ঢাকা ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক আইজিপি বেনজীরের ৩ কালো হাত

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪ ১৪৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদ এবং বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়গুলো নিখুঁতভাবে পরিচালনা করতে নিযুক্ত ছিল একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে কটি দল । তারা মূলত বেনজীরের জন্য দেশে- বিদেশে জমি বা সম্পদ কেনা, ব্যবসায়ীদের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নির্যাতনের মতো অপকর্ম সামাল দিতেন। শুধু তা- ই নয়, বেনজীর নিজে নেপথ্যে থেকে এই সিন্ডিকেট সামনে রেখে নিয়ন্ত্রণ করতেন পুলিশের বিভিন্ন প্রকল্পের ব্র্যান্ডিং, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য । এই দলের অগ্রভাগে ছিলেন এজিএম সাব্বির ওরফে বিকাশ সাব্বির, আমজাদ হোসেন আরজু ও নাজমুস সাকিব জুবায়ের ।

আরও পড়ুন: বেনজীরের সাভানা ইকো রিসোর্ট বন্ধ

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদের ‘ আলাদীনের চেরাগ ’ তথা জাদুর কাঠির স্পর্শে আলোকিত হয়ে ওঠেন তার সহযোগীরাও । তারাও দেশে- বিদেশে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ । বেনজীরের স্ত্রী ও কন্যাদের সাথে ব্যবসায়ী অংশীদার রয়েছে । তাছাড়াও নামে- বেনামে জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে।

একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে ‘ বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ ’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেনজীরের সহযোগীরাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার হিসেবে বিকাশ সাব্বির সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সাব্বির রাজধানীর পূর্ব গোড়ানে বড় হন। শিক্ষাজীবন শেষ করে ২০০২ সালে মাস্টারমাইন্ড স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন সাব্বির ।

আরও পড়ুন: বেনজীরের আলাদীনের চেরাগ দুদকে বন্দি

সেখানে এক নারী শিক্ষককে বিয়ে করেন সাব্বির । ওই নারী শিক্ষকের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যের নাগরিক হওয়ায় সাব্বিরও যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান । সেখানে নাগরিকত্ব লাভের পর ওই ছেড়ে দিয়ে এক বিমানবালাকে বিয়ে করেন । প্রথম স্ত্রীর একটি ছেলে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর দু’টি সন্তান রয়েছে ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাস্টারমাইন্ড স্কুলে শিক্ষকতার সুবাদে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ছেলেকে প্রাইভেট পড়াতেন সাব্বির। এই সময় মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

সেই সুযোগে বিএনপির শীর্ষ ও মাঝারি মানের অনেক নেতার সাথে গড়ে তোলেন সখ্য । এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবীব তার বাল্যবন্ধু। এ কারণে বিএনপির অনেক নেতার সাথে এখনো রয়েছে তার ঘনিষ্ঠতা।

এদিকে, বিএনপির ডাকা সমাবেশ ঘিরে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আটক হন বিকাশ সাব্বির । পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বনানী থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে । ওই সময় বেনজীর আহমেদের জোরালো সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় ।

আরও পড়ুন: সপরিবারে সিঙ্গাপুরে বেনজীর!

সূত্র বলছে, লন্ডনে সাব্বিরের সাথে পরিচয় হয় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ছোট ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তসলিম আহমেদ মুন্নার । আর সেই সূত্রে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে সম্পর্ক হয় বেনজীর আহমেদের সাথে। এরপর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাব্বির । আমজাদ হোসেন আরজু ও নাজমুস সাকিব জুবায়েরের সাথে গড়ে তোলেন নিজস্ব সিন্ডিকেট । ক্যাসিনোকাণ্ডে আটক মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার মাধ্যমে সাব্বির ওরফে বিকাশ বেনজীর আহমেদের ক্যাসিনোর মাসিক চাঁদার টাকা সংগ্রহ করতেন । পরবর্তী সময়ে বেনজীর আহমেদের তোড়জোড়ে সাব্বির মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক ও ক্রিকেট কমিটির প্রধান নির্বাচিত হন ।

অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন এই বিকাশ সাব্বির । এর মধ্যে বেনজীর আহমেদের পরিবারের ব্যাবসায়িক অংশীদার হয়ে ওঠেন এজিএম সাব্বির, নাজমুস সাকিব জুবায়ের ও আমজাদ হোসেন আরজু । এই তিনজনের সাথে একাধিকবার থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,কানাডা, পর্তুগালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে গেছেন বেনজীর আহমেদ । সাব্বির ও আরজুর মাধ্যমে মালদ্বীপ, দুবাই, লন্ডন এবং কানাডায় বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলে সাব্বিরের ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায় । বিদেশে অর্থপাচারের কাজটিও এই দুজনের মাধ্যমেই হতো । কানাডায় আরজুর স্ত্রী ও সন্তান যে বাড়িটিতে থাকেন, জনশ্রুতি রয়েছে সেই বাড়িটিও বেনজীর আহমেদের টাকায় কেনা ।

আরও পড়ুন: গভীর রাতে তুলে নিয়ে শেয়ার কেড়ে নেয় বেনজীর ও নাফিজ, দাবি সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যানের

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশে নামে- বেনামে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাব্বির ও তার অন্যতম সহযোগী বেসরকারি টিভি চ্যানেলের( চ্যানেল ওয়ান) সাবেক বিপণন কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন আরজু ও নাজমুস সাকিব জুবায়ের । এর মধ্যে একটি শিশির বিন্দু, রাহিল’স মিডিয়া লিমিটেড, বেনটেক, কানেকশিয়া লিমিটেড, এলবি লিমিটেড, সেন্টার ফর রিনিওয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেড, এইএক্সএ পাওয়ার লিমিটেড, এলকো কেবল লিমিটেড,রিচমন্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেইনস্কোয়ার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, বিটিএল ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিটি কোম্পানিতে এজিএম সাব্বির, আমজাদ হোসেন আরজু ও নাজমুস সাকিব জুবায়েরের বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে ।

দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলেও মালিকানা রয়েছে সাব্বির এবং আমজাদ হোসেন আরজুর । গুলশানের সিইসি( জি) ব্লকের ১৩৪ নম্বর( পুরাতন ১৩০ নম্বর) প্লটের ১২ কাঠা ১২ ছটাক জমির ওপর দুটি বেইসমেন্টসহ নির্মিত রেনকন আইকন টাওয়ারে দুই হাজার ২৪২ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট রয়েছে সাব্বিরের । এছাড়া ঢাকার গোড়ানে ১০ কাঠার প্লট, সাভার ফ্যান্টাসি কিংডমের পেছনে প্রায় ৬৬টি ঘরবিশিষ্ট বিশাল জমি । এছাড়া উত্তরা, গুলশান ও বনানীতে আছে একাধিক ফ্ল্যাট । লন্ডনে বিশাল বাড়ি ও দামি ব্র্যান্ডের একাধিক গাড়ি রয়েছে । দুবাইয়ে ফ্ল্যাট আছে বলেও গুঞ্জন আছে ।

আরও পড়ুন: মাদারীপুরে হিন্দুদের জমি জোর করে সস্তায় কেনেন বেনজীর

বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে অংশীদারি ব্যবসা রয়েছে এজিএম সাব্বির ওরফে বিকাশ সাব্বির । মেসার্স একটি শিশির বিন্দু নামে একটি প্রকাশনা সংস্থায় তাদের সমন্বিত বিনিয়োগ রয়েছে ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ৫ মার্চ চ- ৭০, ৭৯/ এ, ফ্ল্যাট নং এফ- ৭, ই- ৭, উত্তর বাড্ডার ঠিকানায় প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স করা হয় । এখানে এজিএম সাব্বিরের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা হয়েছে ২৯১, পূর্ব গোড়ান, খিলগাঁও । এরপর ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি অংশীদারির চুক্তি হয় বেনজীর পরিবারের সদস্যদের সাথে বিকাশ সাব্বিরের ।

দলিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মেসার্স একটি শিশির বিন্দুর ২৫ শতাংশের অংশীদার বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জা। এছাড়া দুই মেয়ের নামে ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এরমধ্যে ২৫ শতাংশ অংশীদার ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের। তাহসিন রিসতা বিনতে বেনজীরের ২৫ শতাংশ রয়েছে ।

বাদবাকি শেয়ারের ১৫ শতাংশ এজিএম সাব্বিরের। আর পাঁচ ৫ শতাংশ আনোয়ার হোসেনের ও ৫ শতাংশ নাজমুস সাকিব জুবায়েরের ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু মেসার্স একটি শিশির বিন্দু নয়, আরও বেশি কিছু কোম্পানিতে অংশীদারি বিনিয়োগ রয়েছে বেনজীর পরিবার ও সাব্বির বিকাশের । বেনজীর পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আরেকটি কোম্পানি গঠন করেন সাব্বির । স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কোম্পানিটির ট্রেড লাইসেন্স ও আরজেএসসি রেজিস্ট্রেশেন নাম্বার যথাক্রমে ০৮৫৬৮৪ ও সি- ১৫০৪১৯ । এই কোম্পানির মালিকানায় রয়েছেন বেনজীর পরিবারের সদস্যরাও । নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, চ- ৭০, ৭৯/ এ, ফ্ল্যাট নং এফ- ৭, ই- ৭, উত্তর বাড্ডার ঠিকানায় স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ট্রেড লাইসেন্স করা হয় ।

এ ছাড়া এসটি পিটারস স্কুল অব লন্ডন লিমিটেডের মালিকানায় আছেন এজিএম সাব্বির । এই কোম্পানিটিতেও বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তার মেয়েদের বিনিয়োগ রয়েছে । গত ২৮ মে এই তিনটি কম্পানির শেয়ার জব্দের নির্দেশ দেন আদালত ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাহিল’স মিডিয়া লিমিটেডকে কাজ দিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতেন বেনজীর আহমেদ । কোম্পানিটির মালিকানায় বেনজীর আহমেদের পরিবারের কোনো সদস্যের নাম না থাকলেও প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পেতেন তিনি । এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর পুলিশের( ডিএমপি) বিভিন্ন ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করতেন সাব্বির ।

আরজেএসসির নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন এজিএম সাব্বির। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তার স্ত্রী নিরমা খানম। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন বোন আফসান- ই- জাহান ।

এসটিআর এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাদেক চৌধুরী বলেন, বিকাশ সাব্বিরের কুড়িগ্রামের মিনি গ্রিড সোলার প্রজেক্টে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রায় দুই কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ করি । এই প্রজেক্টের পাঁচ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বিনিয়োগ করি। সেখানেও আরও ৫৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি । বিনিয়োগের পর তারা বিনিয়োগের অর্থ ফেরত দেয়নি । এমনকি লভ্যাংশও না। বরং টাকা উদ্ধারে গেলে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় তারা।

আমজাদ হোসেন আরজু এখনো তাকে নিয়মিত হত্যার হুমকি দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৪ আগস্ট সকাল ৭টায় সাদা পোশাকে ৬ থেকে ৭ জনের একটি দল আমাকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে যায় । এসময় তারা আমার পকেট থেকে স্বাক্ষরিত চেকের পাতা নিয়ে যায় । তারা এ সময় সাদা কাগজে মুচলেকা নেয়, আর কখনো সাব্বিরের কাছে যেন টাকা ফেরত না চাই । ওই সময় তারা বলে, ‘তুই জানস না সাব্বির স্যারের লোক । ’ এখনো সাব্বির ও আরজুরা পুলিশের উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে তাদের সম্পর্কের কথা জানিয়ে আমাকে হুমকি দেয় । ‘

শফিকুল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে টাকা নেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এতথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন সাব্বির ও আমজাদ হোসেন । ওই সময় তারা মোবাইলে বেনজীর আহমেদের সাথে থাকা একাধিক ছবি আমাকে দেখান । বেনজীর আহমেদ তখন র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন । আমিও সরল বিশ্বাসে দুই দফায় ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি । কিন্তু বিনিয়োগের পর তাদের মুখোশ উন্মোচত হয় । টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করেন তারা ।

তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরত পেতে চাপ দিলে ২০২১ সালে ধানমণ্ডির ৮নং ব্রিজসংলগ্ন রবীন্দ্রসরোবর থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায় । এ সময় তারা সাদা কাগজে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয় ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমজাদ হোসেন আরজু ও বিকাশ সাব্বিরের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আমিও ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি । টাকা ফেরত দিতে টালবাহান করেন । একাধিকবার হুমকি দেয় ।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে এজিএম সাব্বির ও আমজাদ হোসেন আরজুকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তাদের ফোনসেট বন্ধ পাওয়া যায় ।

সূত্রমতে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদের পাহাড় নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর তারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সাবেক আইজিপি বেনজীরের ৩ কালো হাত

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদ এবং বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়গুলো নিখুঁতভাবে পরিচালনা করতে নিযুক্ত ছিল একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে কটি দল । তারা মূলত বেনজীরের জন্য দেশে- বিদেশে জমি বা সম্পদ কেনা, ব্যবসায়ীদের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নির্যাতনের মতো অপকর্ম সামাল দিতেন। শুধু তা- ই নয়, বেনজীর নিজে নেপথ্যে থেকে এই সিন্ডিকেট সামনে রেখে নিয়ন্ত্রণ করতেন পুলিশের বিভিন্ন প্রকল্পের ব্র্যান্ডিং, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য । এই দলের অগ্রভাগে ছিলেন এজিএম সাব্বির ওরফে বিকাশ সাব্বির, আমজাদ হোসেন আরজু ও নাজমুস সাকিব জুবায়ের ।

আরও পড়ুন: বেনজীরের সাভানা ইকো রিসোর্ট বন্ধ

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদের ‘ আলাদীনের চেরাগ ’ তথা জাদুর কাঠির স্পর্শে আলোকিত হয়ে ওঠেন তার সহযোগীরাও । তারাও দেশে- বিদেশে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ । বেনজীরের স্ত্রী ও কন্যাদের সাথে ব্যবসায়ী অংশীদার রয়েছে । তাছাড়াও নামে- বেনামে জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে।

একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে ‘ বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ ’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেনজীরের সহযোগীরাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার হিসেবে বিকাশ সাব্বির সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সাব্বির রাজধানীর পূর্ব গোড়ানে বড় হন। শিক্ষাজীবন শেষ করে ২০০২ সালে মাস্টারমাইন্ড স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন সাব্বির ।

আরও পড়ুন: বেনজীরের আলাদীনের চেরাগ দুদকে বন্দি

সেখানে এক নারী শিক্ষককে বিয়ে করেন সাব্বির । ওই নারী শিক্ষকের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যের নাগরিক হওয়ায় সাব্বিরও যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান । সেখানে নাগরিকত্ব লাভের পর ওই ছেড়ে দিয়ে এক বিমানবালাকে বিয়ে করেন । প্রথম স্ত্রীর একটি ছেলে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর দু’টি সন্তান রয়েছে ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাস্টারমাইন্ড স্কুলে শিক্ষকতার সুবাদে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ছেলেকে প্রাইভেট পড়াতেন সাব্বির। এই সময় মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

সেই সুযোগে বিএনপির শীর্ষ ও মাঝারি মানের অনেক নেতার সাথে গড়ে তোলেন সখ্য । এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবীব তার বাল্যবন্ধু। এ কারণে বিএনপির অনেক নেতার সাথে এখনো রয়েছে তার ঘনিষ্ঠতা।

এদিকে, বিএনপির ডাকা সমাবেশ ঘিরে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আটক হন বিকাশ সাব্বির । পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বনানী থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে । ওই সময় বেনজীর আহমেদের জোরালো সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় ।

আরও পড়ুন: সপরিবারে সিঙ্গাপুরে বেনজীর!

সূত্র বলছে, লন্ডনে সাব্বিরের সাথে পরিচয় হয় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ছোট ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তসলিম আহমেদ মুন্নার । আর সেই সূত্রে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে সম্পর্ক হয় বেনজীর আহমেদের সাথে। এরপর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাব্বির । আমজাদ হোসেন আরজু ও নাজমুস সাকিব জুবায়েরের সাথে গড়ে তোলেন নিজস্ব সিন্ডিকেট । ক্যাসিনোকাণ্ডে আটক মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার মাধ্যমে সাব্বির ওরফে বিকাশ বেনজীর আহমেদের ক্যাসিনোর মাসিক চাঁদার টাকা সংগ্রহ করতেন । পরবর্তী সময়ে বেনজীর আহমেদের তোড়জোড়ে সাব্বির মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক ও ক্রিকেট কমিটির প্রধান নির্বাচিত হন ।

অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন এই বিকাশ সাব্বির । এর মধ্যে বেনজীর আহমেদের পরিবারের ব্যাবসায়িক অংশীদার হয়ে ওঠেন এজিএম সাব্বির, নাজমুস সাকিব জুবায়ের ও আমজাদ হোসেন আরজু । এই তিনজনের সাথে একাধিকবার থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,কানাডা, পর্তুগালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে গেছেন বেনজীর আহমেদ । সাব্বির ও আরজুর মাধ্যমে মালদ্বীপ, দুবাই, লন্ডন এবং কানাডায় বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলে সাব্বিরের ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায় । বিদেশে অর্থপাচারের কাজটিও এই দুজনের মাধ্যমেই হতো । কানাডায় আরজুর স্ত্রী ও সন্তান যে বাড়িটিতে থাকেন, জনশ্রুতি রয়েছে সেই বাড়িটিও বেনজীর আহমেদের টাকায় কেনা ।

আরও পড়ুন: গভীর রাতে তুলে নিয়ে শেয়ার কেড়ে নেয় বেনজীর ও নাফিজ, দাবি সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যানের

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশে নামে- বেনামে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাব্বির ও তার অন্যতম সহযোগী বেসরকারি টিভি চ্যানেলের( চ্যানেল ওয়ান) সাবেক বিপণন কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন আরজু ও নাজমুস সাকিব জুবায়ের । এর মধ্যে একটি শিশির বিন্দু, রাহিল’স মিডিয়া লিমিটেড, বেনটেক, কানেকশিয়া লিমিটেড, এলবি লিমিটেড, সেন্টার ফর রিনিওয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেড, এইএক্সএ পাওয়ার লিমিটেড, এলকো কেবল লিমিটেড,রিচমন্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেইনস্কোয়ার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, বিটিএল ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিটি কোম্পানিতে এজিএম সাব্বির, আমজাদ হোসেন আরজু ও নাজমুস সাকিব জুবায়েরের বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে ।

দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলেও মালিকানা রয়েছে সাব্বির এবং আমজাদ হোসেন আরজুর । গুলশানের সিইসি( জি) ব্লকের ১৩৪ নম্বর( পুরাতন ১৩০ নম্বর) প্লটের ১২ কাঠা ১২ ছটাক জমির ওপর দুটি বেইসমেন্টসহ নির্মিত রেনকন আইকন টাওয়ারে দুই হাজার ২৪২ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট রয়েছে সাব্বিরের । এছাড়া ঢাকার গোড়ানে ১০ কাঠার প্লট, সাভার ফ্যান্টাসি কিংডমের পেছনে প্রায় ৬৬টি ঘরবিশিষ্ট বিশাল জমি । এছাড়া উত্তরা, গুলশান ও বনানীতে আছে একাধিক ফ্ল্যাট । লন্ডনে বিশাল বাড়ি ও দামি ব্র্যান্ডের একাধিক গাড়ি রয়েছে । দুবাইয়ে ফ্ল্যাট আছে বলেও গুঞ্জন আছে ।

আরও পড়ুন: মাদারীপুরে হিন্দুদের জমি জোর করে সস্তায় কেনেন বেনজীর

বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে অংশীদারি ব্যবসা রয়েছে এজিএম সাব্বির ওরফে বিকাশ সাব্বির । মেসার্স একটি শিশির বিন্দু নামে একটি প্রকাশনা সংস্থায় তাদের সমন্বিত বিনিয়োগ রয়েছে ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ৫ মার্চ চ- ৭০, ৭৯/ এ, ফ্ল্যাট নং এফ- ৭, ই- ৭, উত্তর বাড্ডার ঠিকানায় প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স করা হয় । এখানে এজিএম সাব্বিরের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা হয়েছে ২৯১, পূর্ব গোড়ান, খিলগাঁও । এরপর ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি অংশীদারির চুক্তি হয় বেনজীর পরিবারের সদস্যদের সাথে বিকাশ সাব্বিরের ।

দলিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মেসার্স একটি শিশির বিন্দুর ২৫ শতাংশের অংশীদার বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জা। এছাড়া দুই মেয়ের নামে ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এরমধ্যে ২৫ শতাংশ অংশীদার ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের। তাহসিন রিসতা বিনতে বেনজীরের ২৫ শতাংশ রয়েছে ।

বাদবাকি শেয়ারের ১৫ শতাংশ এজিএম সাব্বিরের। আর পাঁচ ৫ শতাংশ আনোয়ার হোসেনের ও ৫ শতাংশ নাজমুস সাকিব জুবায়েরের ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু মেসার্স একটি শিশির বিন্দু নয়, আরও বেশি কিছু কোম্পানিতে অংশীদারি বিনিয়োগ রয়েছে বেনজীর পরিবার ও সাব্বির বিকাশের । বেনজীর পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আরেকটি কোম্পানি গঠন করেন সাব্বির । স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কোম্পানিটির ট্রেড লাইসেন্স ও আরজেএসসি রেজিস্ট্রেশেন নাম্বার যথাক্রমে ০৮৫৬৮৪ ও সি- ১৫০৪১৯ । এই কোম্পানির মালিকানায় রয়েছেন বেনজীর পরিবারের সদস্যরাও । নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, চ- ৭০, ৭৯/ এ, ফ্ল্যাট নং এফ- ৭, ই- ৭, উত্তর বাড্ডার ঠিকানায় স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ট্রেড লাইসেন্স করা হয় ।

এ ছাড়া এসটি পিটারস স্কুল অব লন্ডন লিমিটেডের মালিকানায় আছেন এজিএম সাব্বির । এই কোম্পানিটিতেও বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তার মেয়েদের বিনিয়োগ রয়েছে । গত ২৮ মে এই তিনটি কম্পানির শেয়ার জব্দের নির্দেশ দেন আদালত ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাহিল’স মিডিয়া লিমিটেডকে কাজ দিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতেন বেনজীর আহমেদ । কোম্পানিটির মালিকানায় বেনজীর আহমেদের পরিবারের কোনো সদস্যের নাম না থাকলেও প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পেতেন তিনি । এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর পুলিশের( ডিএমপি) বিভিন্ন ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করতেন সাব্বির ।

আরজেএসসির নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন এজিএম সাব্বির। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তার স্ত্রী নিরমা খানম। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন বোন আফসান- ই- জাহান ।

এসটিআর এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাদেক চৌধুরী বলেন, বিকাশ সাব্বিরের কুড়িগ্রামের মিনি গ্রিড সোলার প্রজেক্টে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রায় দুই কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ করি । এই প্রজেক্টের পাঁচ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বিনিয়োগ করি। সেখানেও আরও ৫৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি । বিনিয়োগের পর তারা বিনিয়োগের অর্থ ফেরত দেয়নি । এমনকি লভ্যাংশও না। বরং টাকা উদ্ধারে গেলে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় তারা।

আমজাদ হোসেন আরজু এখনো তাকে নিয়মিত হত্যার হুমকি দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৪ আগস্ট সকাল ৭টায় সাদা পোশাকে ৬ থেকে ৭ জনের একটি দল আমাকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে যায় । এসময় তারা আমার পকেট থেকে স্বাক্ষরিত চেকের পাতা নিয়ে যায় । তারা এ সময় সাদা কাগজে মুচলেকা নেয়, আর কখনো সাব্বিরের কাছে যেন টাকা ফেরত না চাই । ওই সময় তারা বলে, ‘তুই জানস না সাব্বির স্যারের লোক । ’ এখনো সাব্বির ও আরজুরা পুলিশের উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে তাদের সম্পর্কের কথা জানিয়ে আমাকে হুমকি দেয় । ‘

শফিকুল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে টাকা নেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এতথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন সাব্বির ও আমজাদ হোসেন । ওই সময় তারা মোবাইলে বেনজীর আহমেদের সাথে থাকা একাধিক ছবি আমাকে দেখান । বেনজীর আহমেদ তখন র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন । আমিও সরল বিশ্বাসে দুই দফায় ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি । কিন্তু বিনিয়োগের পর তাদের মুখোশ উন্মোচত হয় । টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করেন তারা ।

তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরত পেতে চাপ দিলে ২০২১ সালে ধানমণ্ডির ৮নং ব্রিজসংলগ্ন রবীন্দ্রসরোবর থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায় । এ সময় তারা সাদা কাগজে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয় ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমজাদ হোসেন আরজু ও বিকাশ সাব্বিরের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আমিও ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি । টাকা ফেরত দিতে টালবাহান করেন । একাধিকবার হুমকি দেয় ।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে এজিএম সাব্বির ও আমজাদ হোসেন আরজুকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তাদের ফোনসেট বন্ধ পাওয়া যায় ।

সূত্রমতে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদের পাহাড় নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর তারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ।