা ব্যতিত ইনসাফ সম্বলিত শাসন ব্যবস্থা কখনই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

ঘ. দ্রব্যমূল্য ও চিকিৎসা সেবার উর্ধ্বগতি হ্রাসে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। সব কিছুর দাম বেশি। বাজারে শাক-সবজীতে হাত দেয়া যাচ্ছে না। মাছ-গোশতের দাম বাড়ায় এতদিন গরীব-মধ্যবিত্তের আমিষের চাহিদা পূরণ করতো ডিম। সেই একটি ডিমের দামও বেড়েছে। আগে চালের দাম বাড়লে বলা হতো আলু খান। এখন চাল-আলুর দাম সমানে সমান। মানুষ তাহলে খাবে কী? বর্তমান জিনিসপত্রের উর্ধ্বগতিতে অনেক পরিবার খাদ্য খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। খাদ্যের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে গরীব ও মধ্যবিত্তকে খাবার খাওয়া বন্ধ করা ব্যতিত উপায় থাকবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত দ্রুত দ্রব্যমূল্য হ্রাস করে জনগণের জন্য তা সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা।
পাশাপাশি, বর্তমানে দেশে চিকিৎসা খরচ জনগণের সক্ষমতার বাইরে রয়েছে। জনগণ যেন চিকিৎসার মত মৌলিক ও জরুরী চাহিদা সহজে লাভ করতে পারে, সেজন্য চিকিৎসার খরচও জনগণের সক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।

ঙ. তিন পার্বত্য জেলাকে বাংলাদেশ থেকে পৃথক করে ভিন্ন রাষ্ট্র গঠন করার ষড়যন্ত্র করছে উপজাতি গোষ্ঠীগুলো। এজন্য তারা নিজেদের আদিবাসী বলে দাবী করছে এবং আমেরিকা-ভারত বা জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন বিদেশীদের সহায়তা কামনা করে স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবী তুলছে। পাহাড়ি উপজাতিদের এ ষড়যন্ত্র কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেয়া যাবে না। সরকারের এ দিকে তীক্ষ্ণ নজর দিতে হবে, প্রয়োজনে পাহাড়ে সেনা চৌকি ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করতে হবে। উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক ৪০ হাজার বাঙালী হত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে। পাহাড়ে কথিত তিন রাজার শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে যে আইন ও শাসন চলবে, ঐ তিন পার্বত্য জেলায় একই আইন জারি করতে হবে। পাহাড়ে বাঙালী-উপজাতি বৈষম্য অবসান ঘটাতে হবে। পাহাড়ে বাঙালীদের জমি ক্রয়ের অধিকার দিতে হবে। রাষ্ট্র উপজাতিদের আলাদা কোন কোটা সুবিধা দিতে পারবে না।

চ. বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারত বিরোধী বড় বড় কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তারা আওয়ামীলীগের মতই ভারতসহ বিদেশী রাষ্ট্র তোষণ নীতি অব্যাহত রেখেছে।


বাংলাদেশের জনগণ যেখানে দামের কারণে ইলিশ খেতে পায় না, সেখানে আইন ভঙ্গ করে ভারতে কম মূল্যে ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানি করা হচ্ছে।


সীমান্তে এখনও বিএসএফ বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা অব্যাহত রেখেছে। কয়েকদিন আগেও কুমিল্লা সীমান্তে এক বাংলাদেশীকে হত্যা করে লাশ নিয়ে গেছে ভারত। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ সরকার দায়সারা চিঠি পাঠালেও ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এখন পর্যন্ত কোন জোরালে প্রতিবাদ করেনি। উল্টো দূর্গা পূজা উপলক্ষে খুনি বিএসএফের কাছে মিষ্টি বিতরণ করেছে বিজিবি।

হিন্দুত্ববাদ তোষণের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জানা যায়, বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ মুসলমানদের দ্বীনি মাহফিলে বাধা দেয়া হচ্ছে, অপরদিকে হিন্দুদের পুলিশ-সেনা পাহারা দিয়ে পূজা করানো হচ্ছে। পুলিশ-সেনা পাহারা দিয়ে যেভাবে পূজা মণ্ডপগুলো রক্ষা করা হয়, সেভাবে কেন মাজার শরীফ ও মাহফিলগুলোকে নিরাপত্তা দেয়া হয় না?

বিশেষভাবে লক্ষণীয়, দূর্গা পূজার ছুটি বাড়িয়ে ভারত ও হিন্দুত্ববাদীদের খুশি করার চেষ্টায় নেমেছে বর্তমান সরকার। আওয়ামী সরকার যেভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বাদ দিয়ে ভারত ও হিন্দুত্ববাদীদের খুশি করায় মনোযোগী ছিলো, বর্তমান সরকারের কার্যক্রমও একইরকম দৃশ্যমান হচ্ছে। বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পথে হেটে আওয়ামীলীগের পরিণতি যেন বরণ না করতে হয়, সে বিষয়ে তাদের সতর্ক থাকা উচিত।

ছ. সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কদমতলা এলাকায় এখন মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হচ্ছে। জানা যায়, দূর্গা পূজার জন্য মুসলমানদের থেকে চাঁদাবাজি করতে যায় হিন্দুত্ববাদীরা। মুসলমানরা পূজার চাঁদা না দেয়ায় মুসলমানদের দোকানপাট লুটপাট করে তারা। এতে মুলসলমানরা প্রতিবাদ করলে উল্টো মুসলমানদের গুলি করে শহীদ করে ভারতীয় পুলিশ। এসময় উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের বাড়িঘর লুটপাট করে, মসজিদে হামলা করে পবিত্র কুরআন শরীফে আগুন ধরিয়ে দেয়। নাউযুবিল্লাহ। এই খবর সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত এ ঘটনার কোন প্রতিবাদ করেনি। বাংলাদেশে মিথ্যা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধোঁয়া তুলে যদি ভারত তার প্রতিবাদ জানাতে পারে, তবে ভারতে প্রকৃত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ কেন বাংলাদেশ জানাতে পারবে না ? বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই এর প্রতিবাদ করতে হবে।

জ. বাংলাদেশের মুসলমানরা নিজেদের অধিকারের কথা বললেই অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ বলছে, “বাংলাদেশের মুসলমানদের এসব বিষয়ে কথা বলার দরকার নেই। মুসলমানদের এখন চুপ থাকতে হবে। নয়ত ভারতসহ বিদেশীরা ইস্যু পাবে।” দেখা যাচ্ছে, যে সরকার বাক স্বাধীনতার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে, তারাই এখন মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ করতে চায়।

প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যরা নিজেদের অধিকারের কথা বলতে পারলে মুসলমানরা কেন বলতে পারবে না? মুসলমানদেরকেও সেই অধিকার দিতে হবে। কিছুতেই মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ করা চলবে না। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছিলো। বর্তমান সরকার যেন আওয়মীলীগের মত ফ্যাসিস্ট আচরণ না করে সেই ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।