ঢাকা ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চালের কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা, ৮০ টাকার নীচে নেই সবজি

রংপুর প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৪৮:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ৪৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শষ্য ভান্ডার আর সব্জি চাষের জন্য খ্যাত রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে আবারও চাল, সব ধরনের সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচামরিচ ৪শ টাকা, ৮০ টাকার উপরে আলুসহ সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে। টমেটো ২শ ৮০ টাকা কেঁজি ভেন্ডি ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে মধ্য বিত্ত আর নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রনে সরকারের কোন বাস্তবমুখি পদক্ষেপ না থাকায় চরমভাবে বিক্ষুব্ধ সাধারন মানুষ।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা মৌসুমে সবজিসহ কাঁচামরিচের দাম কোন অবস্থাতেই এত বেশী হবার কথা নয়। কারন সব ধরনের সবজি রংপুর অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে চাষ হয় যা এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পুরন করা হয়।

অন্যদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়তদার ব্যাবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ি করে বলেছেন তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারন করে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

অপরদিকে, সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত রংপুরের মিঠাপুর উপজেলার বলদীপুকুর , শঠিবাড়ি , গঙ্গাচড়া এলাকার সব্জি চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা হাট বাজারে পাইকারী কাঁচামরিচ দেড় থেকে ২শ টাকা দামে বিক্রি করেন, সব ধরনের সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেঁজি দরে বিক্রি করেন। সেই সবজি শহরের বাজারে কি করে দ্বগুন মুল্যে বিক্রি হয় সেটা তাদের ধারনাই করতে পারেননা। এটা আড়তদার ব্যাবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে অভিযোগ তাদের।

বলদীপুকুর পাইকারী সবজি বাজার ঘুরে সব্জি চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার অসময়ে বৃষ্টির কারনে মরিচের ক্ষেত কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তার পরেও তারা দেড়শ টাকা কের্জি দরে বিক্রি করেছেন।

সবজি চাষি সাহাদত বললেন, এবার তিনি ১০ শতক জমিকে কাঁচামরিচ চাষ করে গত তিন মাসে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। একই কথা বললেন, রংপুরের পালিচড়া এলাকার কৃষক সাদেক আলী। তিনি বললেন, পাইকাররা তাদের জমি থেকেই কিনে নিয়ে যান কাঁচা মরিচ সেই মরিচ কিভাবে শহরে ৪শ টাকা দাম হয় তারা কল্পনাও করতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাষ করে বিক্রি করি দেড় থেকে দুশ টাকা। আর পাইকাররা ৪শ টাকা দরে বিক্রি করে দ্বিগুন লাভ করে।

সবজি চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে রংপুর অঞ্চলে মরিচের চাষ কম হতো বেশীর ভাগ চাষ হতো বগুড়া অঞ্চলে। এখন রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে বিপুল পরিনমান কাঁচামরিচ চাষ হয় যা রংপুর অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়েও অন্য জেলায় বিক্রয় করা যায়।

বিভাগীয় নগরী রংপুরের সিটি বাজার রংপুর সহ উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ সবজি ও চালের মোকাম। এখান থেকে সব ধরনের সবজি ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পাইকার আর আড়তদাররা কিনে নিয়ে যায়। গত দুমাস ধরে লাগাতার ভাবে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরেজমিন শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সিটি পাইকারী চাল ও সব্জি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেঁজি আদা আড়াইশ টাকা, রসুনের বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪শ টাকা কেজি, আলুর দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পটল প্রতি কেজি ৮০ টাকা , ভেন্ডি ৯০ টাকা , মুলা ৭০ টাকা, চিচিংগা ৯০ টাকা, বেগুন ১শ টাকা, শসা ৯০ টাকা, ছোট্ট একটি লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সীম ১শ টাকা , ফুল কপি ১শ ২০ টাকা, ধনিয়া পাতা ২শ টাকা কেজি কচু ৮০ টাকা অর্থাৎ সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে। শুধু মাত্র কাঁচা পেপে ৩০ টাকা এ ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম আঁকাশ ছোয়া দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন খারাপ আবহাওয়াসহ বন্যায় সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে।

সবজির পাইকারী আড়তদার মোতালেব খান জানান, কিছুদিন আগেও এ সময় আদা রসুন কাচামরিচের দাম এত বেশী ছিলো না। কিন্তু এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আদার দাম অনেক বেড়েছে। একই ভাবে রসুনের দামও বেড়েছে।

কাঁচা মরিচের দাম আরও বাড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করে বললেন, আড়তদার দবির উদ্দিন কিছুদিন আগে অবিরাম বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেত তলিয়ে গেছে অনেকের ক্ষেতের মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মরিচের দাম আরও বাড়বে বলে আশংকা করছেন তিনি।

আলুর দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হবার কারন জানতে চাইলে আড়তদার আফতাব মিয়া বললেন, রংপুরের হিমাগার গুলোতে বিপুল পরিমান আলু আছে কিন্তু ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু কম উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করছেন। মুলত আলুর বড় বড় পাইকার আর কোল্ড ষ্টোরে রাখা আলু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরী করে রাখায় আলুর বাজার অস্থির হয়ে আছে।

তিনি বললেন, ২৫ বছর ধরে সবজি ব্যবসা করছেন আলুর এমন উচ্চ মুল্য কখনও তিনি দেখেননি।

এদিকে, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চালের বৃহৎ মোকাম সিটি বাজারে চালের বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩৮ টাকা কেজির মোটা চাল ৪৪ টাকা, বিআর ২৮চাল যেখানে ৪৬ টাকা কেজি ছিলো সেই চাল এখন ৫২ টাকা, বিআর ২৯ চাল ৪৭ টাকার স্থলে ৫৪ টাকা , মিনিকেট ৬৫ টাকার স্থলে ৭০ টাকা, নাজিরসাল চাল ৭০ টাকার চাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধির কারন দেখছেন না আড়তদার ব্যাবসায়ীরা। তারা বলেন, রংপুর অঞ্চলে গত বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে কিন্তু হঠাৎ করে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।

বড় চালের আড়তদার সামসুর রহমান জানান, দিনাজপুর , নাটোর এবং রংপুরের মাহিগজ্ঞ মোকামে লাখ লাখ বস্তা চাল মজুত আছে। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার ফলে চালের দাম বেড়েছে। সহসাই দাম কমবে বলে তিনি মনে করেননা।
এদিকে চাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারনে মধ্য নিম্নবৃত্ত , নিম্নবিত্ত পরিবার সহ সহায় সম্বলহীন পরিবারগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। তাদের আয় বাড়েনি, অথচ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বেড়েই চলছে।

এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোক্তারা বলছেন, আমরা চাহিদার ৪ ভাগের তিন ভাগ কিনতাম। এখন অর্ধেক কিনছি যা দিয়ে কোনভাবেই পরিবার পরিজন নিয়ে তিন বেলা চলছে না। বাজারে প্রচুর সামগ্রী থাকলেও দাম কেন কমছে না তার কোন জবাবদিহিতা নেই। ফলে ভোক্তারা এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

চাকুরী জিবী তাহমিনা আশরাফ জানান, তিনি যে বেতন পান তা দিয়ে এখন ১৫ দিনেও সংসার চলছেনা। তিনি বলেন, আমাদের বেতন তো মাসে মাসে বাড়েনা কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের দাম প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে। ফলে আমাদের পক্ষে সংসার চালানো আর তিন বেলা খাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে।

বেসরকারী চাকুরীজিবী নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিয়ত জিনিষপত্রের দাম বাড়ছে এভাবে সম্ভব না। বাধ্য হয়ে এক কেজির পরিবর্তে এখন আধা কেজি কিনতে হচ্ছে-কেননা হিসাবতো মিলছেনা।আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চলা মুস্কিল হয়ে পড়েছে।

দোকান কর্মচারী সফিক বললেন, পিয়াজ , আদা রসুন কাঁচা মরিচের সহ সব ধরনের সবচির দাম বেড়েছে। তিনি জানান, ৪ জনের সংসারে আর সামলানো যাচ্ছে না। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের লাগাম টানতে কেন সরকার পারছেনা কোথায় তাদের দুর্বলতা বুঝিনা।

এদিকে, মাংসের দাম আগের দামে বিক্রি হলেও ডিম এখন ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। ডিম এখন প্রতি পিস ১৫ টাকা যেটা কখনই এমন দাম ছিলো না। কেন ডিমের দাম বাড়ছে সেটা ডিম ব্যবসায়ীরাও বলছেন না। তারা বলেন, বড় বড় সিন্ডিকেট চক্র এখন ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে সে কারনে দাম কমছে না।

এজন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যর মুল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে সাধারণ মানুষের দাবি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

চালের কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা, ৮০ টাকার নীচে নেই সবজি

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৪৮:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

শষ্য ভান্ডার আর সব্জি চাষের জন্য খ্যাত রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে আবারও চাল, সব ধরনের সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচামরিচ ৪শ টাকা, ৮০ টাকার উপরে আলুসহ সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে। টমেটো ২শ ৮০ টাকা কেঁজি ভেন্ডি ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে মধ্য বিত্ত আর নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রনে সরকারের কোন বাস্তবমুখি পদক্ষেপ না থাকায় চরমভাবে বিক্ষুব্ধ সাধারন মানুষ।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা মৌসুমে সবজিসহ কাঁচামরিচের দাম কোন অবস্থাতেই এত বেশী হবার কথা নয়। কারন সব ধরনের সবজি রংপুর অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে চাষ হয় যা এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পুরন করা হয়।

অন্যদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়তদার ব্যাবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ি করে বলেছেন তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারন করে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

অপরদিকে, সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত রংপুরের মিঠাপুর উপজেলার বলদীপুকুর , শঠিবাড়ি , গঙ্গাচড়া এলাকার সব্জি চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা হাট বাজারে পাইকারী কাঁচামরিচ দেড় থেকে ২শ টাকা দামে বিক্রি করেন, সব ধরনের সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেঁজি দরে বিক্রি করেন। সেই সবজি শহরের বাজারে কি করে দ্বগুন মুল্যে বিক্রি হয় সেটা তাদের ধারনাই করতে পারেননা। এটা আড়তদার ব্যাবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে অভিযোগ তাদের।

বলদীপুকুর পাইকারী সবজি বাজার ঘুরে সব্জি চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার অসময়ে বৃষ্টির কারনে মরিচের ক্ষেত কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তার পরেও তারা দেড়শ টাকা কের্জি দরে বিক্রি করেছেন।

সবজি চাষি সাহাদত বললেন, এবার তিনি ১০ শতক জমিকে কাঁচামরিচ চাষ করে গত তিন মাসে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। একই কথা বললেন, রংপুরের পালিচড়া এলাকার কৃষক সাদেক আলী। তিনি বললেন, পাইকাররা তাদের জমি থেকেই কিনে নিয়ে যান কাঁচা মরিচ সেই মরিচ কিভাবে শহরে ৪শ টাকা দাম হয় তারা কল্পনাও করতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাষ করে বিক্রি করি দেড় থেকে দুশ টাকা। আর পাইকাররা ৪শ টাকা দরে বিক্রি করে দ্বিগুন লাভ করে।

সবজি চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে রংপুর অঞ্চলে মরিচের চাষ কম হতো বেশীর ভাগ চাষ হতো বগুড়া অঞ্চলে। এখন রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে বিপুল পরিনমান কাঁচামরিচ চাষ হয় যা রংপুর অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়েও অন্য জেলায় বিক্রয় করা যায়।

বিভাগীয় নগরী রংপুরের সিটি বাজার রংপুর সহ উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ সবজি ও চালের মোকাম। এখান থেকে সব ধরনের সবজি ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পাইকার আর আড়তদাররা কিনে নিয়ে যায়। গত দুমাস ধরে লাগাতার ভাবে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরেজমিন শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সিটি পাইকারী চাল ও সব্জি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেঁজি আদা আড়াইশ টাকা, রসুনের বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪শ টাকা কেজি, আলুর দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পটল প্রতি কেজি ৮০ টাকা , ভেন্ডি ৯০ টাকা , মুলা ৭০ টাকা, চিচিংগা ৯০ টাকা, বেগুন ১শ টাকা, শসা ৯০ টাকা, ছোট্ট একটি লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সীম ১শ টাকা , ফুল কপি ১শ ২০ টাকা, ধনিয়া পাতা ২শ টাকা কেজি কচু ৮০ টাকা অর্থাৎ সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে। শুধু মাত্র কাঁচা পেপে ৩০ টাকা এ ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম আঁকাশ ছোয়া দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন খারাপ আবহাওয়াসহ বন্যায় সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে।

সবজির পাইকারী আড়তদার মোতালেব খান জানান, কিছুদিন আগেও এ সময় আদা রসুন কাচামরিচের দাম এত বেশী ছিলো না। কিন্তু এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আদার দাম অনেক বেড়েছে। একই ভাবে রসুনের দামও বেড়েছে।

কাঁচা মরিচের দাম আরও বাড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করে বললেন, আড়তদার দবির উদ্দিন কিছুদিন আগে অবিরাম বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেত তলিয়ে গেছে অনেকের ক্ষেতের মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মরিচের দাম আরও বাড়বে বলে আশংকা করছেন তিনি।

আলুর দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হবার কারন জানতে চাইলে আড়তদার আফতাব মিয়া বললেন, রংপুরের হিমাগার গুলোতে বিপুল পরিমান আলু আছে কিন্তু ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু কম উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করছেন। মুলত আলুর বড় বড় পাইকার আর কোল্ড ষ্টোরে রাখা আলু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরী করে রাখায় আলুর বাজার অস্থির হয়ে আছে।

তিনি বললেন, ২৫ বছর ধরে সবজি ব্যবসা করছেন আলুর এমন উচ্চ মুল্য কখনও তিনি দেখেননি।

এদিকে, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চালের বৃহৎ মোকাম সিটি বাজারে চালের বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩৮ টাকা কেজির মোটা চাল ৪৪ টাকা, বিআর ২৮চাল যেখানে ৪৬ টাকা কেজি ছিলো সেই চাল এখন ৫২ টাকা, বিআর ২৯ চাল ৪৭ টাকার স্থলে ৫৪ টাকা , মিনিকেট ৬৫ টাকার স্থলে ৭০ টাকা, নাজিরসাল চাল ৭০ টাকার চাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধির কারন দেখছেন না আড়তদার ব্যাবসায়ীরা। তারা বলেন, রংপুর অঞ্চলে গত বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে কিন্তু হঠাৎ করে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।

বড় চালের আড়তদার সামসুর রহমান জানান, দিনাজপুর , নাটোর এবং রংপুরের মাহিগজ্ঞ মোকামে লাখ লাখ বস্তা চাল মজুত আছে। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার ফলে চালের দাম বেড়েছে। সহসাই দাম কমবে বলে তিনি মনে করেননা।
এদিকে চাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারনে মধ্য নিম্নবৃত্ত , নিম্নবিত্ত পরিবার সহ সহায় সম্বলহীন পরিবারগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। তাদের আয় বাড়েনি, অথচ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বেড়েই চলছে।

এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোক্তারা বলছেন, আমরা চাহিদার ৪ ভাগের তিন ভাগ কিনতাম। এখন অর্ধেক কিনছি যা দিয়ে কোনভাবেই পরিবার পরিজন নিয়ে তিন বেলা চলছে না। বাজারে প্রচুর সামগ্রী থাকলেও দাম কেন কমছে না তার কোন জবাবদিহিতা নেই। ফলে ভোক্তারা এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

চাকুরী জিবী তাহমিনা আশরাফ জানান, তিনি যে বেতন পান তা দিয়ে এখন ১৫ দিনেও সংসার চলছেনা। তিনি বলেন, আমাদের বেতন তো মাসে মাসে বাড়েনা কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের দাম প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে। ফলে আমাদের পক্ষে সংসার চালানো আর তিন বেলা খাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে।

বেসরকারী চাকুরীজিবী নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিয়ত জিনিষপত্রের দাম বাড়ছে এভাবে সম্ভব না। বাধ্য হয়ে এক কেজির পরিবর্তে এখন আধা কেজি কিনতে হচ্ছে-কেননা হিসাবতো মিলছেনা।আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চলা মুস্কিল হয়ে পড়েছে।

দোকান কর্মচারী সফিক বললেন, পিয়াজ , আদা রসুন কাঁচা মরিচের সহ সব ধরনের সবচির দাম বেড়েছে। তিনি জানান, ৪ জনের সংসারে আর সামলানো যাচ্ছে না। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের লাগাম টানতে কেন সরকার পারছেনা কোথায় তাদের দুর্বলতা বুঝিনা।

এদিকে, মাংসের দাম আগের দামে বিক্রি হলেও ডিম এখন ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। ডিম এখন প্রতি পিস ১৫ টাকা যেটা কখনই এমন দাম ছিলো না। কেন ডিমের দাম বাড়ছে সেটা ডিম ব্যবসায়ীরাও বলছেন না। তারা বলেন, বড় বড় সিন্ডিকেট চক্র এখন ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে সে কারনে দাম কমছে না।

এজন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যর মুল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে সাধারণ মানুষের দাবি।