৯৯তম জন্মবার্ষিকী আজ
বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্রের বাড়িটি বেদখল
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০০:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
তেভাগা সংগ্রামী ইলা মিত্রের বাড়িটির জরাজীর্ণ অবস্থায়। ব্রিটিশবিরো স্বাধীনতা সংগ্রামী, তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সুহৃদ ইলা মিত্রের শৈলকুপার বাগুটিয়া গ্রামের বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। একটি মহল ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বৈধ বলে দখল করে বসবাস করছেন বলে জানা যায়।
ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িসহ ফসলি জমি ১৯৭০ সালে রেজিমেন্টের অনুযায়ী মালিকানা বদল নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। তৎকালীন সময়ে শত্রু সম্পত্তি পরিগনিত একজন ভারতীয় নাগরিকের জমি বিক্রি ও বিনিময়ের কোন সুযোগ নেই দাবি করে।
ইলা পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ইলা মিত্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব সুজন বিপ্লব বলেন, দীর্ঘদিন বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের অন্যত্র পুনর্বাসন ও দখলমুক্ত করে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ না থাকায় বাড়িটির সাথে কালের সাক্ষী কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসও স্মারক স্থানটিও বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে। অতীতে উপজেলা, জেলা, রাজধানী ঢাকায় কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি, মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ ও আন্দোলন কর্মসূচি করেছি। এবছর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী শৈলকূপা উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে। জন্মশতবর্ষের প্রাক্কালে দখলমুক্ত করে ঐতিহাসিক বাড়িটি সংরক্ষণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করে আমাদের দাবি বাস্তবায়নে সরকার করার ঘোষণা অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশ থেকে দেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দোতলা বাড়িটির অধিকাংশ স্থানে ছোটবড় ফাটল ধরেছে, গজিয়েছে পরগাছা, কোন কোন স্থান ধ্বসে পড়েছে অনেক আগেই। এখন ওই বাড়িতে বসবাস করছেন মৃত কিয়ামউদ্দিনের সন্তানদের দাবি, তাদের বাবা ইলা মিত্রের উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে নিয়েছেন। সুতরাং, তারা বৈধভাবেই বাড়িটিতে বসবাস করছেন। তাদের স্বপক্ষে সব দলিলাদি দেখাতেও তারা প্রস্তুত। তাদের ভাষ্য- তারা টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছেন বসবাসের জন্য। সরকার যদি সেটি অধিগ্রহণ করতে চায় তাহলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও তাদের সম্মানজনক বসবাসের ব্যবস্থা না করলে তারা ভিটেমাটি হারাবেন।
কিয়ামউদ্দিনের মেজ ছেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, তারা যেন কোনো অবিচার ও অন্যায়ের শিকার না হন, সেদিকে সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ঝিনাইদহে কর্মরত জেলা প্রশাসক তাদের একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছেন বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা সংরক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু বছরের পর বছর গড়িয়ে গেলেও সরকারিভাবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা আজও নেয়া হয়নি।
বাঙালি মহিয়সী নারী এবং সংগ্রামী কৃষক নেতা ইলা মিত্র জন্ম ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর। শৈশব থেকে তার বেড়ে ওঠা ঝিনাইদহের শৈলককুপা বা গুটিয়া রায়পাড়া গ্রামের এ বাড়িতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ছাত্র জীবনেই ইলা মিত্র কমিউনিস্ট আদর্শের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
১৯৪৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জমিদারপুত্র দেশকর্মী কমিউনিস্ট রমেন্দ্র মিত্রের সাথে তার বিয়ে হয়। স্বামীর দেখানো পথেই তিনি যোগ দেন বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের এক তৃতীয়াংশ আদায় করার অন্দোলনে (তেভাগা আন্দোলন) নেতৃত্ব দেন তিনি। হয়ে ওঠেন সকলের রাণীমা। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র ও রমেন মিত্র।
১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি সাঁওতাল বেশ ধারণ করে ভারতে পালাবার সময় ইলা মিত্রকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান পুলিশ। কারাগারে তার উপর চলে পাশবিক নির্যাতন।
কৃষকদের সাথে সংঘর্ষে ৪ জন পুলিশ নিহত হওয়ায় ইলা মিত্রসহ ২৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ইলা মিত্রকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে কলকাতা যাবার অনুমতি দেয়। পূর্ব বাংলায় আর ফিরে আসতে পারেননি ইলা মিত্র। পরবর্তীতে কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দেন তিনি। ১৯৬২-৭৮ সময়ের মধ্যে মানিকতলা থেকে পরপর ৪ বার পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে তিনি ভারতে ও বিশ্ব পরিসরে জনমত সংগঠিত করতে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের স্বাধীনতার জন্য কমরেড ইলা মিত্র বিশেষ সম্মাননা প্রাপ্ত হয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে তাঁর মতো নিপীড়ণ, জেলজীবনে পৈশাচিকতার শিকার ও আত্মোৎসর্গকারী মহাজীবনের অধিকারী ব্যক্তিত্ব পৃথিবীতে বিরল। ১৩ অক্টোবর ২০০২ সালে ৭৭ বছর বয়সে ইলা মিত্রের দেহাবসান ঘটে।
এই মহীয়সী কমিউনিস্ট বিপ্লবী ইলা মিত্র’র ১৮ অক্টোবর ৯৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইলা মিত্র স্মরভে রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজন থাকা দাবি জানিয়েছেন প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।