ঢাকা ০৯:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪ ৩২৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী গ্রামে ১৬০ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত ভাওয়াল রিসোর্ট । ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল প্রায় ১০৬ বিঘা জমির ওপর এর যাত্রা শুরু । পরে এতে যোগ হয় আরও ৫৪ বিঘা জমি । ৬২টি ভিলার সঙ্গে রেস্তোরাঁ, হেলিপ্যাড, জিমনেসিয়াম,স্পা, সুইমিংপুলসহ রয়েছে আর ওঅনেক কিছু।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই রিসোর্টের একটি বড় অংশই গড়ে তোলা হয়েছে বনের জমি জবরদখল করে । এতে নেপথ্যে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক( আইজিপি) বেনজীর আহমেদ । কেননা এই রিসোর্টের এক- চতুর্থাংশ শেয়ারের মালিকানা বেনজীরের পরিবারের হাতে । অনুসন্ধান বলছে, বনের জমি দখল করে রিসোর্ট গড়ে ওঠার সময়কালে বেনজীর আহমেদ ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের( ডিএমপি) কমিশনার ।

পুলিশি পাহারা বসিয়ে বনের জমিতে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে রিসোর্টের কাজ শুরু করা হয়। এমনটাই জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা। পুলিশকর্তা বেনজীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে বনের জমি দখল করে এভাবে রিসোর্ট বানানোর ঘটনায় স্তম্ভিত বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারাও ।

জানা গেছে, আম্বার গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এই ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা । তবে প্রতিষ্ঠার কোনো একপর্যায়ে এতে যুক্ত হন বেনজীর আহমেদ । ডিএমপি কমিশনার হিসেবে প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে রিসোর্টের ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নেন তিনি । বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ভাওয়াল রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, ভাওয়াল রিসোর্টের ভেতরে ও প্রবেশমুখে বন বিভাগের৬.৭৩ একর জমি রয়েছে । অর্থাৎ বনের বিশাল এই জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ভাওয়াল রিসোর্ট ।

বন বিভাগের তথ্যমতে, গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্টের দখল করা জমির মধ্যে রয়েছে ৪ নম্বর বরইপাড়া মৌজার ০৩, ২৭৯ ও ২৭১ নম্বর সিএস দাগে ১১ বিঘা । এ বিষয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীরের ক্ষমতার দাপটে সবাই ছিলেন নির্বিকার, নিরুপায় । তিনি তখন ডিএমপি কমিশনার থাকায় বেআইনিভাবে পুলিশ পাহারা বসিয়ে বনের জমিতে সীমানাপ্রাচীর দেন । বাধ্য হয়ে বনের ওই জমি উদ্ধারে মামলা করে বন বিভাগ । ওই মামলাটি এখনো চলমান বলে নিশ্চিত করেছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানা ।

সরেজমিনে গেলে ভাওয়াল রিসোর্ট সংলগ্ন নলজানী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রিসোর্টের মালিকপক্ষ পারটেক্স গ্রুপ এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ — এ কথা জানার পর বেনজীরের ভয়ে এলাকার কেউ ওদিকে যাওয়ার সাহসই করে না । যখন তারা বনের জমিতে সীমানাপ্রাচীর বসিয়ে দখল করেছে, তখন কারো সাহস হয়নি প্রতিবাদ করার । স্থানীয়রা আরো জানায়, ভাওয়াল রিসোর্টের নির্মাণকাজ চলাকালে প্রায়ই এখানে আসতেন বেনজীর আহমেদ । কাজ চলার সময় স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা দিনরাত পালা করে সেখানে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকতেন । পরিচয় গোপন করে কথা বললে রিসোর্টের সিনিয়র রিজার্ভেশন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রিসোর্টটির মালিকানায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন । তিনি বলেন, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার মালিকদের কয়েকজনের মধ্যে সাবেক আইজিপি বেনজীরও রয়েছেন ।

ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন আহমেদও বলেছেন, পারটেক্স গ্রুপের মালিকের ছেলে ও সাবেক পুলিশের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ এই রিসোর্টের মালিক। তবে কে কতভাগ মালিকানা তা জানা নেই ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যথারীতি এখানেও বেনজীর আহমেদ চাতুরীর মাধ্যমে নিজের নামটি ব্যবহার করেননি । স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে কেনা হয় রিসোর্টের শেয়ার।

জানা গেছে, ভাওয়াল রিসোর্টে একরাত থাকতে গেলে গুনতে হবে সর্বনিম্ন ১১ হাজার থেকে ২৫ হাজার ৭৬০ টাকা । খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই এলাকায় প্রতি বিঘা জমির বর্তমান মূল্য ২০ লাখ টাকা । এখানেই শেষ নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাবেক আইজিপির আরও সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। রাজধানীর বনানীতে অভিজাত হোটেল ইউনিক রিজেন্সিতে বেনজীর আহমেদের বিনিয়োগ রয়েছে । একইভাবে কক্সবাজারেও দুটি হোটেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ লগ্নি করেছেন তিনি । পদ্মা ব্যাংক এবং কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাও কিনেছেন বেনজীর ।

পাচারের টাকায় বিদেশে যত সম্পদ : পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদের সিঙ্গাপুর,দুবাই, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বিপুল বিনিয়োগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে । পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদে চাকরির সুবাদে অবৈধ পন্থায় বিভিন্ন উৎস থেকে উপার্জনের টাকা পাচার করে বিনিয়োগ করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে ।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বেনজীর আহমেদের দুবাইয়ে রয়েছে শতকোটি টাকার হোটেল ব্যবসা । সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের সোনার ব্যবসা । এ ছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছেন বলে জানা গেছে । তবে বেনজীর বিনিয়োগ করলেও তিনি কোথাও নিজের নাম রাখেননি । সব জায়গায় তিনি স্ত্রী জীশান মীর্জা, স্ত্রীর ভাই মীর্জা মনোয়ার রেজার নামে বিনিয়োগ করেছেন । এছাড়াও বেনজিরের দুই মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামেও বিনিয়োগ করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুবাই শহরের কেন্দ্রস্থল মাকতুম স্ট্রিটে অবস্থিত বিলাসবহুল কনকর্ড হোটেল অ্যান্ড স্যুইটসে মোটা অঙ্কের শেয়ার রয়েছে বেনজীরের । হোটেলটি বিখ্যাত দুবাই ক্রিকের ওপর দুর্দান্ত প্যানোরমিক ভিউ অফার করে । দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুবাই ক্রিক, গলফ ও ইয়ট ক্লাব, সোনা ও মসলার বাজার, প্রধান কেনাকাটা ও অবসরকেন্দ্রগুলোর খুব কাছে এ হোটেল । দুবাইয়ে অবস্থিত গ্র্যান্ড মসজিদ থেকে তিন মাইল দূরে এ হোটেলের অবস্থান ।

দেশ থেকে টাকা পাচার করে গড়ে তোলা বেনজীরের এই হোটেলে রয়েছে অ্যাপার্টমেন্ট, স্যুইটস, এক্সিকিউটিভসহ অত্যাধুনিক রুম। যার ভাড়া প্রতিদিন ৩৫০ থেকে দেড় হাজার দিরহাম। বাংলাদেশি টাকায় যা ১০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা ।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় মুস্তাফা মার্টের পাশে অবস্থিত নিজি জুয়েলার্সটির মালিকানায়ও রয়েছেন বেনজীর আহমেদ । দেশ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করে সেখানে তিনি বিনিয়োগ করেছেন ।

বেনজীরের বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নেওয়া হয়। তাতে জানা গেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে কোন অনুমতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেননি । তার কোনো প্রতিষ্ঠানের বিদেশে বিনিয়োগেরও অনুমোদন দেয়া হয়নি। অর্থাৎ অর্থপাচারের মাধ্যমে বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এই পর্যন্ত দেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন নিয়েছে এমবিএম গার্মেন্টস, নাসা গ্রুপের এজে সুপার গার্মেন্টস, রেনেটা, প্রাণ ফুডস, কলাম্বিয়া গার্মেন্টস, মবিল যমুনা বাংলাদেশ,আকিজ জুট, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং, সার্ভিস ইঞ্জিন, ডিবিএল, স্কয়ার ফার্মা, আকিজ জুট,এসিআই হেলথকেয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম, টেকআউট লিমিটেড সামিট পাওয়ার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান । তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে বিনিয়োগের কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি । কারণ দেশে ডলার সংকট চলছে । অথচ অর্থনীতির এমন সংকটময় সময়ে বেনজীর অনুমোদন না নিয়েই টাকা পাচার করে বিদেশে কয়েক শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন । এ ছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে বেনজীর আহমেদ পাচার করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে । সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ঋণ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও কত টাকা দিয়েছে সেটি জানাতে নারাজ ।

দেশে আরও সম্পদের খোঁজ : সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীরের মালিকানা প্রকাশ্যে না আনলেও কক্সবাজারের কলাতলীতে দুটি বিলাসবহুল হোটেলে বিনিয়োগ রয়েছে তার। ওই হোটেল দুটির নাম হলো-হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্রিমিয়ার ও হোটেল রামাদা লিমিটেড । বনানীর সি ব্লকের ১৫ নম্বর রোডের ৫৯ নম্বর বাড়ির ঠিকানায় আছে হোটেল ইউনিক রিজেন্সি । এ হোটেলেও বিনিয়োগ আছে বেনজীরের । হোটেলটিতে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় সর্বনিম্ন ১০০ ডলার বা ১২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ ডলার বা ৩০ হাজার টাকা । এ হোটেলে আছে ডিলাক্স সিঙ্গল, ডিলাক্স টুইন, ডিলাক্স কিং, প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইটস, ভিআইপি স্যুইটস, সুপিরিয়র কিং প্রভৃতি বিলাসবহুল রুম । এ ছাড়া কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়েও বিনিয়োগ আছে বেনজীরের । এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি ক্যাম্পাস র্যাংগস আরএল স্কয়ার, প্রগতি সরণিতে অবস্থিত । আর স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে পূর্বাচল নিউ টাউনের ৯ নম্বর সেক্টরে ।

২০১৩ সালের ৩ জুন দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড নামে যাত্রা শুরু হয় বর্তমানের পদ্মা ব্যাংক পিএলসির । ব্যাংকটির মালিকানায় আছেন বেনজীর পরিবারের সদস্যরা । ঋণ অনিয়মে ডুবতে বসা ব্যাংকটি ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক হিসেবে পুনরায় যাত্রা শুরু করে । কিন্তু ব্যাবসায়িক দুরবস্থায় ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করে । ২০২১ সাল পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান ছাড়িয়েছে ৯০০ কোটি টাকার ওপরে । পরের দুই বছরের চূড়ান্ত হিসাব মেলেনি এখনো । তবে নাম বদলানোর পরের ৪ বছরে ২০২২ সাল পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকে নতুন করে মূলধন থেকেই ক্ষয় হয়েছে ২৪৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ।

বেনজীরের বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি: অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ সব অপকর্মের অভিযোগের বিষয়ে বেনজীর আহমেদের বক্তব্য জানতে তাঁর বাসভবন গুলশান র্যাংকন আইকন টাওয়ার লেকভিউতে গত শনিবার রাত ৮টায় যান প্রতিবেদক । এ সময় বাসার দারোয়ান ওপরে ইন্টারকমে কথা বলে প্রতিবেদকের যাওয়ার বিষয়টি জানালে বলা হয়, তিনি বাসায় নেই । এরপর রাতে বেনজীর আহমেদের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি ।

জানতে চাইলে দুদক কমিশনার( তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট তথ্য- প্রমাণ পেলে অনুসন্ধান করা হবে । দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি যত প্রভাবশালীই হোক না কেন দুদক দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে । দুর্নীতির সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে ।

এ বিসয়ে জানতে চাইলে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির বিশদভাবে অনুসন্ধানে নামা উচিত । কারণ সরকারের যেকোন পর্যায়েই চাকরি করুক না কেন, বৈধ উপায়ে এতো সম্পদ অর্জন করা সম্ভব নয় ।

তিনি বলেন, তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের উৎস ও সূত্রগুলো দুদককে খুঁজে বের করতে হবে । আইন সবার জন্যই সমান ।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ খুবই ক্ষমতাবান ছিলেন । পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে ছিলেন তিনি । সবারই জানা তিনি কতটা প্রভাবশালী । এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দু’দক) হয়তো স্বাধীনভাবে তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে গেলে বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে । তবে জনগণের প্রকৃত ঘটনা জানার আগ্রহ থেকে হলেও তার দুর্নীতি খুঁজে বের করা উচিত ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকারের ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, যারা অবৈধভাবে সম্পদ আহরণ ও অর্জন করবে, সেইসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে । দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের সাথে জড়িত দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে । বিচারের মুখোমুখিও করা হবে । দু’দক এরপরও যদি বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধান করে দুর্নীতির চিত্র না বের করতে পারে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারে, তা হবে দুঃখজনক ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী গ্রামে ১৬০ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত ভাওয়াল রিসোর্ট । ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল প্রায় ১০৬ বিঘা জমির ওপর এর যাত্রা শুরু । পরে এতে যোগ হয় আরও ৫৪ বিঘা জমি । ৬২টি ভিলার সঙ্গে রেস্তোরাঁ, হেলিপ্যাড, জিমনেসিয়াম,স্পা, সুইমিংপুলসহ রয়েছে আর ওঅনেক কিছু।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই রিসোর্টের একটি বড় অংশই গড়ে তোলা হয়েছে বনের জমি জবরদখল করে । এতে নেপথ্যে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক( আইজিপি) বেনজীর আহমেদ । কেননা এই রিসোর্টের এক- চতুর্থাংশ শেয়ারের মালিকানা বেনজীরের পরিবারের হাতে । অনুসন্ধান বলছে, বনের জমি দখল করে রিসোর্ট গড়ে ওঠার সময়কালে বেনজীর আহমেদ ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের( ডিএমপি) কমিশনার ।

পুলিশি পাহারা বসিয়ে বনের জমিতে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে রিসোর্টের কাজ শুরু করা হয়। এমনটাই জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা। পুলিশকর্তা বেনজীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে বনের জমি দখল করে এভাবে রিসোর্ট বানানোর ঘটনায় স্তম্ভিত বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারাও ।

জানা গেছে, আম্বার গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এই ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা । তবে প্রতিষ্ঠার কোনো একপর্যায়ে এতে যুক্ত হন বেনজীর আহমেদ । ডিএমপি কমিশনার হিসেবে প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে রিসোর্টের ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নেন তিনি । বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ভাওয়াল রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, ভাওয়াল রিসোর্টের ভেতরে ও প্রবেশমুখে বন বিভাগের৬.৭৩ একর জমি রয়েছে । অর্থাৎ বনের বিশাল এই জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ভাওয়াল রিসোর্ট ।

বন বিভাগের তথ্যমতে, গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্টের দখল করা জমির মধ্যে রয়েছে ৪ নম্বর বরইপাড়া মৌজার ০৩, ২৭৯ ও ২৭১ নম্বর সিএস দাগে ১১ বিঘা । এ বিষয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীরের ক্ষমতার দাপটে সবাই ছিলেন নির্বিকার, নিরুপায় । তিনি তখন ডিএমপি কমিশনার থাকায় বেআইনিভাবে পুলিশ পাহারা বসিয়ে বনের জমিতে সীমানাপ্রাচীর দেন । বাধ্য হয়ে বনের ওই জমি উদ্ধারে মামলা করে বন বিভাগ । ওই মামলাটি এখনো চলমান বলে নিশ্চিত করেছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানা ।

সরেজমিনে গেলে ভাওয়াল রিসোর্ট সংলগ্ন নলজানী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রিসোর্টের মালিকপক্ষ পারটেক্স গ্রুপ এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ — এ কথা জানার পর বেনজীরের ভয়ে এলাকার কেউ ওদিকে যাওয়ার সাহসই করে না । যখন তারা বনের জমিতে সীমানাপ্রাচীর বসিয়ে দখল করেছে, তখন কারো সাহস হয়নি প্রতিবাদ করার । স্থানীয়রা আরো জানায়, ভাওয়াল রিসোর্টের নির্মাণকাজ চলাকালে প্রায়ই এখানে আসতেন বেনজীর আহমেদ । কাজ চলার সময় স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা দিনরাত পালা করে সেখানে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকতেন । পরিচয় গোপন করে কথা বললে রিসোর্টের সিনিয়র রিজার্ভেশন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রিসোর্টটির মালিকানায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন । তিনি বলেন, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার মালিকদের কয়েকজনের মধ্যে সাবেক আইজিপি বেনজীরও রয়েছেন ।

ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন আহমেদও বলেছেন, পারটেক্স গ্রুপের মালিকের ছেলে ও সাবেক পুলিশের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ এই রিসোর্টের মালিক। তবে কে কতভাগ মালিকানা তা জানা নেই ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যথারীতি এখানেও বেনজীর আহমেদ চাতুরীর মাধ্যমে নিজের নামটি ব্যবহার করেননি । স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে কেনা হয় রিসোর্টের শেয়ার।

জানা গেছে, ভাওয়াল রিসোর্টে একরাত থাকতে গেলে গুনতে হবে সর্বনিম্ন ১১ হাজার থেকে ২৫ হাজার ৭৬০ টাকা । খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই এলাকায় প্রতি বিঘা জমির বর্তমান মূল্য ২০ লাখ টাকা । এখানেই শেষ নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাবেক আইজিপির আরও সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। রাজধানীর বনানীতে অভিজাত হোটেল ইউনিক রিজেন্সিতে বেনজীর আহমেদের বিনিয়োগ রয়েছে । একইভাবে কক্সবাজারেও দুটি হোটেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ লগ্নি করেছেন তিনি । পদ্মা ব্যাংক এবং কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাও কিনেছেন বেনজীর ।

পাচারের টাকায় বিদেশে যত সম্পদ : পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদের সিঙ্গাপুর,দুবাই, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বিপুল বিনিয়োগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে । পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদে চাকরির সুবাদে অবৈধ পন্থায় বিভিন্ন উৎস থেকে উপার্জনের টাকা পাচার করে বিনিয়োগ করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে ।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বেনজীর আহমেদের দুবাইয়ে রয়েছে শতকোটি টাকার হোটেল ব্যবসা । সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের সোনার ব্যবসা । এ ছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছেন বলে জানা গেছে । তবে বেনজীর বিনিয়োগ করলেও তিনি কোথাও নিজের নাম রাখেননি । সব জায়গায় তিনি স্ত্রী জীশান মীর্জা, স্ত্রীর ভাই মীর্জা মনোয়ার রেজার নামে বিনিয়োগ করেছেন । এছাড়াও বেনজিরের দুই মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামেও বিনিয়োগ করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুবাই শহরের কেন্দ্রস্থল মাকতুম স্ট্রিটে অবস্থিত বিলাসবহুল কনকর্ড হোটেল অ্যান্ড স্যুইটসে মোটা অঙ্কের শেয়ার রয়েছে বেনজীরের । হোটেলটি বিখ্যাত দুবাই ক্রিকের ওপর দুর্দান্ত প্যানোরমিক ভিউ অফার করে । দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুবাই ক্রিক, গলফ ও ইয়ট ক্লাব, সোনা ও মসলার বাজার, প্রধান কেনাকাটা ও অবসরকেন্দ্রগুলোর খুব কাছে এ হোটেল । দুবাইয়ে অবস্থিত গ্র্যান্ড মসজিদ থেকে তিন মাইল দূরে এ হোটেলের অবস্থান ।

দেশ থেকে টাকা পাচার করে গড়ে তোলা বেনজীরের এই হোটেলে রয়েছে অ্যাপার্টমেন্ট, স্যুইটস, এক্সিকিউটিভসহ অত্যাধুনিক রুম। যার ভাড়া প্রতিদিন ৩৫০ থেকে দেড় হাজার দিরহাম। বাংলাদেশি টাকায় যা ১০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা ।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় মুস্তাফা মার্টের পাশে অবস্থিত নিজি জুয়েলার্সটির মালিকানায়ও রয়েছেন বেনজীর আহমেদ । দেশ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করে সেখানে তিনি বিনিয়োগ করেছেন ।

বেনজীরের বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নেওয়া হয়। তাতে জানা গেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে কোন অনুমতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেননি । তার কোনো প্রতিষ্ঠানের বিদেশে বিনিয়োগেরও অনুমোদন দেয়া হয়নি। অর্থাৎ অর্থপাচারের মাধ্যমে বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এই পর্যন্ত দেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন নিয়েছে এমবিএম গার্মেন্টস, নাসা গ্রুপের এজে সুপার গার্মেন্টস, রেনেটা, প্রাণ ফুডস, কলাম্বিয়া গার্মেন্টস, মবিল যমুনা বাংলাদেশ,আকিজ জুট, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং, সার্ভিস ইঞ্জিন, ডিবিএল, স্কয়ার ফার্মা, আকিজ জুট,এসিআই হেলথকেয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম, টেকআউট লিমিটেড সামিট পাওয়ার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান । তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে বিনিয়োগের কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি । কারণ দেশে ডলার সংকট চলছে । অথচ অর্থনীতির এমন সংকটময় সময়ে বেনজীর অনুমোদন না নিয়েই টাকা পাচার করে বিদেশে কয়েক শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন । এ ছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে বেনজীর আহমেদ পাচার করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে । সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ঋণ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও কত টাকা দিয়েছে সেটি জানাতে নারাজ ।

দেশে আরও সম্পদের খোঁজ : সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীরের মালিকানা প্রকাশ্যে না আনলেও কক্সবাজারের কলাতলীতে দুটি বিলাসবহুল হোটেলে বিনিয়োগ রয়েছে তার। ওই হোটেল দুটির নাম হলো-হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্রিমিয়ার ও হোটেল রামাদা লিমিটেড । বনানীর সি ব্লকের ১৫ নম্বর রোডের ৫৯ নম্বর বাড়ির ঠিকানায় আছে হোটেল ইউনিক রিজেন্সি । এ হোটেলেও বিনিয়োগ আছে বেনজীরের । হোটেলটিতে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় সর্বনিম্ন ১০০ ডলার বা ১২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ ডলার বা ৩০ হাজার টাকা । এ হোটেলে আছে ডিলাক্স সিঙ্গল, ডিলাক্স টুইন, ডিলাক্স কিং, প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইটস, ভিআইপি স্যুইটস, সুপিরিয়র কিং প্রভৃতি বিলাসবহুল রুম । এ ছাড়া কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়েও বিনিয়োগ আছে বেনজীরের । এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি ক্যাম্পাস র্যাংগস আরএল স্কয়ার, প্রগতি সরণিতে অবস্থিত । আর স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে পূর্বাচল নিউ টাউনের ৯ নম্বর সেক্টরে ।

২০১৩ সালের ৩ জুন দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড নামে যাত্রা শুরু হয় বর্তমানের পদ্মা ব্যাংক পিএলসির । ব্যাংকটির মালিকানায় আছেন বেনজীর পরিবারের সদস্যরা । ঋণ অনিয়মে ডুবতে বসা ব্যাংকটি ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক হিসেবে পুনরায় যাত্রা শুরু করে । কিন্তু ব্যাবসায়িক দুরবস্থায় ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করে । ২০২১ সাল পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান ছাড়িয়েছে ৯০০ কোটি টাকার ওপরে । পরের দুই বছরের চূড়ান্ত হিসাব মেলেনি এখনো । তবে নাম বদলানোর পরের ৪ বছরে ২০২২ সাল পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকে নতুন করে মূলধন থেকেই ক্ষয় হয়েছে ২৪৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ।

বেনজীরের বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি: অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ সব অপকর্মের অভিযোগের বিষয়ে বেনজীর আহমেদের বক্তব্য জানতে তাঁর বাসভবন গুলশান র্যাংকন আইকন টাওয়ার লেকভিউতে গত শনিবার রাত ৮টায় যান প্রতিবেদক । এ সময় বাসার দারোয়ান ওপরে ইন্টারকমে কথা বলে প্রতিবেদকের যাওয়ার বিষয়টি জানালে বলা হয়, তিনি বাসায় নেই । এরপর রাতে বেনজীর আহমেদের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি ।

জানতে চাইলে দুদক কমিশনার( তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট তথ্য- প্রমাণ পেলে অনুসন্ধান করা হবে । দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি যত প্রভাবশালীই হোক না কেন দুদক দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে । দুর্নীতির সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে ।

এ বিসয়ে জানতে চাইলে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির বিশদভাবে অনুসন্ধানে নামা উচিত । কারণ সরকারের যেকোন পর্যায়েই চাকরি করুক না কেন, বৈধ উপায়ে এতো সম্পদ অর্জন করা সম্ভব নয় ।

তিনি বলেন, তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের উৎস ও সূত্রগুলো দুদককে খুঁজে বের করতে হবে । আইন সবার জন্যই সমান ।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ খুবই ক্ষমতাবান ছিলেন । পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে ছিলেন তিনি । সবারই জানা তিনি কতটা প্রভাবশালী । এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দু’দক) হয়তো স্বাধীনভাবে তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে গেলে বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে । তবে জনগণের প্রকৃত ঘটনা জানার আগ্রহ থেকে হলেও তার দুর্নীতি খুঁজে বের করা উচিত ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকারের ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, যারা অবৈধভাবে সম্পদ আহরণ ও অর্জন করবে, সেইসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে । দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের সাথে জড়িত দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে । বিচারের মুখোমুখিও করা হবে । দু’দক এরপরও যদি বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধান করে দুর্নীতির চিত্র না বের করতে পারে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারে, তা হবে দুঃখজনক ।