বেরিয়ে আসছে ‘রেমালের’ ক্ষত
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৫৩:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪ ৭৫ বার পড়া হয়েছে
অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায়, মানুষকে এখন সবচেয়ে বেশি মোকাবিলা করতে হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তীব্র দাবদাহ, খরা, দাবানলের সাথে বেড়েই চলছে অতি বৃষ্টি, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো বদ্বীপ দেশগুলো।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব কতটা প্রলয়ংকারী হতে পারে, আবারও তার সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। সময় যতো গড়াচ্ছে ততোই স্পষ্ট হচ্ছে ঘুর্ণিঝড় রেমালের ধ্বংসলীলা। দমকা বাতাস আর ভারী বৃষ্টি কমতে শুরু করায় দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘুর্ণিঝড়ের তাণ্ডবলীলার ক্ষত চিহ্নগুলো ফুটে উঠতে শুরু করেছে।
রোববার (২৬ মে) রাত ৮টার দিকে উপকূলে আছড়ে পরার ব্যাপক তাণ্ডব চালায় রেমাল। আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে রূপ নিলেও ৩৬ ঘণ্টা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থান করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালিয়েছে। এর প্রভাব থেকে বাদ যায়নি নদীবেষ্টিত উপকূলীয় জেলা চাঁদপুর।
সোমবার (২৭ মে) বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে চলে মেঘনার ঢেউয়ের তান্ডবলীলা। নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় শহর রক্ষাবাঁধের ৮টি পয়েন্টের প্রায় কয়েক’শ মিটার এলাকা। মসজিদ মাদ্রাসা মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে চাঁদপুরের উপর দিয়ে তুমুল ঝড় বৃষ্টি হয়। চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা নদী সাগরের মতো উত্তাল হয়ে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে শহর রক্ষাবাঁধ ও নদী তীরবর্তী এলাকায়। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের পুরানবাজার রনাগোয়াল হতে হরিসভা, বাকালীপট্টি,দোলমন্দির পর্যন্ত ১৬৫ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঁধের পাশে থাকা ১০ থেকে ১৫টি বসতঘর, গোয়ালঘর ও দুটি মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে নদী এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে রেখে যাওয়া ক্ষত চিহ্ন ফুটে ওঠদে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় প্রতিনিধি, এমনকি চাঁদপুর পৌর মেয়র ছুটে আসেন নদীর ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করতে।
স্থানীয়রা জানান,সোমবার (২৭ মে) বিকেল থেকে পদ্মা-মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। এ সময় তীব্র ঝড়ো বাতাসের সাথে বড় বড় ঢেউ চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধে আঘাত এনে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে। বিশেষ করে পূরাণবাজার রনাগোয়াল, হরিসভা, বাকালী পট্টি,পুরাতন ফায়ার সার্ভিস,মাছবাজার, রামঠাকুর দোলমন্দির ও বাজার সংলগ্ন তালুকদার বাড়ির প্রায় ১০ থেকে ১৫টি বসতঘর মেঘনার প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে নদীতে তলিয়ে গেছে।
চাঁদপুর পৌর প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী মাঝি বলেন, সোমবার (২৭ মে) বিকালে মেঘনা নদী ভয়ংকর রুপ ধারণ করে।
এলাকাবাসী জানান, মেঘনা নদীতে এমন ঢেউ আমরা আগে কখনো দেখেনি। এদিকে এ খবরে তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমেলের প্রভাবে মেঘনা নদীতে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয় এবং প্রবল বেগে দমকা ঝোড়ো বাতাস বয়ে যায়। এতে সাগরের মত বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে বাঁধের উপর।
তিনি বলেন, চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের পুরানবাজার অংশের ৮টি পয়েন্টের প্রায় ১৬৫ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো সংরক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করছেন।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান বলেন, পুরান বাজার শহররক্ষা বাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ চালু না হওয়ায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের চিঠির আলোকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সোমবার (২৭ মে) সারাদিন চাঁদপুর জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলায় বিদ্যুৎ লাইনে ব্যাপক ক্ষতি হয়। সোমবার সারাদিন চাঁদপুর জেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। এ অবস্থায় চাঁদপুরের কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়।